চাঁদপুরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পচা ইলিশের ডিম : ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অল্প টাকায় অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কতিপয় বিক্রেতা বড়স্টেশনে কম দামে বিভিন্ন অঞ্চলের পঁচা ইলিশ কিনে তার থেকে ডিম বের করে তা অধিক দামে চাঁদপুরের ইলিশের ডিম বলে সাধারণ ক্রেতাদের সাথে প্রতারনার মাধ্যমে বিক্রি করছে। আর এমন পঁচা ইলিশের ডিম খেয়ে অজান্তেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

গত সোমবার শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটের পাশে গিয়ে দেখা যায়, মিঠাপানির ইলিশের ডিমের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সাগর এবং দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পঁচা ও নরম ইলিশ কিনছেন কতিপয় ব্যবসায়ী।

তারপর সেই ইলিশ থেকে ডিম বের করে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এমনকি এসব পচা গলা ইলিশের ডিম অনলাইনে এবং দেশের দূর দূরান্তেও চাঁদপুরের ইলিশের ডিম বলে বরফ ভর্তি ককসিটে করে পাঠাচ্ছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। যা কম দামে পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা চাঁদপুরের ইলিশের ডিম মনে করে মাছঘাটে কিনতে এসে প্রতারিত হচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন ইলিশ মাছ পঁচা হতে পারে কিন্তু ইলিশের ডিম পঁচে না। তারা দুর্বল পঁচা ইলিশকে লবণ দিয়ে তাদের এই ব্যবসা চালাচ্ছেন দীর্ঘদিন।

শান্তি ফিসের আড়তদার সম্রাট বেপারী, মৎস বনিক সমবায় সমিতি চাঁদপুরের পরিচালক আব্দুল খালেক বেপারী, হাজী মোহাম্মদুল্লা খান লোনা এবং ডিম সংরক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক আজিজুল হক আকাশ, আরতদার মো. দাদন মিয়া বেপারী বলেন, ইলিশের ৩ ও ৪ নাম্বার নরম ইলিশ টা কেটে লবন দিয়ে এখানে নোনা ইলিশ করা হচ্ছে। এসব ইলিশ বেশিরভাগই শরীয়তপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী ও সাগরের ইলিশ। আর এই ইলিশের থেকে প্রতি মণে ৫-৬ কেজি করে বের হওয়া ডিমগুলোই এখানে বিক্রি হচ্ছে। পদ্মা-মেঘনার ইলিশ কম বলেই দক্ষিণাঞ্চলের ৩ ও ৪ নাম্বার ইলিশ ও এর ডিম দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

এদিকে দুর্বল ও পঁচা ইলিশকে লবনজাত না করতে এবং এর থেকে বের করা ডিম বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা ড. মো. আনসিুর রহমান। তিনি বলেন, ইলিশ মাছ কিংবা ইলিশের ডিম সংরক্ষণকারীদের দুর্বল ও পঁচার অবস্থায় থাকা ইলিশকে কখনোই সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। কেননা ব্যাকটেরিয়া লোডের কারণে ওই ইলিশ ও তার ডিমের কোয়ালিটি ঠিক না থাকায় সেটি শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর হবে। এ ব্যপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরবিার পরকিল্পনা র্কমকর্তা ডা. সাজেদা বগেম পলিন বলেন, ইলিশ মাছ নরম হলে কিংবা পঁচে গেলে তার ডিমও নষ্ট হয়ে পঁচে যায়। আর দীর্ঘদিন না বুঝে ইলিশের এই পঁচা ডিম খেয়ে মানুষ নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এতে পেটের লুজমোশন, গ্যাস্ট্রিক, কিডনি এমনকি লিভারে সমস্যা হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। তাই এগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে এই ইলিশ ও এর ডিম না খাওয়াই ভালো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস বনিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক বলেন, ইলিশের ডিম নিয়ে মাছঘাটে অসাধু উপায় অবলম্বনকারীর বিষয়ে জানতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মাছঘাটের বাইরে যদি কেউ পঁচা ইলিশ ও এর ডিম বিক্রি করে থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, পঁচা ইলিশ থেকে ডিম সংগ্রহ ও বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিরাপদ খাদ্য আইনে অনুসন্ধান শেষে বিধি মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেবো।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

চাঁদপুরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পচা ইলিশের ডিম : ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

