আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

মরুঝড় তোলার অপেক্ষায় পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া

টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে হট ফেভারিটের মতোই খেলছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত অজেয় এই দলটার হাত ধরে পাকিস্তানের ঘরে দ্বিতীয়বারের মত টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তার আগে আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে উপমহাদেশীয় ক্রিকেট পরাশক্তিকে। বরাবরই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ানরা চলতি আসরে অবশ্য ধীরে ধীরে নিজেদের মেলে ধরেছে।

দুই দল এর আগেও টিÑ২০ বিশ্বকাপের সেমিতে পরস্পরের মোকাবিলা করেছে। ২০১০ সালের আসরে মাইকেল হাসির লড়াকু ইনিংসে ভর করে টানটান উত্তেজনার ম্যাচটা জিতেছিল অজিরা। পাকিস্তানের বর্তমান দলটা কিন্তু চাপের মুখেও জয় ছিনিয়ে আনার ক্ষমতা দেখিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে খেলতে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে পাকিস্তান। কেননা, ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে যাওয়া শ্রীলঙ্কান দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ঘরোয়া পাকিস্তান সুপার লীগসহ (পিএসএল) আন্তর্জাতিক হোম সিরিজগুলো তাদেরকে খেলতে হচ্ছে মরুভূমির বুকে। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের ‘হোম গ্রাউন্ড’। টিÑ২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাওয়া জয়টা পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়েছে অনেকগুণ। চলতি টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের মালিক বাবর আজমের (২৬৪রান) নেতৃত্বে টপ অর্ডার ছুটছে দুর্দান্ত গতিতে। পাঁচ ম্যাচে চারটা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো বাবর আজম অজিদের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করবেন নিঃসন্দেহে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিটও তাকে চটজলদি ছেঁটে ফেলতে চাইবে।

কোন কারণে টপ অর্ডারে দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ব্যর্থ হলেও ম্যাচ উইনিং ব্যাটার নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই পাকিস্তানের। মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে আছেন ‘ছক্কা হাঁকানোর মেশিন’ আসিফ আলী। এদের প্রত্যেকের ব্যাট থেকেই রান আসছে। এখন পর্যন্ত নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ব্যাটার ফখর জামান। তিনি নিজেকে খুঁজে পেলে তো সোনায় সোহাগা।

পাকিস্তানের বোলিং ইউনিটের দুই ফাস্ট বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হ্যারিস রউফ ধারাবাহিকভাবেই প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ওপর দাপট দেখিয়ে চলেছেন। আরেক পেসার হাসান আলী এখন পর্যন্ত নিজের ছায়া হয়ে থাকলেও অধিনায়ক বাবর আজমের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। তবে, অজি ব্যাটাররা সম্ভবত হাসান আলীর কোটার চার ওভারে রানের চাকায় গতি আনার সুযোগটা কাজে লাগাতে। আবার স্পিনের বিপক্ষে অজি ব্যাটারদের দুর্বলতা কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম নির্ভর করবেন দুই স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ ও শাদাব খানের ওপর।

২০১০ সালের আসরে রানার আপ অস্ট্রেলিয়ার ঘরে এখন পর্যন্ত ওঠেনি টিÑ২০ বিশ্বকাপের ট্রফি। তারা চলতি আসরে ঠিক সময়েই নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ইংল্যান্ডের কাছে আট উইকেটের পরাজয়টা বাদ দিলে অ্যারন ফিঞ্চ অ্যান্ড কোং দাপট দেখিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকানদের পেছনে ফেলে ঠাঁই করে নিয়েছে সেমিফাইনালে। অস্ট্রেলিয়ান পেস ব্যাটারির সঙ্গে লেগ স্পিনার এডাম জাম্পা ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিতই উইকেটের দেখা পাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই আরেক স্পিনার প্যাট কামিন্সও। দুই পেসার জস হেইজেলউড আর মিচেল স্টার্কের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিট বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দুই অল রাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শ দলের প্রয়োজনে ব্রেকথ্রু এনে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। স্কোয়াডে থাকা বাঁহাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করবেন না।

ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্মে ফেরাটা অস্ট্রেলিয়ান দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। বিশ্বকাপের বেশ আগে থেকেই টিÑ২০ ফরম্যাটে রান খরায় ভুগতে থাকা ওয়ার্নার নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন একটা ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ দুটো হাফ সেঞ্চরি হাঁকিয়ে। ওয়ার্নার ও ফিঞ্চের ওপেনিং জুটি যে কোন বোলিং ইউনিটকে তছনছ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ওয়ান ডাউন ব্যাটার মিচেল মার্শও আছেন ফর্মে। কোন কারণে ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটলে তা সামাল দিতে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ তো আছেনই। চলতি টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে এখনও ঝড় তোলা হয়নি ম্যাক্সওয়েলের। দলের আস্থার প্রতিদান দেয়ার সুযোগ এখন তার সামনে। শেষ পাঁচ ওভারে ঝড় তোলার জন্য অস্ট্রেলিয়ান দলের দুই ব্যাটার মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড সিদ্ধহস্ত।

দুবাইয়ের এই স্টেডিয়ামে পরে ব্যাটিংয়ে নামা দলেরই জয়েরপাল্লা ভারী। কাজেই টস পালন করবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সব মিলিয়ে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার তুমুল লড়াইয়ে মরুভূমির বুকে আজ অন্তত একটা ঝড় যে উঠতে যাচ্ছে, তার পূর্বাভাস দেয়া যেতেই পারে।

