মেয়াদ শেষের ৪ মাস পরও কাজ হয়নি চার প্রকল্পের!

প্রকল্প সভাপতিরা জানেন না কিছুই, শুধু স্বাক্ষর করেছেন

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অর্থবছরের মেয়াদ শেষ হলেও ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার ৪টি প্রকল্পের কাজই হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলা পরিষদের ভেতরে নেয়া এসব প্রকল্পের কোন কাজ চোখে পড়েনি। এসব কাজের বিষয়ে জানে না প্রকল্প সভাপতিরাও।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বদলগাছী উপজেলা পরিষদওয়ারী ৩য় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির ২২টি প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির ১৪টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে অনুমোদিত প্রকল্প (কাবিটা) কর্মসূচির ১৩ নম্বর প্রকল্প কার্ত্তিকাহার সরদার পাড়া পাকা রাস্তার ধারে জামে মসজিদের গর্ত ভরাট থেকে সংশোধন করে উপজেলা পরিষদের ভেতরে মাটি ভরাট ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯২০ টাকা।

অপরদিকে, ওই একই অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির অনুমোদিত ৩, ৫ ও ১৬ নম্বর প্রকল্প সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ৩ নম্বর ভাতশাইল ইটাকড়া বিউটির বাড়ির পাশে রাস্তায় প্যালাসাইডিং করার স্থলে উপজেলা পরিষদের বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় মাটি ভরাটে ৫০ হাজার টাকা, ৫ নম্বর প্রকল্প উপজেলা পরিষদের ভেতরে পানির ফোয়ারা নির্মাণের স্থলে উপজেলা পরিষদের ভেতরে ফোয়ারার পাম্প স্থাপনে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ ও ১৬ নম্বর প্রকল্প বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের চকগোপি ব্রিজ ও হাজিপুর দক্ষিণ মাঠের ব্রিজের মেরামত/সংস্করের স্থলে উপজেলা পরিষদের ফোয়ারার চারপাশে ইটসোলিংকরণ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এই ৪টি প্রকল্পের মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের গত জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার চার মাস পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে এ ৪টি প্রকল্পের কোন কাজই করা হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলা পরিষদের ভেতরে এসব প্রকল্পের কোন কাজ চোখে পড়েনি। কাজ সমন্ধে জানেনা উপজেলা পরিষদের ভেতরে বসবাসকারীরাও।

টিআর ৩, ৫ ও ১৬নং প্রকল্পের সভাপতি (পিআইসি) বদলগাছী সদর ইউপি ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আমিরুল ইসলাম ও ২নং ওয়ার্ডের রবিউল আওয়ালের সাথে কাজ না হওয়া বিষয়ে কথা বললে তারা বলেন, প্রকল্পের কাজ হয়েছে কিনা আমরা জানিনা। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহায়ক সুমন আমাদের কিছু কাগজ দিয়ে বলেন এটা ইউএনওর কাজ, তিনি নিজেই এই কাজগুলো করবেন আপনারা শুধু স্বাক্ষর করেন। ওই কাগজগুলোতে আমরা শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। কাজ হয়েছে কিনা আমরা জানি না।

কাবিটা প্রকল্পের সভাপতি (পিআইসি) বদলগাছী সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, পিআইও অফিসের অফিস সহায়ক সুমন আমাকে ডেকে বলছে ইউএনওর প্রকল্প, তিনি নিজে কাজ করবেন, আপনাকে স্বাক্ষর করতে বলেছে। তাই আমি স্বাক্ষর দিয়েছি। কাজ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহায়ক সুমন বলেন, আমি আফিসের একজন ছোট কর্মচারী। আমাকে শুধু ৪টি প্রকল্পের সভাপতিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে বলেছিলেন ইউএনও। তাই আমি শুধু স্বাক্ষর নিয়েছি। কাজ হয়েছে কিনা তা আমি জানিনা।

এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজলো প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ইউএনও উপজেলা পরিষদের ভেতরে প্রকল্পগুলো নিয়েছেন। কাজ এখনো হয়নি তিনি পরে কাজ করবেন।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, কিছু সমস্যার কারণে কাজটি করা হয়নি। কাজ না করে বিল উত্তোলন করলেন কেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ না হলে টাকা ফেরত পাঠানো হবে। মন্তব্য নেয়ার সময় তিনি একধিকবার প্রশ্ন করেন, আপনি এই প্রকল্পের তালিকা কোথায় পেলেন?

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

মেয়াদ শেষের ৪ মাস পরও কাজ হয়নি চার প্রকল্পের!