প্রতিনিধি, চাঁদপুর

image

চাঁদপুর : পচা ইলিশ কেটে ডিম আলাদা করছেন দোকানী -সংবাদ

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশের পাশাপাশি ইলিশের ডিমের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অল্প টাকায় অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কতিপয় বিক্রেতা বড়স্টেশনে কম দামে বিভিন্ন অঞ্চলের পঁচা ইলিশ কিনে তার থেকে ডিম বের করে তা অধিক দামে চাঁদপুরের ইলিশের ডিম বলে সাধারণ ক্রেতাদের সাথে প্রতারনার মাধ্যমে বিক্রি করছে। আর এমন পঁচা ইলিশের ডিম খেয়ে অজান্তেই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

গত সোমবার শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটের পাশে গিয়ে দেখা যায়, মিঠাপানির ইলিশের ডিমের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে সাগর এবং দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পঁচা ও নরম ইলিশ কিনছেন কতিপয় ব্যবসায়ী।

তারপর সেই ইলিশ থেকে ডিম বের করে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এমনকি এসব পচা গলা ইলিশের ডিম অনলাইনে এবং দেশের দূর দূরান্তেও চাঁদপুরের ইলিশের ডিম বলে বরফ ভর্তি ককসিটে করে পাঠাচ্ছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। যা কম দামে পেয়ে দূর দূরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা চাঁদপুরের ইলিশের ডিম মনে করে মাছঘাটে কিনতে এসে প্রতারিত হচ্ছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন ইলিশ মাছ পঁচা হতে পারে কিন্তু ইলিশের ডিম পঁচে না। তারা দুর্বল পঁচা ইলিশকে লবণ দিয়ে তাদের এই ব্যবসা চালাচ্ছেন দীর্ঘদিন।

শান্তি ফিসের আড়তদার সম্রাট বেপারী, মৎস বনিক সমবায় সমিতি চাঁদপুরের পরিচালক আব্দুল খালেক বেপারী, হাজী মোহাম্মদুল্লা খান লোনা এবং ডিম সংরক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক আজিজুল হক আকাশ, আরতদার মো. দাদন মিয়া বেপারী বলেন, ইলিশের ৩ ও ৪ নাম্বার নরম ইলিশ টা কেটে লবন দিয়ে এখানে নোনা ইলিশ করা হচ্ছে। এসব ইলিশ বেশিরভাগই শরীয়তপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী ও সাগরের ইলিশ। আর এই ইলিশের থেকে প্রতি মণে ৫-৬ কেজি করে বের হওয়া ডিমগুলোই এখানে বিক্রি হচ্ছে। পদ্মা-মেঘনার ইলিশ কম বলেই দক্ষিণাঞ্চলের ৩ ও ৪ নাম্বার ইলিশ ও এর ডিম দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

এদিকে দুর্বল ও পঁচা ইলিশকে লবনজাত না করতে এবং এর থেকে বের করা ডিম বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা ড. মো. আনসিুর রহমান। তিনি বলেন, ইলিশ মাছ কিংবা ইলিশের ডিম সংরক্ষণকারীদের দুর্বল ও পঁচার অবস্থায় থাকা ইলিশকে কখনোই সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। কেননা ব্যাকটেরিয়া লোডের কারণে ওই ইলিশ ও তার ডিমের কোয়ালিটি ঠিক না থাকায় সেটি শরীরের জন্য চরম ক্ষতিকর হবে। এ ব্যপারে চাঁদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরবিার পরকিল্পনা র্কমকর্তা ডা. সাজেদা বগেম পলিন বলেন, ইলিশ মাছ নরম হলে কিংবা পঁচে গেলে তার ডিমও নষ্ট হয়ে পঁচে যায়। আর দীর্ঘদিন না বুঝে ইলিশের এই পঁচা ডিম খেয়ে মানুষ নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। এতে পেটের লুজমোশন, গ্যাস্ট্রিক, কিডনি এমনকি লিভারে সমস্যা হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। তাই এগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে এই ইলিশ ও এর ডিম না খাওয়াই ভালো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস বনিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক বলেন, ইলিশের ডিম নিয়ে মাছঘাটে অসাধু উপায় অবলম্বনকারীর বিষয়ে জানতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মাছঘাটের বাইরে যদি কেউ পঁচা ইলিশ ও এর ডিম বিক্রি করে থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ বলেন, পঁচা ইলিশ থেকে ডিম সংগ্রহ ও বিক্রির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নিরাপদ খাদ্য আইনে অনুসন্ধান শেষে বিধি মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেবো।