পুরান ঢাকায় ফের আগুন

এবার মেলামাইনের গুদামে

পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি মেলামাইনের গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ নং মিটফোর্ড রোডের ১/২ যাদব নারায়ণ লেনের এস কে টাওয়ার নামের ৬ষ্ঠ তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। বাকি ফ্লোরগুলো ছিল আবাসিক। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট একযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশেই এস কে টাওয়ারের আগুনের খবরে ৯টি ইউনিট পাঠানো হয়। সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এস কে টাওয়ারের দ্বিতীয় তলা থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এসময় দ্বিতীয় তলায় থাকা লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় তলায়ও আগুন দেখা যায়। দুই ফ্লোরের লোকজন দৌঁড়ে নিচে নেমে আসে। ভবনের অন্যান্য ফ্লোরের লোকজনও যে যার মতো নিরাপদে নিচে নেমে আসতে থাকে। এসময় তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে কিছুক্ষণ পর তারা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও এর কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।

আগুনের খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের লালবাগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওপরের তলাগুলো ছিল আবাসিক। কয়েকটি পরিবার থাকত। তবে তারা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। দুটি ফ্লোরে কোন ধরণের কেমিক্যাল ছিল না। তবে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের কার্টন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওখান থেকেই যেকোনভাবে আগুনের সূত্রপাত। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ও কার্টন থাকায় প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এর কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছিল।

চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই এস কে টাওয়ারটি অবস্থিত। আগুনের খবরে আর মানুষের চিৎকারে সেখানে ছুটে যান ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা। এরপর খবর পেয়ে চকবাজার থানা পুলিশ ও পুলিশের ওই জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, আগুনের খবরে আশপাশের উৎসুক জনতা ভিড় করে। পুলিশ সদস্যরা তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার কাজ করছিল। তবে আগুনের ধোঁয়ায় কেউ কাছে যেতে পারছিল না। দমকল বাহিনীর ছিটানো পানির কারণে টাওয়ারের সামনে পানি জমে যায়। রাত সাড়ে ৮টার পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

সন্ধ্যা পৌণে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, এস কে টাওয়ারে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরপরই আমাদের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলা মেলামাইনের গোডাউন। সেখানে অনেক কার্টন ও প্লাস্টিক ছিল। আগুন তৃতীয় তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের টিম দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ আপাতত জানা যায়নি। এটি তদন্ত সাপেক্ষে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও পরে নিরুপণ করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে যাত্রাবাড়ির ধোলাইপাড়ে একটি গ্যারেজে আগুন লেগে ১৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভোরে আগুনের খবর পেয়ে ২টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি কন্ট্রোল রুম।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর শেখ আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন গ্যারেজে আগুন লাগে। এতে ২৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখা ছিল। তার মধ্যে ১৫টি পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, ফজরের নামাজের আগে এলাকার লোকজন ধোঁয়া দেখে। এরপর তারা গ্যারেজের তালা ভেঙে ঢুকে দেখে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়ে দ্রুত পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে এলাকাবাসী। ফায়ার সার্ভিস ১১টি অটোরিকশা উদ্ধার করে। বাকিগুলো পুড়ে যায়।

বুধবার, ১০ নভেম্বর ২০২১ , ২৫ কার্তিক ১৪২৮ ৪ রবিউস সানি ১৪৪৩

পুরান ঢাকায় ফের আগুন

এবার মেলামাইনের গুদামে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুরান ঢাকার চকবাজারে একটি মেলামাইনের গোডাউনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ নং মিটফোর্ড রোডের ১/২ যাদব নারায়ণ লেনের এস কে টাওয়ার নামের ৬ষ্ঠ তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। বাকি ফ্লোরগুলো ছিল আবাসিক। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট একযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার কর্মকর্তা দেওয়ান আজাদ জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশেই এস কে টাওয়ারের আগুনের খবরে ৯টি ইউনিট পাঠানো হয়। সন্ধ্যা পৌণে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এস কে টাওয়ারের দ্বিতীয় তলা থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এসময় দ্বিতীয় তলায় থাকা লোকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় তলায়ও আগুন দেখা যায়। দুই ফ্লোরের লোকজন দৌঁড়ে নিচে নেমে আসে। ভবনের অন্যান্য ফ্লোরের লোকজনও যে যার মতো নিরাপদে নিচে নেমে আসতে থাকে। এসময় তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে কিছুক্ষণ পর তারা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। ভবনটির দ্বিতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও এর কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ।

আগুনের খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের লালবাগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থলে ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওপরের তলাগুলো ছিল আবাসিক। কয়েকটি পরিবার থাকত। তবে তারা অক্ষত অবস্থায় নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। দুটি ফ্লোরে কোন ধরণের কেমিক্যাল ছিল না। তবে প্লাস্টিক ও মেলামাইনের কার্টন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওখান থেকেই যেকোনভাবে আগুনের সূত্রপাত। তিনি বলেন, প্লাস্টিক ও কার্টন থাকায় প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এর কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছিল।

চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই এস কে টাওয়ারটি অবস্থিত। আগুনের খবরে আর মানুষের চিৎকারে সেখানে ছুটে যান ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা। এরপর খবর পেয়ে চকবাজার থানা পুলিশ ও পুলিশের ওই জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, আগুনের খবরে আশপাশের উৎসুক জনতা ভিড় করে। পুলিশ সদস্যরা তাদের অন্যত্র সরিয়ে দেয়ার কাজ করছিল। তবে আগুনের ধোঁয়ায় কেউ কাছে যেতে পারছিল না। দমকল বাহিনীর ছিটানো পানির কারণে টাওয়ারের সামনে পানি জমে যায়। রাত সাড়ে ৮টার পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

সন্ধ্যা পৌণে ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, এস কে টাওয়ারে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরপরই আমাদের টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলা মেলামাইনের গোডাউন। সেখানে অনেক কার্টন ও প্লাস্টিক ছিল। আগুন তৃতীয় তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের টিম দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ আপাতত জানা যায়নি। এটি তদন্ত সাপেক্ষে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও পরে নিরুপণ করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে যাত্রাবাড়ির ধোলাইপাড়ে একটি গ্যারেজে আগুন লেগে ১৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ভোরে আগুনের খবর পেয়ে ২টি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ নিশ্চিত করতে পারেনি কন্ট্রোল রুম।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর শেখ আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন গ্যারেজে আগুন লাগে। এতে ২৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখা ছিল। তার মধ্যে ১৫টি পুড়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, ফজরের নামাজের আগে এলাকার লোকজন ধোঁয়া দেখে। এরপর তারা গ্যারেজের তালা ভেঙে ঢুকে দেখে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়ে দ্রুত পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে এলাকাবাসী। ফায়ার সার্ভিস ১১টি অটোরিকশা উদ্ধার করে। বাকিগুলো পুড়ে যায়।