২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, এক কোটি বই কমলেও ছাপায় পিছিয়ে

উপজেলায় পৌঁছেছে মাত্র ১৫ শতাংশ

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দেড় বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের জন্য তাড়া ছিল না। সব বই ছাপাতে পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত গড়ায়। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে নতুন বই হাতে পেতে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পুরোদমে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গত বছর পাঠ্যবই ছাপা হয় প্রায় ৩৬ কোটি, এবার তা এক কোটি কমেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

প্রতিবছরই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করা হয়। তবে এবার ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড়াতে পারে নতুন পাঠ্যবই ছাপার কাজ। জোটবদ্ধভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়ায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, তবে ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।

নতুন শিক্ষাবর্ষের বাকি প্রায় দেড় মাস। গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি কপি বইয়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছেপে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এ হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৫-১৭ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এনসিটিবি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চার-পাঁচ কোটি বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, ওই সময় পুরোদমে চলছিল ছাপার কাজ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই সময়ে ২০-২২ কোটি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছিল।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘রি-টেন্ডারের কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এরপর আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ বই উপজেলায় পৌঁছে যাবে। কিছু বই ছাপতে দেরি হলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বই পেয়ে যাবে।’

২০১০ সাল থেকে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে। নতুন বছরের প্রথমদিনই সারাদেশে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। পাঠ্যপুস্তক উৎসব চলে সপ্তাহব্যাপী।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৫ কোটির কিছু বেশি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ২৮৮টি বই। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই লাখ ৩৬৪টি বই রয়েছে। বাকি বই মাধ্যমিক স্তরের। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই ছাপাতেও পুনঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ এই স্তরের বই ছাপাতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাগজ পাননি মুদ্রাকররা। পুনঃদরপত্রে কাগজের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।

৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের মোট চার কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৮৮ কপি বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। প্রাথমিকের প্রায় সব বই ছাপার কাজ ডিসেম্বরের মাঝমাঝি সময়ের মধ্যে শেষ করার আশা করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি ১৫ লাখ কপি বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে অগ্রণী প্রিন্টার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাউছার জামান রুবেল গতকাল সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে তার দুই কোটি কপি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, এসব বই উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের আগেই শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

আর মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২৫ কোটি বইয়ের মধ্যে গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত উপেজলায় পৌঁছেছে এক কোটি দশ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৪ কপি বই। এছাড়াও এই স্তরের দুই কোটি ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৬ কপি বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, এসব বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, এক কোটি বই কমলেও ছাপায় পিছিয়ে

উপজেলায় পৌঁছেছে মাত্র ১৫ শতাংশ

রাকিব উদ্দিন

করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দেড় বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের জন্য তাড়া ছিল না। সব বই ছাপাতে পুরো জানুয়ারি পর্যন্ত গড়ায়। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে নতুন বই হাতে পেতে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে। কারণ এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ শতাংশ বই ছাপা হয়েছে।

আগামী শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই পুরোদমে শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গত বছর পাঠ্যবই ছাপা হয় প্রায় ৩৬ কোটি, এবার তা এক কোটি কমেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য ছাপা হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি বই।

প্রতিবছরই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করা হয়। তবে এবার ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গড়াতে পারে নতুন পাঠ্যবই ছাপার কাজ। জোটবদ্ধভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়ায় পুনঃদরপত্র আহ্বান করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে, তবে ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।

নতুন শিক্ষাবর্ষের বাকি প্রায় দেড় মাস। গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি কপি বইয়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি পাঠ্যবই ছেপে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। এ হিসেবে এখন পর্যন্ত ১৫-১৭ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এনসিটিবি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চার-পাঁচ কোটি বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, ওই সময় পুরোদমে চলছিল ছাপার কাজ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই সময়ে ২০-২২ কোটি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছিল।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘রি-টেন্ডারের কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এরপর আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ বই উপজেলায় পৌঁছে যাবে। কিছু বই ছাপতে দেরি হলেও খুব একটা সমস্যা হবে না। কারণ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বই পেয়ে যাবে।’

২০১০ সাল থেকে সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে। নতুন বছরের প্রথমদিনই সারাদেশে উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। পাঠ্যপুস্তক উৎসব চলে সপ্তাহব্যাপী।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৫ কোটির কিছু বেশি বই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ২৮৮টি বই। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই লাখ ৩৬৪টি বই রয়েছে। বাকি বই মাধ্যমিক স্তরের। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই ছাপাতেও পুনঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ এই স্তরের বই ছাপাতে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাগজ পাননি মুদ্রাকররা। পুনঃদরপত্রে কাগজের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে।

৮ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিকের মোট চার কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৮৮ কপি বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। প্রাথমিকের প্রায় সব বই ছাপার কাজ ডিসেম্বরের মাঝমাঝি সময়ের মধ্যে শেষ করার আশা করছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা।

প্রাথমিক স্তরের প্রায় তিন কোটি ১৫ লাখ কপি বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে অগ্রণী প্রিন্টার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাউছার জামান রুবেল গতকাল সংবাদকে বলেন, ইতোমধ্যে তার দুই কোটি কপি বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, এসব বই উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাকি বই ছাপার কাজও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের আগেই শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

আর মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২৫ কোটি বইয়ের মধ্যে গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত উপেজলায় পৌঁছেছে এক কোটি দশ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৪ কপি বই। এছাড়াও এই স্তরের দুই কোটি ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৬ কপি বইয়ের ছাপার কাজ শেষ হয়েছে, এসব বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা।