বাস-মিনিবাসে সিটিং ও ওয়েবিলের নামে দু-তিনগুণ ভাড়া আদায়

১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা

রাজধানীর অধিকাংশ বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল (যাত্রা পথে যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ) নামে দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি বাস-মিনিবাসে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সিট সংযোগ করে চালু করা হয়েছে এই সার্ভিস। সরকারে নতুন ভাড়ায় বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের নামের এই ভাড়া ১৫ থেকে ২৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। যা আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা ছিল বলে যাত্রীরা জানান। তবে ভাড়া নেয়ার অপরাধে ৭৪টি বাসকে জরিমানা করেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত। এর ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মহানগরীর পর্যায়ে গণপরিবহন বলতে বুঝানো হয় বাস, মিনিবাস ও লেগুনা। প্রতিটি ৩১ আসনের মিনিবাসে ৪১ আসন, ৩৬ আসনের বাসে ৪৬ আসন, ৩৯ আসনের বাসে ৫২/৬১ আসন সংযোজন করা হয়। এ সব গণপরিবহনের কিছু বাস-মিনিবাস গ্যাস চালিত। কিন্তু সব গণপরিবহনেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল মাধ্যমে পরিচালিত বাস রুট আমাদের অনুমোদিত নয়। এই সার্ভিস সম্পূর্ণ অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত সোমবার দূরপাল্লার সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে মহানগরীতে তেলে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের বাসে ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ০৫ পয়সা। বাসের সর্বনি¤œ ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অন্তর্ভুক্ত নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত কোন যানবাহনের ক্ষেত্রে এই নতুন ভাড়া প্রযোজ্য হবে না বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর সব গণপরিবহনে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরানো, ফিটসেনবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর বাস সিটিং সার্ভিসে নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়ার নিয়ম থাকলেও তা মানছে না পরিবহনের মালিকরা। প্রতি পরিবহনে হাফ ভাড়া নেই উল্লেখ করে স্টিকার লাগানো হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি বাস-মিনিবাসের আসন সংখ্যা ঠিক নাই। যত আসনে রুটপারমিট নেয়া হয় তা চেয়ে ৫-১০টি আসন বাড়িয়ে সড়কে গাড়ি নামানো হয় এই সব পরিবহন। এ সব আসন সংযোজন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু তারপরও অবৈধ সিট সংযোগ করে সিটিং সার্ভিসের নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনের মালিকরা।

এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘৮০ শতাংশ গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করায় প্রতিটি যাত্রীর সিটিং গাড়িতে যাতায়াতের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। নগরীর যাত্রী সাধারণের জন্য বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ২ টাকা ০৫ পয়সা এবং সর্বনিন্ম ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ১০ টাকা ও ৮ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সব বাস-মিনিবাস সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।’

সরেজমিনে রাজধানী বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, পুরানো, লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বডিতে রং করে সিটিং সার্ভিস নামে চালানো হচ্ছে। এ সব বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লাব্বাইক, ট্রান্স সিলভা, শিকড়, খাজাবাবা, আকাশ, ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, অনাবিল, রমজান, তরঙ্গ, স্বাধীন, নূরে মক্কাসহ একাধিক পরিবহন সিটিং সার্ভিসের নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এ সব পরিবহন ওয়েবিলের কথা বলে নিজের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় মামুন নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে মানিকনগরের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কম হবে। কিন্তু রাইদা পরিবহন তার কাছ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। সিটিং সার্ভিসের কথা বলা হলেও প্রতিটি স্টপিজ থেকে যাত্রী নেয়া হয়। কখন সিট না থাকলে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হয়। তাহলে কিসের সিটিং সার্ভিস।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় কাজল নামের এক যাত্রী বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রাখছে। নতুন ভাড়া কার্যকরের আগ থেকেই তারা বেশি ভাড়া নিতো। এখন তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে আরও বেশি ভাড়া আদায় করছে। গুলিস্তান থেকে আগে মিরপুরের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা।

রাজধানীর প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দূরত্ব ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। সে হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা। কিন্তু এই পথে হিমাচল পরিবহন, স্বাধীন এক্সপ্রেক্স, দিশারী পরিবহন, শিকড় পরিবহনের বাস মিনিবাসে আদায় করা হয় ১৫-২০ টাকা।

