কবিরাজি চিকিৎসা : ঘরে সাপ ও ধোঁয়া, ১৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১০ ভরি রুপা লুট

প্রতারণার শিকার গৃহবধূ

মাহমুদা খাতুন খুশি নামে ৬০ বছর বয়সের একজন গৃহবধূ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু কোন চিকিৎসায় উপকার পাচ্ছিলেন না। সব সময় মাথাব্যথা, শারীরিক জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য সমস্যা ছিল তার।

হঠাৎ করে খোঁজ পান একজন কবিরাজের। প্রতিবেশী একজন নারী তাকে ওই কবিরাজের খবর দেন। ওই নারী আরও বলেন, ওই কবিরাজের চিকিৎসায় উপকার হবে। এরপর অসুস্থ গৃহবধূ ওই অভি নামে একজন কবিরাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে ঘটনা জানান। এক পর্যায়ে কবিরাজ অভি বলেন, এটা বড় ধরনের জটিল সমস্যা। তার ওস্তাদ (বড় কবিরাজ) চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে। তিনি ছোট কবিরাজের কথামতো সুস্থতার জন্য বড় কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করতে গিয়ে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হন।

প্রতারক কবিরাজ গৃহবধূকে নিজ বাসায় মাথা মাটিতে রেখে কুনিশ করে থাকতে বলে। এরপর বাসায় ধোঁয়া দিয়ে পুরা ঘর অন্ধকার করে রাখে। পরবর্তীতে গৃহবধূর মাথার সামনে পাতিলে রাখা ১৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১০ ভরি রুপা ও টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।

শুধু তাই নয়, কবিরাজি ওষুধের নামে পাতিলের ভিতর বিষধর সাপ ও নকল ইমিটেশন ও কিছু পাথর রেখে গেছে। ঘটনার একদিন পর পাতিল খুলে একটি সাপ (মৃত) ও ইমিটেশনের চুড়ি ও পাথর উদ্ধার করেছে।

অসুস্থ গৃহবধূ মাহমুদা খাতুন খুশি কবিরাজি চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণার শিকার হয়ে পাবনা জেলার সদর থানায় গত ২৪ মে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অনুসন্ধান তদন্ত চালিয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দুই প্রতারক কবিরাজকে সুনামগঞ্জের ছাতক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, লুটকৃত স্বর্ণলঙ্কার উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই প্রতারক হলোÑ বিল্লাল মিয়া ও রমজান। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ। তারা বেদে সম্প্রদায়ের। সুনামগঞ্জে এই ধরনের আরও একটি ঘটনায় তারা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ চক্রে আরও কারা জড়িত আছে। তাদের পিবিআই খুঁজছে। আলোচিত এ প্রতারণার ঘটনায় মোট ৪ প্রতারক জড়িত।

পিবিআই ঢাকাস্থ হেডকোয়ার্টার্স, পিবিআই পাবনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু রায়হান এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু রায়হান জানান, পাবনা জেলা সদরের গৃহবধূ মাহমুদা খাতুন খুশি (৬০) দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথা ও শরীর জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি স্থানীয়ভাবে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে চিকিৎসা করেও কোন কাজ হয়নি। অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। অবশেষে গত মে মাসে পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্ব পরিচিত রাশেদা বেগম তাকে অভি নামে এক কবিরাজের মোবাইল নম্বর দেয়। ওই কবিরাজ ভালো। তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যাবে বলে জানায়।

অসুস্থ গৃহবধূ সুস্থ হওয়ার আসায় কবিরাজ অভির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন, সে গৃহবধূর কথা শুনে বলে, এটা অনেক বড় সমস্যা। এ চিকিৎসার জন্য বড় ওস্তাদকে লাগবে। একমাত্র ওস্তাদই এক কবিরাজি চিকিৎসা করতে পারবেন। ওস্তাদ বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশে গিয়েও এই ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা করেন। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

অবশেষে প্রতারক অভি ও তার ওস্তান (বড় প্রতারক) বিল্লাল মিয়া, সহযোগী প্রতারক রমজানসহ ৩ প্রতারক গত ২১ মে দুপুরের দিকে অসুস্থ গৃহবধূর বাড়িতে যান। বাড়িকে ঢুকে কবিরাজ বিল্লাল ঘোষণা দেন, চিকিৎসার সময় লোকজন ঘরে থাকা যাবে না। চিকিৎসা করার সময় অন্য কেউ ঘরে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে অসুস্থ গৃহবধূর স্বামী যেহেতু বৃদ্ধ তিনি ঘরে থাকতে পারবেন।