প্রকল্প সভাপতিরা জানেন না কিছুই, শুধু স্বাক্ষর করেছেন

প্রতিনিধি, বদলগাছী (নওগাঁ)

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় অর্থবছরের মেয়াদ শেষ হলেও ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার ৪টি প্রকল্পের কাজই হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলা পরিষদের ভেতরে নেয়া এসব প্রকল্পের কোন কাজ চোখে পড়েনি। এসব কাজের বিষয়ে জানে না প্রকল্প সভাপতিরাও।

জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বদলগাছী উপজেলা পরিষদওয়ারী ৩য় পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির ২২টি প্রকল্প ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির ১৪টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে অনুমোদিত প্রকল্প (কাবিটা) কর্মসূচির ১৩ নম্বর প্রকল্প কার্ত্তিকাহার সরদার পাড়া পাকা রাস্তার ধারে জামে মসজিদের গর্ত ভরাট থেকে সংশোধন করে উপজেলা পরিষদের ভেতরে মাটি ভরাট ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দের পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯২০ টাকা।

অপরদিকে, ওই একই অর্থবছরে টিআর কর্মসূচির অনুমোদিত ৩, ৫ ও ১৬ নম্বর প্রকল্প সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের ৩ নম্বর ভাতশাইল ইটাকড়া বিউটির বাড়ির পাশে রাস্তায় প্যালাসাইডিং করার স্থলে উপজেলা পরিষদের বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় মাটি ভরাটে ৫০ হাজার টাকা, ৫ নম্বর প্রকল্প উপজেলা পরিষদের ভেতরে পানির ফোয়ারা নির্মাণের স্থলে উপজেলা পরিষদের ভেতরে ফোয়ারার পাম্প স্থাপনে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ ও ১৬ নম্বর প্রকল্প বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের চকগোপি ব্রিজ ও হাজিপুর দক্ষিণ মাঠের ব্রিজের মেরামত/সংস্করের স্থলে উপজেলা পরিষদের ফোয়ারার চারপাশে ইটসোলিংকরণ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এই ৪টি প্রকল্পের মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরের গত জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার চার মাস পেরিয়ে গেলেও বাস্তবে এ ৪টি প্রকল্পের কোন কাজই করা হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলা পরিষদের ভেতরে এসব প্রকল্পের কোন কাজ চোখে পড়েনি। কাজ সমন্ধে জানেনা উপজেলা পরিষদের ভেতরে বসবাসকারীরাও।

টিআর ৩, ৫ ও ১৬নং প্রকল্পের সভাপতি (পিআইসি) বদলগাছী সদর ইউপি ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আমিরুল ইসলাম ও ২নং ওয়ার্ডের রবিউল আওয়ালের সাথে কাজ না হওয়া বিষয়ে কথা বললে তারা বলেন, প্রকল্পের কাজ হয়েছে কিনা আমরা জানিনা। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহায়ক সুমন আমাদের কিছু কাগজ দিয়ে বলেন এটা ইউএনওর কাজ, তিনি নিজেই এই কাজগুলো করবেন আপনারা শুধু স্বাক্ষর করেন। ওই কাগজগুলোতে আমরা শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। কাজ হয়েছে কিনা আমরা জানি না।

কাবিটা প্রকল্পের সভাপতি (পিআইসি) বদলগাছী সদর ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আজাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, পিআইও অফিসের অফিস সহায়ক সুমন আমাকে ডেকে বলছে ইউএনওর প্রকল্প, তিনি নিজে কাজ করবেন, আপনাকে স্বাক্ষর করতে বলেছে। তাই আমি স্বাক্ষর দিয়েছি। কাজ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহায়ক সুমন বলেন, আমি আফিসের একজন ছোট কর্মচারী। আমাকে শুধু ৪টি প্রকল্পের সভাপতিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিতে বলেছিলেন ইউএনও। তাই আমি শুধু স্বাক্ষর নিয়েছি। কাজ হয়েছে কিনা তা আমি জানিনা।

এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজলো প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ইউএনও উপজেলা পরিষদের ভেতরে প্রকল্পগুলো নিয়েছেন। কাজ এখনো হয়নি তিনি পরে কাজ করবেন।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, কিছু সমস্যার কারণে কাজটি করা হয়নি। কাজ না করে বিল উত্তোলন করলেন কেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজ না হলে টাকা ফেরত পাঠানো হবে। মন্তব্য নেয়ার সময় তিনি একধিকবার প্রশ্ন করেন, আপনি এই প্রকল্পের তালিকা কোথায় পেলেন?