পরোয়ানা জারির ৯ মাসেও গ্রেপ্তার হননি পুলিশ কর্মকর্তা

আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আল ইমরানের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক আইনের মামলায় আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবার ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি হাঁকিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংক্রান্ত খবর দৈনিক সংবাদে গত ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত হলে পুলিশ বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। তবে অদৃশ্য হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না এবং উল্টো তার নিজ বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার ওসি ওই কর্মকর্তা আল ইমরানকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে গঠনাটিকে ধামাচাপা দিচ্ছেন বলে তার স্ত্রী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছে। স্বজনরা অভিযোগ করেছে পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুখ সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরানকে পলাতক না দেখিয়ে তিনি রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতিবেদন দিতে পারতেন।

কিন্তু তিনি তা না করে পলাতক দেখিয়ে দায়সারা কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুখের সঙ্গে সংবাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আল ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশনামা আদালত থেকে তিনি পেয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে কারণে পলাতক বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আল ইমরান রংপুরে সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আছেন জানার পরেও কেন সেই প্রতিবেদন দেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল ইমরান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে আল ইমরানের স্ত্রীর স্বজনরা বলেছেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন আর বলার কিছু থাকে না। ওসি সাহেব ভালো করে জানেন, আল ইমরান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, তার পরেও তিনি তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোন সহায়তা নিচ্ছেন না আসলে আমরা কার কাছে বিচার চাইব।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত আল ইমরান, পিতা আবুল হোসেন, বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মির্জাকোর্ট এলাকায়। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ২০১১ সালে রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলা শহরে মুন্সিপাড়া মহল্লার আবদুল গফুরের মেয়ে আরিফা আখতার গোধুলীর বিয়ে হয়।

মামলায় বাদীনি ওই পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানের স্ত্রী অভিযোগ করেন যখন তার বিয়ে হয় তখন আল ইমরান ছাত্র ছিল সে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাড়িতে তোলেনি। তার পরেও তাদের বাড়িতে এবং কুড়িগ্রাম শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে ঘর-সংসার করেন। কিন্তু পুলিশের এএসপি হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেবার বার বার আশ্বাস দিলেও নানান কৌশলে কালক্ষেপন করতে থাকে।

সম্প্রতি পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান নগদ ২০ লাখ টাকা ও একটি ফ্ল্যাট যৌতুক হিসেবে দাবি করে। টাকা দিতে তার স্ত্রী ও তার স্বজনরা সম্মত না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরান স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।

বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি তার স্ত্রীর স্বজনরা পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিমন্ত্রণ জানান। তারা এসে ২০ লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট না দিলে স্ত্রীকে বাড়িতে তোলা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে আল ইমরানের স্ত্রী গোধুরী বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করে। (যার মামলা নম্বর সিআর ৮৫/২০০০)

মামলায় শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক প্রথমে আসামি আল ইমরানকে আদালতে হাজির হবার জন্য সমন জারি করেন। তার পরেও আদালতে হাজির না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১১ মাসেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি বলে অভিযোগ স্বজনদের।

এদিকে এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা উনি শুনেছেন, তবে এ সংক্রান্ত কোন কাগজ তার কাছে আসেনি।

এদিকে আল ইমরানের স্ত্রী আরিফা আখতার গোধুরীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ কত তৎপর হয় প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ্দ করে। অথচ একজন পুলিশ কর্মকর্তা রংপুরে বীর দর্পে দায়িত্ব পালন করছেন, অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তারা এ ব্যাপারে সরাসরি আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আল ইমরানের সঙ্গে এর আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, পারিবারিক বিষয় পরিবারের মধ্যেই থাক, কিন্তু আবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

স্ত্রীর যৌতুক মামলায়

পরোয়ানা জারির ৯ মাসেও গ্রেপ্তার হননি পুলিশ কর্মকর্তা

আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. আল ইমরানের বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক আইনের মামলায় আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হবার ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাড়ি হাঁকিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংক্রান্ত খবর দৈনিক সংবাদে গত ১৬ অক্টোবর প্রকাশিত হলে পুলিশ বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। তবে অদৃশ্য হস্তক্ষেপের কারণে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না এবং উল্টো তার নিজ বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার ওসি ওই কর্মকর্তা আল ইমরানকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে গঠনাটিকে ধামাচাপা দিচ্ছেন বলে তার স্ত্রী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছে। স্বজনরা অভিযোগ করেছে পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুখ সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরানকে পলাতক না দেখিয়ে তিনি রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রতিবেদন দিতে পারতেন।

কিন্তু তিনি তা না করে পলাতক দেখিয়ে দায়সারা কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুখের সঙ্গে সংবাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আল ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশনামা আদালত থেকে তিনি পেয়েছেন, তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে কারণে পলাতক বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন তিনি। কিন্তু আল ইমরান রংপুরে সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আছেন জানার পরেও কেন সেই প্রতিবেদন দেননি এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল ইমরান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে আল ইমরানের স্ত্রীর স্বজনরা বলেছেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন আর বলার কিছু থাকে না। ওসি সাহেব ভালো করে জানেন, আল ইমরান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, তার পরেও তিনি তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোন সহায়তা নিচ্ছেন না আসলে আমরা কার কাছে বিচার চাইব।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত আল ইমরান, পিতা আবুল হোসেন, বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মির্জাকোর্ট এলাকায়। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ২০১১ সালে রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলা শহরে মুন্সিপাড়া মহল্লার আবদুল গফুরের মেয়ে আরিফা আখতার গোধুলীর বিয়ে হয়।

মামলায় বাদীনি ওই পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানের স্ত্রী অভিযোগ করেন যখন তার বিয়ে হয় তখন আল ইমরান ছাত্র ছিল সে কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাড়িতে তোলেনি। তার পরেও তাদের বাড়িতে এবং কুড়িগ্রাম শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে ঘর-সংসার করেন। কিন্তু পুলিশের এএসপি হিসেবে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেবার বার বার আশ্বাস দিলেও নানান কৌশলে কালক্ষেপন করতে থাকে।

সম্প্রতি পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান নগদ ২০ লাখ টাকা ও একটি ফ্ল্যাট যৌতুক হিসেবে দাবি করে। টাকা দিতে তার স্ত্রী ও তার স্বজনরা সম্মত না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরান স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।

বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি তার স্ত্রীর স্বজনরা পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিমন্ত্রণ জানান। তারা এসে ২০ লাখ টাকা ও ফ্ল্যাট না দিলে স্ত্রীকে বাড়িতে তোলা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে আল ইমরানের স্ত্রী গোধুরী বাদী হয়ে কুড়িগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক আইনে মামলা দায়ের করে। (যার মামলা নম্বর সিআর ৮৫/২০০০)

মামলায় শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক প্রথমে আসামি আল ইমরানকে আদালতে হাজির হবার জন্য সমন জারি করেন। তার পরেও আদালতে হাজির না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা আল ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১১ মাসেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি বলে অভিযোগ স্বজনদের।

এদিকে এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা উনি শুনেছেন, তবে এ সংক্রান্ত কোন কাগজ তার কাছে আসেনি।

এদিকে আল ইমরানের স্ত্রী আরিফা আখতার গোধুরীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ কত তৎপর হয় প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ্দ করে। অথচ একজন পুলিশ কর্মকর্তা রংপুরে বীর দর্পে দায়িত্ব পালন করছেন, অথচ তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তারা এ ব্যাপারে সরাসরি আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আল ইমরানের সঙ্গে এর আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, পারিবারিক বিষয় পরিবারের মধ্যেই থাক, কিন্তু আবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।