এরপর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের সময় কবিরাজ ঘরের মধ্যে আসন বসান। এক পর্যায়ে কবিরাজ অসুস্থ গৃহবধূকে বলেন, কবিরাজি চিকিৎসা করতে স্বর্ণলঙ্কার, রুপা ও লোহা লাগবে। এগুলো সব আপনার (গৃহবধূর) সামনে পাতিলে রাখেন। সামান্য কোথাও লুকিয়ে রাখা যাবে না। এরপর গৃহবধূ সরল বিশ্বাসে ঘরে থাকা ১৩ ভরি ১০ আনা স্বর্ণালঙ্কার, ১০ ভরি রুপা ও এক টুকরো লোহা নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার জন্য সব কিছু কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে সামনে রাখেন। এছাড়াও একটি কাচের গ্লাস ও ঢাকনাযুক্ত পাতিল গৃহবধূর সামনে রাখেন। এরপর ওই গৃহবধূকে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে থাকতে বলেন। গৃহবধূ কবিরাজের কথামতো মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে থাকে।

এরপর প্রতারক কবিরাজ গৃহবধূর বৃদ্ধ স্বামীকে বলেন, আপনি দ্রুত বাহির থেকে আম গাছের কয়েকটি পাতা নিয়ে আসেন। গৃহবধূর বৃদ্ধ স্বামী সরল বিশ্বাসে বাইরে আমপাতা আনতে গেলে প্রতারক ভন্ড কবিরাজ গৃহবধূর সামনে পাতিলে রাখা সব স্বর্ণালঙ্কার ভর্তি কাগজে মোড়ানো পোটলা নিজের (কবিরাজের) ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর কবিরাজের ব্যাগে থাকা নকল ইমিটেশনের কয়েকটি চুড়ি, পাথর ও একটি জীবন্ত বিষধর সাপ গৃহবধূর সামনে রাখা পাতিলে রেখে ঢাকনা বন্ধ করে দেয়। পরে ঘরে এক ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে ধোয়া সৃষ্টি করে। গৃহবধূ মাথা কুর্নিশ করে থাকা অবস্থায় বলেন, টানা তিন ঘণ্টা মাথা নিচু করে থাকেন। আমরা এসে আপনাকে ডাক দিলে উঠবেন। আমরা পাশের গ্রামে আরেকজন রোগী দেখে আসব। প্রতারক কবিরাজ ৩ ঘণ্টায় জায়গা ৬ ঘণ্টায়ও ফিরে আসেনি। আর ফিরে না আসায় সন্ধ্যার দিকে গৃহবধূ কর্নিশ থেকে মাথা উঁচু করে উঠে তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, জরুরি রোগী নিয়ে ব্যস্ত আছেন। পরে আসবেন। এরপর রাতে টেলিফোন করলে বলেন, পীর সাহেব বলেছেন, একটি ছাগল (পাঁঠা) জবাই করে পাতিলের উপর রক্ত দিতে হবে। না হয় সবার মারাত্মক ক্ষতি হবে। এতো রাতে ছাগল পাওয়া কষ্টকর হবে বাবা। না পারলে বিকাশে ১৮ হাজার টাকা তাড়াতাড়ি পাঠান। না হলে বাসার সবাই মারা যাবে। এরপর কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাঠানোর পর ফোন করলে প্রতারক কবিরাজ গুমকি দেয়। এরপর গৃহবধূ বুঝতে পারে তিনি চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি থানায় মামলা দায়ের করেন। পিবি আইন স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেন।

পিবিআইর তদন্ত টিম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারক কবিরাজের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু প্রতারক বিল্লাল সুনামগঞ্জে একই ধরনের আরেকটি প্রতারণার মামলায় জেলে আছেন। এরপর তাদের পাবনা সদর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে আনলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, লুটকৃত স্বর্ণলঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। এ চক্রে আরও কারা জড়িত আছে তাদের খোঁজা হচ্ছে।

পিবিআই তদন্ত টিমের প্রধান পাবনার দায়িত্ব এসপি ফজলে এলাহী বলেন, এই প্রতারক চক্র একই কৌশলে সুনামগঞ্জেও কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণা করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। আলোচিত পাবনার মামলাটি তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

কবিরাজি চিকিৎসা : ঘরে সাপ ও ধোঁয়া, ১৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১০ ভরি রুপা লুট