একইভাবে মনজিল, শতাব্দী, আল মক্কা, মালঞ্চ, বসুমতি ও বাহন পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথে ভাড়া ২০ টাকা, শুভেচ্ছা, ওয়েলকাম, তানজিল, গুলিস্থান-গাজীপুর পরিবহন লিমিটেড পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথের ভাড়া ১৫ টাকা।

৭ নাম্বার রুটের মিনিবাস ও ৮ নাম্বার রুটের মিনিবাসে এইপথে ১০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। প্রতিদিন সকালে অফিসের সময় এই মিনিবাসেও সিটিং সার্ভিসের নামে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। সিটিং সার্ভিস কোম্পানিকর্তৃক নির্ধারিত স্টপেজে আগে নামলেও পুরো পথের ভাড়া যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে আদায় করে আবার মাঝপথ থেকে যাত্রী উঠানো নামানো, এক সিট একাধিকবার বিক্রি করা, সিটিং সার্ভিসের নাম ধারণ করেও মুড়ির টিনের মতো করে যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করতে দেখা যায় এইসব বাস-মিনিবাস।

এইসব সিটিং সার্ভিসের বাস-মিনিবাস রুট পারমিটের শর্ত অমান্য করে শুধুমাত্র রুটের লাভজনক অংশে চলাচল করে। যেমন, গুলিস্তান থেকে তারাবো বা গুলিস্তান থেকে মদনপুর রুটের বাস-মিনিবাস সকাল ও বিকেলে পিক আওয়ারে শনিরআখড়া, রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান পথে সিটিং হিসেবে দ্বিগুণ ভাড়ায় চলাচল করে থাকে। নগরীর বিভিন্ন রুটে একই অবস্থা।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ফরিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বাস-মিনিবাসের সিটিং সার্ভিস ও ওবিল (ওয়েবিল) কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ৮ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা, ২০ কিলোমিটারের বাস ভাড়া ১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

বাস-মিনিবাসে সিটিং ও ওয়েবিলের নামে দু-তিনগুণ ভাড়া আদায়

১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

গতকাল রাজধানীতে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয় -সংবাদ

রাজধানীর অধিকাংশ বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল (যাত্রা পথে যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ) নামে দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি বাস-মিনিবাসে অবৈধভাবে অতিরিক্ত সিট সংযোগ করে চালু করা হয়েছে এই সার্ভিস। সরকারে নতুন ভাড়ায় বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সিটিং সার্ভিসের নামের এই ভাড়া ১৫ থেকে ২৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। যা আগে ১০ থেকে ১৫ টাকা ছিল বলে যাত্রীরা জানান। তবে ভাড়া নেয়ার অপরাধে ৭৪টি বাসকে জরিমানা করেছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত। এর ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মহানগরীর পর্যায়ে গণপরিবহন বলতে বুঝানো হয় বাস, মিনিবাস ও লেগুনা। প্রতিটি ৩১ আসনের মিনিবাসে ৪১ আসন, ৩৬ আসনের বাসে ৪৬ আসন, ৩৯ আসনের বাসে ৫২/৬১ আসন সংযোজন করা হয়। এ সব গণপরিবহনের কিছু বাস-মিনিবাস গ্যাস চালিত। কিন্তু সব গণপরিবহনেই ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল মাধ্যমে পরিচালিত বাস রুট আমাদের অনুমোদিত নয়। এই সার্ভিস সম্পূর্ণ অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত সোমবার দূরপাল্লার সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে মহানগরীতে তেলে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের বাসে ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ০৫ পয়সা। বাসের সর্বনি¤œ ভাড়া ৭ টাকার স্থলে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৫ টাকার স্থলে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অন্তর্ভুক্ত নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ০৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল চালিত কোন যানবাহনের ক্ষেত্রে এই নতুন ভাড়া প্রযোজ্য হবে না বলে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু রাজধানীর সব গণপরিবহনে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরানো, ফিটসেনবিহীন ও লক্কর-ঝক্কর বাস সিটিং সার্ভিসে নির্ধারিত ভাড়া থেকে দুই-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়ার নিয়ম থাকলেও তা মানছে না পরিবহনের মালিকরা। প্রতি পরিবহনে হাফ ভাড়া নেই উল্লেখ করে স্টিকার লাগানো হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি বাস-মিনিবাসের আসন সংখ্যা ঠিক নাই। যত আসনে রুটপারমিট নেয়া হয় তা চেয়ে ৫-১০টি আসন বাড়িয়ে সড়কে গাড়ি নামানো হয় এই সব পরিবহন। এ সব আসন সংযোজন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু তারপরও অবৈধ সিট সংযোগ করে সিটিং সার্ভিসের নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনের মালিকরা।

এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘৮০ শতাংশ গড় বোঝাই ধরে ভাড়া নির্ধারণ করায় প্রতিটি যাত্রীর সিটিং গাড়িতে যাতায়াতের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। নগরীর যাত্রী সাধারণের জন্য বাস-মিনিবাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ২ টাকা ১৫ পয়সা ও ২ টাকা ০৫ পয়সা এবং সর্বনিন্ম ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ১০ টাকা ও ৮ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সব বাস-মিনিবাস সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।’

সরেজমিনে রাজধানী বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, পুরানো, লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বডিতে রং করে সিটিং সার্ভিস নামে চালানো হচ্ছে। এ সব বাস-মিনিবাসে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা লাব্বাইক, ট্রান্স সিলভা, শিকড়, খাজাবাবা, আকাশ, ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, অনাবিল, রমজান, তরঙ্গ, স্বাধীন, নূরে মক্কাসহ একাধিক পরিবহন সিটিং সার্ভিসের নামের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। এ সব পরিবহন ওয়েবিলের কথা বলে নিজের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় মামুন নামের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে মানিকনগরের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কম হবে। কিন্তু রাইদা পরিবহন তার কাছ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। সিটিং সার্ভিসের কথা বলা হলেও প্রতিটি স্টপিজ থেকে যাত্রী নেয়া হয়। কখন সিট না থাকলে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হয়। তাহলে কিসের সিটিং সার্ভিস।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় কাজল নামের এক যাত্রী বলেন, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে রাখছে। নতুন ভাড়া কার্যকরের আগ থেকেই তারা বেশি ভাড়া নিতো। এখন তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে আরও বেশি ভাড়া আদায় করছে। গুলিস্তান থেকে আগে মিরপুরের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা এখন নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা।

রাজধানীর প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগের দূরত্ব ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার। সে হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা। কিন্তু এই পথে হিমাচল পরিবহন, স্বাধীন এক্সপ্রেক্স, দিশারী পরিবহন, শিকড় পরিবহনের বাস মিনিবাসে আদায় করা হয় ১৫-২০ টাকা।

একইভাবে মনজিল, শতাব্দী, আল মক্কা, মালঞ্চ, বসুমতি ও বাহন পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথে ভাড়া ২০ টাকা, শুভেচ্ছা, ওয়েলকাম, তানজিল, গুলিস্থান-গাজীপুর পরিবহন লিমিটেড পরিবহনের বাস-মিনিবাসে এই পথের ভাড়া ১৫ টাকা।

৭ নাম্বার রুটের মিনিবাস ও ৮ নাম্বার রুটের মিনিবাসে এইপথে ১০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। প্রতিদিন সকালে অফিসের সময় এই মিনিবাসেও সিটিং সার্ভিসের নামে ২০ টাকা ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। সিটিং সার্ভিস কোম্পানিকর্তৃক নির্ধারিত স্টপেজে আগে নামলেও পুরো পথের ভাড়া যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে আদায় করে আবার মাঝপথ থেকে যাত্রী উঠানো নামানো, এক সিট একাধিকবার বিক্রি করা, সিটিং সার্ভিসের নাম ধারণ করেও মুড়ির টিনের মতো করে যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করতে দেখা যায় এইসব বাস-মিনিবাস।

এইসব সিটিং সার্ভিসের বাস-মিনিবাস রুট পারমিটের শর্ত অমান্য করে শুধুমাত্র রুটের লাভজনক অংশে চলাচল করে। যেমন, গুলিস্তান থেকে তারাবো বা গুলিস্তান থেকে মদনপুর রুটের বাস-মিনিবাস সকাল ও বিকেলে পিক আওয়ারে শনিরআখড়া, রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান পথে সিটিং হিসেবে দ্বিগুণ ভাড়ায় চলাচল করে থাকে। নগরীর বিভিন্ন রুটে একই অবস্থা।

রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ফরিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বাস-মিনিবাসের সিটিং সার্ভিস ও ওবিল (ওয়েবিল) কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে ৮ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা, ২০ কিলোমিটারের বাস ভাড়া ১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।