ফের চীনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন শি জিনপিং

পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট পদে ফের বসতে যাচ্ছেন শি জিনপিং। কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে তাকে তৃতীয়বারের জন্য মনোনীত করতে চলেছেন। ২০১৮ সালে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সে সময় প্রেসিডেন্টের পদে থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার বিধান প্রত্যাহার করা হয়। ফলে কোনো নেতাকে আজীবনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে কোনো বাধা নেই।

তাই আগামী বছর পার্টি কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতা নির্বাচিত হলেই প্রেসিডেন্টের পদে থেকে যাবেন শি জিনপিং। মূলত তার আগেই কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার নাম অনুমোদিত হবে। যদিও এসবই নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগামী বৃহস্পতিবার বা তার দু-একদিন পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৃহীত একটি প্রস্তাবের কথা জানানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ডয়েচে ভেলে।

যদি তা জানানো হয়, তাহলে এটা হবে এই ধরনের তৃতীয় প্রস্তাব। এর আগে ১৯৪৫ ও ১৯৮১ সালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের প্রস্তাব ছিল- কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের চার বছর পর। আর ১৯৮১ সালে বড় ধরনের আর্থিক সংস্কারের আগে প্রস্তাবটি নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবটি নেয়া হলে শি-র ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, গত এক দশক ধরে চীনে ক্ষমতায় আছেন শি। তার সময়ে দেশটির অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে, পররাষ্ট্র নীতি আগ্রাসী হয়েছে, সামরিক ব্যবস্থার সংস্কার হয়েছে এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি উইঘুর মুসলিমদের ওপর ব্যাপক দমননীতির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। তাদের অভিযোগ, উইগুর মুসলিমদের একটা বড় অংশ দমননীতি ও অবিচারের শিকার। এছাড়া হংকংয়ের মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না দেয়া নিয়ে শি-র সমালোচনা কম হয়নি। তাইওয়ান নিয়েও তার নীতির প্রবল সমালোচনা হয়েছে।

হংকংয়ের মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা না দেয়া নিয়েও শি-র সমালোচনা কম হয়নি। তাইওয়ান নিয়েও তার নীতির প্রবল সমালোচনা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শি একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক সাফল্যের কথা জানিয়েছেন এই রাষ্ট্রপ্রধান।

শি-র বয়স এখন ৬৮ বছর। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কাজের মানুষ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, জিনপিংয়ের চিন্তার গভীরতা আছে। তিনি অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তিনি নতুন পথে যেতে ভয় পান না। তার চিন্তাভাবনা প্রগতিশীল এবং চীনকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

চীনে বন্দী সাংবাদিকের মুক্তি

দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের খবর প্রকাশ করার পর বন্দী সংবাদিক ঝ্যাং ঝানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি বন্দী অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানের গুরুতর অসুস্থতার খবর প্রকাশ হওয়ার পর চীনের প্রতি এই অনুরোধ জানাল যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বারবার তাকে স্বেচ্ছাচারী আটক ও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। চীনের প্রতি তাকে দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানানোর কথাও জানান তিনি। জানা গেছে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ সংগ্রহে ছুটে গিয়েছিলেন সাংবাদিক ঝ্যাং। করোনার সংক্রমণ প্রথম প্রকাশ্যে এনে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন তিনি। কিভাবে সেখানে করোনায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সে ছবি তুলে ধরেছিলেন ঝ্যাং। আর সে কারণেই কারাগারে যেতে হয় তাকে। সেখানে অনশন ধর্মঘট করে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৩৮ বছর বয়সী সাংবাদিক ও সাবেক আইনজীবী ঝ্যাং ঝান।

২০২০ সালের মে মাসে আটক করার পর ডিসেম্বরে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা উস্কে দেয়ার জন্য তাকে চার বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ভিন্ন মত দমনের জন্যই তাকে এ দ- দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কারাগারে বন্দি অবস্থায় প্রতিবাদ হিসেবে আমরণ অনশন শুরু করেন ঝ্যাং। এরই মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কেটে গেছে তার। শারীরিক অবস্থারও ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। তাকে জোর করে টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি বলে দাবি তার পরিবারের।

এর আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য চীনা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানায়। শুধু ঝ্যাং নয়, উহানের খবর প্রকাশ করতে যাওয়া আরও তিন সাংবাদিক চেন কুইশি, ফ্যাং বিন এবং লি জেহুয়াকেও আটক করেছিল বেইজিং।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

ফের চীনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন শি জিনপিং

image

পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট পদে ফের বসতে যাচ্ছেন শি জিনপিং। কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে তাকে তৃতীয়বারের জন্য মনোনীত করতে চলেছেন। ২০১৮ সালে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সে সময় প্রেসিডেন্টের পদে থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমার বিধান প্রত্যাহার করা হয়। ফলে কোনো নেতাকে আজীবনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে কোনো বাধা নেই।

তাই আগামী বছর পার্টি কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতা নির্বাচিত হলেই প্রেসিডেন্টের পদে থেকে যাবেন শি জিনপিং। মূলত তার আগেই কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তার নাম অনুমোদিত হবে। যদিও এসবই নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগামী বৃহস্পতিবার বা তার দু-একদিন পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে গৃহীত একটি প্রস্তাবের কথা জানানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ডয়েচে ভেলে।

যদি তা জানানো হয়, তাহলে এটা হবে এই ধরনের তৃতীয় প্রস্তাব। এর আগে ১৯৪৫ ও ১৯৮১ সালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের প্রস্তাব ছিল- কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের চার বছর পর। আর ১৯৮১ সালে বড় ধরনের আর্থিক সংস্কারের আগে প্রস্তাবটি নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবটি নেয়া হলে শি-র ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, গত এক দশক ধরে চীনে ক্ষমতায় আছেন শি। তার সময়ে দেশটির অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে, পররাষ্ট্র নীতি আগ্রাসী হয়েছে, সামরিক ব্যবস্থার সংস্কার হয়েছে এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি উইঘুর মুসলিমদের ওপর ব্যাপক দমননীতির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। তাদের অভিযোগ, উইগুর মুসলিমদের একটা বড় অংশ দমননীতি ও অবিচারের শিকার। এছাড়া হংকংয়ের মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না দেয়া নিয়ে শি-র সমালোচনা কম হয়নি। তাইওয়ান নিয়েও তার নীতির প্রবল সমালোচনা হয়েছে।

হংকংয়ের মানুষকে রাজনৈতিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা না দেয়া নিয়েও শি-র সমালোচনা কম হয়নি। তাইওয়ান নিয়েও তার নীতির প্রবল সমালোচনা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে শি একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির ঐতিহাসিক সাফল্যের কথা জানিয়েছেন এই রাষ্ট্রপ্রধান।

শি-র বয়স এখন ৬৮ বছর। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া তাকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কাজের মানুষ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, জিনপিংয়ের চিন্তার গভীরতা আছে। তিনি অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তিনি নতুন পথে যেতে ভয় পান না। তার চিন্তাভাবনা প্রগতিশীল এবং চীনকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

চীনে বন্দী সাংবাদিকের মুক্তি

দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের খবর প্রকাশ করার পর বন্দী সংবাদিক ঝ্যাং ঝানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। পাশাপাশি বন্দী অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানের গুরুতর অসুস্থতার খবর প্রকাশ হওয়ার পর চীনের প্রতি এই অনুরোধ জানাল যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বারবার তাকে স্বেচ্ছাচারী আটক ও তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। চীনের প্রতি তাকে দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানানোর কথাও জানান তিনি। জানা গেছে, চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ সংগ্রহে ছুটে গিয়েছিলেন সাংবাদিক ঝ্যাং। করোনার সংক্রমণ প্রথম প্রকাশ্যে এনে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন তিনি। কিভাবে সেখানে করোনায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সে ছবি তুলে ধরেছিলেন ঝ্যাং। আর সে কারণেই কারাগারে যেতে হয় তাকে। সেখানে অনশন ধর্মঘট করে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৩৮ বছর বয়সী সাংবাদিক ও সাবেক আইনজীবী ঝ্যাং ঝান।

২০২০ সালের মে মাসে আটক করার পর ডিসেম্বরে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা উস্কে দেয়ার জন্য তাকে চার বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ভিন্ন মত দমনের জন্যই তাকে এ দ- দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে কারাগারে বন্দি অবস্থায় প্রতিবাদ হিসেবে আমরণ অনশন শুরু করেন ঝ্যাং। এরই মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কেটে গেছে তার। শারীরিক অবস্থারও ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। তাকে জোর করে টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি বলে দাবি তার পরিবারের।

এর আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য চীনা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানায়। শুধু ঝ্যাং নয়, উহানের খবর প্রকাশ করতে যাওয়া আরও তিন সাংবাদিক চেন কুইশি, ফ্যাং বিন এবং লি জেহুয়াকেও আটক করেছিল বেইজিং।