হাওরে জীবাশ্ম জ্বালানির আদি বিকল্প গোবরশিল্প

গত ৩১ অক্টোবর থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় বসেছিল জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের একটি অন্যতম সিদ্ধান্ত হয়েছে পরিবেশ দূষণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিহার করা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রাধান্য বিস্তার করে আছে জীবাশ্ম জ্বালানি। বিশেষ করে বিদ্যুত প্রকল্প, কলকারখানা এবং যানবাহনের বাইরে রান্নার কাজেও প্রচুর পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে একটি অন্যতম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গোবরের তৈরি জৈব জ্বালানি উপকরণ। স্থানীয়ভাবে এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘গোবরের মুইট্টা’ আর ‘গোবরের চটা’। হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠে গোচারণ ভূমিতে শত শত গরু সারাদিন ঘাস খেয়ে বেড়ায়। এরা যে গোবর ত্যাগ করে, ছোট ছোট ছেলেমেয়রা এগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে। আবার বাড়িতেও গরুর পাল গোবর ত্যাগ করে। এসব কাঁচা গোবর পাটকাঠিতে জড়িয়ে লম্বাকৃতির মুইট্টা বানানো হয়। আবার পাতলা করে খড় বিছিয়ে তার ওপর কাঁচা গোবর ল্যাপ্টে দিয়ে বিশাল গোলাকৃতির চটা পিঠার মত তৈরি করা হয়। এগুলি রোদে শুকিয়ে ঘরে মজুদ করে রাখা হয়। আর দৈনন্দিন রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।হাওরে এই গোবরের জ্বালানি একটি কুটির শিল্পের রূপ নিয়েছে সেই আদিকাল থেকে, বলা যায় প্রাচীনকাল থেকে। এখন পরিবেশ সচেতনতার কারণে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার হলেও আগেকার দিনে গাছপালাই ছিল প্রধান জ্বালানি উপকরণ। কিন্তু হাওরাঞ্চলে গাছপালা খুবই কম থাকার কারণে সেখানে আদিকাল থেকেই গোবর ছিল একটি অন্যতম জ্বালানি উপকরণ। যে কারণে হাওরাঞ্চলে গোবরের জ্বালানি তৈরির ঐতিহ্য এক ধরনের কুটির শিল্পের রূপ নিয়েছে। আর সেই শিল্পের প্রধান কারিগর হচ্ছেন নারীরা। মূলত তারাই গোবর দিয়ে মুইট্টা আর চটা তৈরি করেন। এখন রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে গোবরকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের চর্চাও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ফলে সংগৃহীত পুরো গোবরটাই বলতে গেলে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

হাওরে জীবাশ্ম জ্বালানির আদি বিকল্প গোবরশিল্প

জেলা বার্তা পরিবেশক, কিশোরগঞ্জ

image

কিশোরগঞ্জ : হাওরে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে জনপ্রিয় গোবরের তৈরি মুইট্যা ও চটা শুকানো হচ্ছে রোদে -সংবাদ

গত ৩১ অক্টোবর থেকে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় বসেছিল জলবায়ু সম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের একটি অন্যতম সিদ্ধান্ত হয়েছে পরিবেশ দূষণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিহার করা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রাধান্য বিস্তার করে আছে জীবাশ্ম জ্বালানি। বিশেষ করে বিদ্যুত প্রকল্প, কলকারখানা এবং যানবাহনের বাইরে রান্নার কাজেও প্রচুর পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চলে একটি অন্যতম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে গোবরের তৈরি জৈব জ্বালানি উপকরণ। স্থানীয়ভাবে এগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘গোবরের মুইট্টা’ আর ‘গোবরের চটা’। হাওরের বিস্তীর্ণ মাঠে গোচারণ ভূমিতে শত শত গরু সারাদিন ঘাস খেয়ে বেড়ায়। এরা যে গোবর ত্যাগ করে, ছোট ছোট ছেলেমেয়রা এগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে। আবার বাড়িতেও গরুর পাল গোবর ত্যাগ করে। এসব কাঁচা গোবর পাটকাঠিতে জড়িয়ে লম্বাকৃতির মুইট্টা বানানো হয়। আবার পাতলা করে খড় বিছিয়ে তার ওপর কাঁচা গোবর ল্যাপ্টে দিয়ে বিশাল গোলাকৃতির চটা পিঠার মত তৈরি করা হয়। এগুলি রোদে শুকিয়ে ঘরে মজুদ করে রাখা হয়। আর দৈনন্দিন রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।হাওরে এই গোবরের জ্বালানি একটি কুটির শিল্পের রূপ নিয়েছে সেই আদিকাল থেকে, বলা যায় প্রাচীনকাল থেকে। এখন পরিবেশ সচেতনতার কারণে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রচারণা জোরদার হলেও আগেকার দিনে গাছপালাই ছিল প্রধান জ্বালানি উপকরণ। কিন্তু হাওরাঞ্চলে গাছপালা খুবই কম থাকার কারণে সেখানে আদিকাল থেকেই গোবর ছিল একটি অন্যতম জ্বালানি উপকরণ। যে কারণে হাওরাঞ্চলে গোবরের জ্বালানি তৈরির ঐতিহ্য এক ধরনের কুটির শিল্পের রূপ নিয়েছে। আর সেই শিল্পের প্রধান কারিগর হচ্ছেন নারীরা। মূলত তারাই গোবর দিয়ে মুইট্টা আর চটা তৈরি করেন। এখন রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে গোবরকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের চর্চাও আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ফলে সংগৃহীত পুরো গোবরটাই বলতে গেলে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে