দুর্নীতি : সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কারাদণ্ড

প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় দুটি ধারায় এস কে সিনহার ৭ ও ৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে সব মিলিয়ে সাত বছর জেল খাটতে হবে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে।

গত চার বছর ধরে বিদেশে অবস্থানরত এসকে সিনহাই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলেন। ‘পলাতক’ থাকায় এ মামলায় এস কে সিনহার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আত্মসমর্পণ করলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন তিনি।

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) চার কোটি ঋণ আত্মসাতের মামলার ১১ আসামির মধ্যে আরও আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত, খালাস পেয়েছেন দুজন।

ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালত বিচারক শেখ নাজমুল আলম গতকাল মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার ১৮২ পৃষ্ঠার এই রায় ঘোষণা করেন।

এস কে সিনহাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সেই অর্থ না দিলে তার সাজা আরও ছয় মাস বাড়বে। এছাড়া তার অ্যাকাউন্টে থাকা ৭৮ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৫ ও ২১ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় এবং রায় প্রস্তুত না হওয়ায় দুইবারই তা পিছিয়ে যায়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ফার্মার্স ব্যাংকের যে ‘ক্রেডিট পলিসি’ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে তা লঙ্ঘন করে সাবেক প্রধান বিচারপতির জন্য ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল। সেই অর্থ যে পাচার হয়েছিল, সেটাও এ মামলায় প্রমাণিত হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

অন্য আসামিদের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য আবেদন করা হবে

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ আইন মেনেই সবকিছু করা হয়েছে, ‘কোনো ভায়োলেশন ছিল না’। “দুইজন গ্রাহককে ইতোমধ্যে খালাস দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ গ্রাহক ভুয়া না। এখানে ভুয়া কোনো গ্রাহক ছিল না। যে পরিমাণ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই আবৃত আছে ঋণের সিকিউরিটি হিসাবে।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন এস কে সিনহা। তিনিই দেশে একমাত্র প্রধান বিচারপতি যিনি পদত্যাগ করেছেন।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু প্রশ্ন তোলার পর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা জানানো হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট সেই সময় বিরল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ এস কে সিনহা দিতে না পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

এস কে সিনহা বিদেশে যাওয়ার দুই বছর পর অর্থ আত্মসাতের এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক। গত বছর ১৩ অগাস্ট বিচার শুরু হয়। এসকে সিনহাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।

অন্যদের সাজা :

আসামিদের মধ্যে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে খালাস দিয়েছে আদালত। তাদের নামে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেই ঋণ নেওয়া হয় এবং পরে তা সরানো হয় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে।

তাদের খালাস দেওয়ার যুক্তিতে বিচারক বলেছেন, শাহজাহান ও নিরঞ্জনকে ব্যবহার করে এসকে সিনহা ফার্মার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেন এবং পরে তা পাচার করেন।

জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ আত্মসাতে ‘সহযোগিতার’ জন্য ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে দেওয়া হয়েছে চার বছরের কারাদণ্ড।

আর ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর (বাবুল চিশতী), ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা এবং তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে দেওয়া হয়েছে তিন বছর করে কারাদণ্ড। এই ১১ আসামির মধ্যে শুধু বাবুল চিশতী কারাগারে ছিলেন। রায়ের আগে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শামীম, স্বপন, লুৎফুল হক, সালাহউদ্দিন ছিলেন জামিনে। তারাও আদালতে হাজির ছিলেন।

এছাড়া এস কে সিনহার মত সাফিউদ্দিন, রনজিৎ ও তার স্ত্রীকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।

অভিযোগ ও মামলাঃ

ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা। সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাবার পর এই অভিযোগ পায় দুদক। তারপর তদন্তে নামে দুদক। তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।

তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

এজাহারে বলা হয়, “আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান ও রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।”

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়।

দুদকের করা এই মামলার এজাহারে বাবুল চিশতীর নাম না থাকলেও পরে অভিযোগপত্রে তাকে আসামি করা হয়। আর এজাহারে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

বিচার ও সাক্ষ্যঃ

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২১ জন সাক্ষী ছিলেন । তাদের মধ্যে এস কে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং মামাতো ভাইয়ের ছেলে শঙ্খজিৎ সিনহাও রয়েছেন।

তারা দুজন বলেন, ‘এস কে সিনহার কথাতেই’ তাদের নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে। পরে সেই হিসেবে সোয়া দুই কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে তারা ‘জানতেন না’।

দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের যেসব ধারায় এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছিল, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির সুযোগ ছিল।

মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারা না থাকায় এস কে সিনহাসহ পলাতক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

দুর্নীতির অভিযোগ ও সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিঃ

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

তিনি ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু প্রশ্ন তোলার পর সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা বলা হয়।

ছুটি নিয়ে বিচারপতি সিনহা বিদেশে যাওয়ার আগে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ আখ্যায়িত করা হয় সুপ্রিম কোর্টের ওই বিবৃতিতে।

সুপ্রিম কোর্টের সেই বিবৃতিতে বলা হয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ তুলে ধরেন এবং “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।”

বঙ্গভবনের বৈঠকের পরদিন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সাবেক প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাড়িতে যান এবং তার সঙ্গে অভিযোগগুলো নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন তারা।

ওই বিবৃতিতে তখন বলা হয়, “কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও সুদত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এই অবস্থায় অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভবপর হবে না।

“এই পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন।”

কিন্তু এরপর বিচারপতি সিনহা সহকর্মীদের কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

সংসদে অভিযোগঃ

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সংসদে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে তার নানা ‘দুর্নীতির’ কথা বলেছিলেন দুই মন্ত্রীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিচারপতি সিনহার ভাইয়ের নামে রাজউকের প্লট নেওয়ায় অনিয়মের কথা সংসদে বলেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথাও বলেছিলেন তিনি।

সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ব্যাংকে বেনামে বিচারপতি সিনহার অর্থ জমা রাখার কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের ‘দুর্নীতির’ তদন্ত আটকাতে প্রধান বিচারপতি সিনহার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন।

এস কে সিনহা বিদেশে কোথায়?

দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতেই সে সময় তিনি থাকছিলেন। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর প্রকাশ হয় সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তার বাকিগুলো নিয়ে আর কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

দুর্নীতি : সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কারাদণ্ড

আদালত বার্তা পরিবেশক

image

প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলায় দুটি ধারায় এস কে সিনহার ৭ ও ৪ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে সব মিলিয়ে সাত বছর জেল খাটতে হবে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে।

গত চার বছর ধরে বিদেশে অবস্থানরত এসকে সিনহাই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি, যিনি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলেন। ‘পলাতক’ থাকায় এ মামলায় এস কে সিনহার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আত্মসমর্পণ করলে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন তিনি।

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) চার কোটি ঋণ আত্মসাতের মামলার ১১ আসামির মধ্যে আরও আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত, খালাস পেয়েছেন দুজন।

ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালত বিচারক শেখ নাজমুল আলম গতকাল মঙ্গলবার আলোচিত এ মামলার ১৮২ পৃষ্ঠার এই রায় ঘোষণা করেন।

এস কে সিনহাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। সেই অর্থ না দিলে তার সাজা আরও ছয় মাস বাড়বে। এছাড়া তার অ্যাকাউন্টে থাকা ৭৮ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ৫ ও ২১ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় এবং রায় প্রস্তুত না হওয়ায় দুইবারই তা পিছিয়ে যায়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ফার্মার্স ব্যাংকের যে ‘ক্রেডিট পলিসি’ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে তা লঙ্ঘন করে সাবেক প্রধান বিচারপতির জন্য ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল। সেই অর্থ যে পাচার হয়েছিল, সেটাও এ মামলায় প্রমাণিত হয়েছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

অন্য আসামিদের আইনজীবী মো. শাহীনুর ইসলাম অনি বলেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য আবেদন করা হবে

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ আইন মেনেই সবকিছু করা হয়েছে, ‘কোনো ভায়োলেশন ছিল না’। “দুইজন গ্রাহককে ইতোমধ্যে খালাস দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ গ্রাহক ভুয়া না। এখানে ভুয়া কোনো গ্রাহক ছিল না। যে পরিমাণ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই আবৃত আছে ঋণের সিকিউরিটি হিসাবে।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সেখানে থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন এস কে সিনহা। তিনিই দেশে একমাত্র প্রধান বিচারপতি যিনি পদত্যাগ করেছেন।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু প্রশ্ন তোলার পর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা জানানো হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট সেই সময় বিরল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ এস কে সিনহা দিতে না পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

এস কে সিনহা বিদেশে যাওয়ার দুই বছর পর অর্থ আত্মসাতের এ মামলা দায়ের করেছিল দুদক। গত বছর ১৩ অগাস্ট বিচার শুরু হয়। এসকে সিনহাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।

অন্যদের সাজা :

আসামিদের মধ্যে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে খালাস দিয়েছে আদালত। তাদের নামে থাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেই ঋণ নেওয়া হয় এবং পরে তা সরানো হয় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে।

তাদের খালাস দেওয়ার যুক্তিতে বিচারক বলেছেন, শাহজাহান ও নিরঞ্জনকে ব্যবহার করে এসকে সিনহা ফার্মার্স ব্যাংক থেকে ঋণ নেন এবং পরে তা পাচার করেন।

জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ আত্মসাতে ‘সহযোগিতার’ জন্য ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীমকে দেওয়া হয়েছে চার বছরের কারাদণ্ড।

আর ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতীর (বাবুল চিশতী), ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা এবং তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়কে দেওয়া হয়েছে তিন বছর করে কারাদণ্ড। এই ১১ আসামির মধ্যে শুধু বাবুল চিশতী কারাগারে ছিলেন। রায়ের আগে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শামীম, স্বপন, লুৎফুল হক, সালাহউদ্দিন ছিলেন জামিনে। তারাও আদালতে হাজির ছিলেন।

এছাড়া এস কে সিনহার মত সাফিউদ্দিন, রনজিৎ ও তার স্ত্রীকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার চলে।

অভিযোগ ও মামলাঃ

ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা। সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাবার পর এই অভিযোগ পায় দুদক। তারপর তদন্তে নামে দুদক। তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।

তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

এজাহারে বলা হয়, “আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান ও রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।”

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়।

দুদকের করা এই মামলার এজাহারে বাবুল চিশতীর নাম না থাকলেও পরে অভিযোগপত্রে তাকে আসামি করা হয়। আর এজাহারে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

বিচার ও সাক্ষ্যঃ

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২১ জন সাক্ষী ছিলেন । তাদের মধ্যে এস কে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং মামাতো ভাইয়ের ছেলে শঙ্খজিৎ সিনহাও রয়েছেন।

তারা দুজন বলেন, ‘এস কে সিনহার কথাতেই’ তাদের নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে। পরে সেই হিসেবে সোয়া দুই কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে তারা ‘জানতেন না’।

দণ্ডবিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের যেসব ধারায় এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছিল, তাতে অপরাধ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির সুযোগ ছিল।

মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারা না থাকায় এস কে সিনহাসহ পলাতক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

দুর্নীতির অভিযোগ ও সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিঃ

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

তিনি ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু প্রশ্ন তোলার পর সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা বলা হয়।

ছুটি নিয়ে বিচারপতি সিনহা বিদেশে যাওয়ার আগে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ আখ্যায়িত করা হয় সুপ্রিম কোর্টের ওই বিবৃতিতে।

সুপ্রিম কোর্টের সেই বিবৃতিতে বলা হয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ তুলে ধরেন এবং “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।”

বঙ্গভবনের বৈঠকের পরদিন আপিল বিভাগের বিচারপতিরা সাবেক প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাড়িতে যান এবং তার সঙ্গে অভিযোগগুলো নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন তারা।

ওই বিবৃতিতে তখন বলা হয়, “কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও সুদত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এই অবস্থায় অভিযোগসমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভবপর হবে না।

“এই পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন।”

কিন্তু এরপর বিচারপতি সিনহা সহকর্মীদের কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

সংসদে অভিযোগঃ

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সংসদে প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে তার নানা ‘দুর্নীতির’ কথা বলেছিলেন দুই মন্ত্রীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিচারপতি সিনহার ভাইয়ের নামে রাজউকের প্লট নেওয়ায় অনিয়মের কথা সংসদে বলেছিলেন। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথাও বলেছিলেন তিনি।

সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন ব্যাংকে বেনামে বিচারপতি সিনহার অর্থ জমা রাখার কথা বলেছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের ‘দুর্নীতির’ তদন্ত আটকাতে প্রধান বিচারপতি সিনহার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন।

এস কে সিনহা বিদেশে কোথায়?

দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ২০১৮ সালে একটি বই প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন, তাকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে’ পাঠানো হয়েছে।

ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতেই সে সময় তিনি থাকছিলেন। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে খবর প্রকাশ হয় সিনহা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট যে ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তার বাকিগুলো নিয়ে আর কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।