প্রতারণার শিকার গৃহবধূ

বাকী বিল্লাহ

মাহমুদা খাতুন খুশি নামে ৬০ বছর বয়সের একজন গৃহবধূ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু কোন চিকিৎসায় উপকার পাচ্ছিলেন না। সব সময় মাথাব্যথা, শারীরিক জ্বালাপোড়াসহ অন্যান্য সমস্যা ছিল তার।

হঠাৎ করে খোঁজ পান একজন কবিরাজের। প্রতিবেশী একজন নারী তাকে ওই কবিরাজের খবর দেন। ওই নারী আরও বলেন, ওই কবিরাজের চিকিৎসায় উপকার হবে। এরপর অসুস্থ গৃহবধূ ওই অভি নামে একজন কবিরাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে ঘটনা জানান। এক পর্যায়ে কবিরাজ অভি বলেন, এটা বড় ধরনের জটিল সমস্যা। তার ওস্তাদ (বড় কবিরাজ) চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে। তিনি ছোট কবিরাজের কথামতো সুস্থতার জন্য বড় কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করতে গিয়ে বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হন।

প্রতারক কবিরাজ গৃহবধূকে নিজ বাসায় মাথা মাটিতে রেখে কুনিশ করে থাকতে বলে। এরপর বাসায় ধোঁয়া দিয়ে পুরা ঘর অন্ধকার করে রাখে। পরবর্তীতে গৃহবধূর মাথার সামনে পাতিলে রাখা ১৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ১০ ভরি রুপা ও টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।

শুধু তাই নয়, কবিরাজি ওষুধের নামে পাতিলের ভিতর বিষধর সাপ ও নকল ইমিটেশন ও কিছু পাথর রেখে গেছে। ঘটনার একদিন পর পাতিল খুলে একটি সাপ (মৃত) ও ইমিটেশনের চুড়ি ও পাথর উদ্ধার করেছে।

অসুস্থ গৃহবধূ মাহমুদা খাতুন খুশি কবিরাজি চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণার শিকার হয়ে পাবনা জেলার সদর থানায় গত ২৪ মে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অনুসন্ধান তদন্ত চালিয়ে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দুই প্রতারক কবিরাজকে সুনামগঞ্জের ছাতক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্য মতে, লুটকৃত স্বর্ণলঙ্কার উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই প্রতারক হলোÑ বিল্লাল মিয়া ও রমজান। তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জ। তারা বেদে সম্প্রদায়ের। সুনামগঞ্জে এই ধরনের আরও একটি ঘটনায় তারা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ চক্রে আরও কারা জড়িত আছে। তাদের পিবিআই খুঁজছে। আলোচিত এ প্রতারণার ঘটনায় মোট ৪ প্রতারক জড়িত।

পিবিআই ঢাকাস্থ হেডকোয়ার্টার্স, পিবিআই পাবনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু রায়হান এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আবু রায়হান জানান, পাবনা জেলা সদরের গৃহবধূ মাহমুদা খাতুন খুশি (৬০) দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথা ও শরীর জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত। তিনি স্থানীয়ভাবে অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে চিকিৎসা করেও কোন কাজ হয়নি। অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। অবশেষে গত মে মাসে পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্ব পরিচিত রাশেদা বেগম তাকে অভি নামে এক কবিরাজের মোবাইল নম্বর দেয়। ওই কবিরাজ ভালো। তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিলে ভালো হয়ে যাবে বলে জানায়।

অসুস্থ গৃহবধূ সুস্থ হওয়ার আসায় কবিরাজ অভির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন, সে গৃহবধূর কথা শুনে বলে, এটা অনেক বড় সমস্যা। এ চিকিৎসার জন্য বড় ওস্তাদকে লাগবে। একমাত্র ওস্তাদই এক কবিরাজি চিকিৎসা করতে পারবেন। ওস্তাদ বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশে গিয়েও এই ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা করেন। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

অবশেষে প্রতারক অভি ও তার ওস্তান (বড় প্রতারক) বিল্লাল মিয়া, সহযোগী প্রতারক রমজানসহ ৩ প্রতারক গত ২১ মে দুপুরের দিকে অসুস্থ গৃহবধূর বাড়িতে যান। বাড়িকে ঢুকে কবিরাজ বিল্লাল ঘোষণা দেন, চিকিৎসার সময় লোকজন ঘরে থাকা যাবে না। চিকিৎসা করার সময় অন্য কেউ ঘরে থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তবে অসুস্থ গৃহবধূর স্বামী যেহেতু বৃদ্ধ তিনি ঘরে থাকতে পারবেন।