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

মরুঝড় তোলার অপেক্ষায় পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া

সংবাদ স্পোর্টস ডেস্ক

image

টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে হট ফেভারিটের মতোই খেলছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত অজেয় এই দলটার হাত ধরে পাকিস্তানের ঘরে দ্বিতীয়বারের মত টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তার আগে আজ বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে উপমহাদেশীয় ক্রিকেট পরাশক্তিকে। বরাবরই শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ানরা চলতি আসরে অবশ্য ধীরে ধীরে নিজেদের মেলে ধরেছে।

দুই দল এর আগেও টিÑ২০ বিশ্বকাপের সেমিতে পরস্পরের মোকাবিলা করেছে। ২০১০ সালের আসরে মাইকেল হাসির লড়াকু ইনিংসে ভর করে টানটান উত্তেজনার ম্যাচটা জিতেছিল অজিরা। পাকিস্তানের বর্তমান দলটা কিন্তু চাপের মুখেও জয় ছিনিয়ে আনার ক্ষমতা দেখিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে খেলতে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে পাকিস্তান। কেননা, ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে যাওয়া শ্রীলঙ্কান দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ঘরোয়া পাকিস্তান সুপার লীগসহ (পিএসএল) আন্তর্জাতিক হোম সিরিজগুলো তাদেরকে খেলতে হচ্ছে মরুভূমির বুকে। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের ‘হোম গ্রাউন্ড’। টিÑ২০ বিশ্বকাপের এবারের আসরে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাওয়া জয়টা পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা বাড়িয়েছে অনেকগুণ। চলতি টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের মালিক বাবর আজমের (২৬৪রান) নেতৃত্বে টপ অর্ডার ছুটছে দুর্দান্ত গতিতে। পাঁচ ম্যাচে চারটা হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো বাবর আজম অজিদের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করবেন নিঃসন্দেহে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিটও তাকে চটজলদি ছেঁটে ফেলতে চাইবে।

কোন কারণে টপ অর্ডারে দুই ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান ব্যর্থ হলেও ম্যাচ উইনিং ব্যাটার নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই পাকিস্তানের। মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে আছেন ‘ছক্কা হাঁকানোর মেশিন’ আসিফ আলী। এদের প্রত্যেকের ব্যাট থেকেই রান আসছে। এখন পর্যন্ত নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি ব্যাটার ফখর জামান। তিনি নিজেকে খুঁজে পেলে তো সোনায় সোহাগা।

পাকিস্তানের বোলিং ইউনিটের দুই ফাস্ট বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও হ্যারিস রউফ ধারাবাহিকভাবেই প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ওপর দাপট দেখিয়ে চলেছেন। আরেক পেসার হাসান আলী এখন পর্যন্ত নিজের ছায়া হয়ে থাকলেও অধিনায়ক বাবর আজমের সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। তবে, অজি ব্যাটাররা সম্ভবত হাসান আলীর কোটার চার ওভারে রানের চাকায় গতি আনার সুযোগটা কাজে লাগাতে। আবার স্পিনের বিপক্ষে অজি ব্যাটারদের দুর্বলতা কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবে পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম নির্ভর করবেন দুই স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজ ও শাদাব খানের ওপর।

২০১০ সালের আসরে রানার আপ অস্ট্রেলিয়ার ঘরে এখন পর্যন্ত ওঠেনি টিÑ২০ বিশ্বকাপের ট্রফি। তারা চলতি আসরে ঠিক সময়েই নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ইংল্যান্ডের কাছে আট উইকেটের পরাজয়টা বাদ দিলে অ্যারন ফিঞ্চ অ্যান্ড কোং দাপট দেখিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকানদের পেছনে ফেলে ঠাঁই করে নিয়েছে সেমিফাইনালে। অস্ট্রেলিয়ান পেস ব্যাটারির সঙ্গে লেগ স্পিনার এডাম জাম্পা ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিতই উইকেটের দেখা পাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই আরেক স্পিনার প্যাট কামিন্সও। দুই পেসার জস হেইজেলউড আর মিচেল স্টার্কের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিট বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। দুই অল রাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শ দলের প্রয়োজনে ব্রেকথ্রু এনে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। স্কোয়াডে থাকা বাঁহাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার সুযোগ পেলে তা হাতছাড়া করবেন না।

ডেভিড ওয়ার্নারের ফর্মে ফেরাটা অস্ট্রেলিয়ান দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে নিঃসন্দেহে। বিশ্বকাপের বেশ আগে থেকেই টিÑ২০ ফরম্যাটে রান খরায় ভুগতে থাকা ওয়ার্নার নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন একটা ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসসহ দুটো হাফ সেঞ্চরি হাঁকিয়ে। ওয়ার্নার ও ফিঞ্চের ওপেনিং জুটি যে কোন বোলিং ইউনিটকে তছনছ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ওয়ান ডাউন ব্যাটার মিচেল মার্শও আছেন ফর্মে। কোন কারণে ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটলে তা সামাল দিতে নির্ভরযোগ্য ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ তো আছেনই। চলতি টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে এখনও ঝড় তোলা হয়নি ম্যাক্সওয়েলের। দলের আস্থার প্রতিদান দেয়ার সুযোগ এখন তার সামনে। শেষ পাঁচ ওভারে ঝড় তোলার জন্য অস্ট্রেলিয়ান দলের দুই ব্যাটার মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড সিদ্ধহস্ত।

দুবাইয়ের এই স্টেডিয়ামে পরে ব্যাটিংয়ে নামা দলেরই জয়েরপাল্লা ভারী। কাজেই টস পালন করবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সব মিলিয়ে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার তুমুল লড়াইয়ে মরুভূমির বুকে আজ অন্তত একটা ঝড় যে উঠতে যাচ্ছে, তার পূর্বাভাস দেয়া যেতেই পারে।