এরপর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের সময় কবিরাজ ঘরের মধ্যে আসন বসান। এক পর্যায়ে কবিরাজ অসুস্থ গৃহবধূকে বলেন, কবিরাজি চিকিৎসা করতে স্বর্ণলঙ্কার, রুপা ও লোহা লাগবে। এগুলো সব আপনার (গৃহবধূর) সামনে পাতিলে রাখেন। সামান্য কোথাও লুকিয়ে রাখা যাবে না। এরপর গৃহবধূ সরল বিশ্বাসে ঘরে থাকা ১৩ ভরি ১০ আনা স্বর্ণালঙ্কার, ১০ ভরি রুপা ও এক টুকরো লোহা নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসার জন্য সব কিছু কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে সামনে রাখেন। এছাড়াও একটি কাচের গ্লাস ও ঢাকনাযুক্ত পাতিল গৃহবধূর সামনে রাখেন। এরপর ওই গৃহবধূকে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে থাকতে বলেন। গৃহবধূ কবিরাজের কথামতো মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে থাকে।

এরপর প্রতারক কবিরাজ গৃহবধূর বৃদ্ধ স্বামীকে বলেন, আপনি দ্রুত বাহির থেকে আম গাছের কয়েকটি পাতা নিয়ে আসেন। গৃহবধূর বৃদ্ধ স্বামী সরল বিশ্বাসে বাইরে আমপাতা আনতে গেলে প্রতারক ভন্ড কবিরাজ গৃহবধূর সামনে পাতিলে রাখা সব স্বর্ণালঙ্কার ভর্তি কাগজে মোড়ানো পোটলা নিজের (কবিরাজের) ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর কবিরাজের ব্যাগে থাকা নকল ইমিটেশনের কয়েকটি চুড়ি, পাথর ও একটি জীবন্ত বিষধর সাপ গৃহবধূর সামনে রাখা পাতিলে রেখে ঢাকনা বন্ধ করে দেয়। পরে ঘরে এক ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে ধোয়া সৃষ্টি করে। গৃহবধূ মাথা কুর্নিশ করে থাকা অবস্থায় বলেন, টানা তিন ঘণ্টা মাথা নিচু করে থাকেন। আমরা এসে আপনাকে ডাক দিলে উঠবেন। আমরা পাশের গ্রামে আরেকজন রোগী দেখে আসব। প্রতারক কবিরাজ ৩ ঘণ্টায় জায়গা ৬ ঘণ্টায়ও ফিরে আসেনি। আর ফিরে না আসায় সন্ধ্যার দিকে গৃহবধূ কর্নিশ থেকে মাথা উঁচু করে উঠে তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, জরুরি রোগী নিয়ে ব্যস্ত আছেন। পরে আসবেন। এরপর রাতে টেলিফোন করলে বলেন, পীর সাহেব বলেছেন, একটি ছাগল (পাঁঠা) জবাই করে পাতিলের উপর রক্ত দিতে হবে। না হয় সবার মারাত্মক ক্ষতি হবে। এতো রাতে ছাগল পাওয়া কষ্টকর হবে বাবা। না পারলে বিকাশে ১৮ হাজার টাকা তাড়াতাড়ি পাঠান। না হলে বাসার সবাই মারা যাবে। এরপর কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাঠানোর পর ফোন করলে প্রতারক কবিরাজ গুমকি দেয়। এরপর গৃহবধূ বুঝতে পারে তিনি চিকিৎসার নামে ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি থানায় মামলা দায়ের করেন। পিবি আইন স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নেন।

পিবিআইর তদন্ত টিম আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতারক কবিরাজের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু প্রতারক বিল্লাল সুনামগঞ্জে একই ধরনের আরেকটি প্রতারণার মামলায় জেলে আছেন। এরপর তাদের পাবনা সদর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে আনলে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, লুটকৃত স্বর্ণলঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে। এ চক্রে আরও কারা জড়িত আছে তাদের খোঁজা হচ্ছে।

পিবিআই তদন্ত টিমের প্রধান পাবনার দায়িত্ব এসপি ফজলে এলাহী বলেন, এই প্রতারক চক্র একই কৌশলে সুনামগঞ্জেও কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণা করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। আলোচিত পাবনার মামলাটি তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।