এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকার লেনদেন এবং বিদেশে অর্থ পাচারেরও প্রমাণ মিলেছে দুদকের তদন্তে।
২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলার তদন্তে দুদক তার উল্লেখিত পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে। গতকাল এ মামলায় চার্জশিট আদালতে দাখিলের বিষয়টি অনুমোদন করেছে দুদক। চার্জশিটে পিকে হালদার ছাড়াও আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। যারা পিকে হালদারের ঘনিষ্ট। এর আগে এ মামলায় পিকে হালদারের সম্পদ আদালত কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হলে নিয়ন্ত্রণে নেয় দুদক।
দুদক জানিয়েছে, আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেন ও অবৈধ উপায়ে অর্জনপূর্বক এসটিআর, এলসিটিআর এবং ইএফটিআর-এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কানাডায় পাচারের অভিযোগে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে।
দুদক বলেছে, মামলায় প্রথমে শুধু প্রশান্ত কুমার হালদারকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরা হলেন- পিকের মা লিলাবতী হালদার, বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, ঘনিষ্ট শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, তার মেয়ে অনন্দিতা মৃধা, পূণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, সুমন কুমার মিস্ত্রি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক সালাউদ্দিন প্রতিবেদনে পিকের সঙ্গে ওই ১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করলে দুদক অনুমোদন করে। দুদক জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি, কাগুজে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৮টি হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮১ কোটি টাকা জমা ও ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন।
তার সহোদর আসামি প্রিতিশ কুমার হালদারসহ ১৩ জন আসামির পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত হয়ে কানাডায় অসংখ্য এসটিআর এলসিটিআর এবং ইএফটিআর এর মাধ্যমে এক কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকের বিরুদ্ধে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি করে ১০ হাজার টাকারও বেশি অর্থ ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার, দেশে থাকা সহযোগীদের হেফাজতে রাখাসহ নানা অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। এ পর্যন্ত এ জালিয়াতির ঘটনায় ১৫টির বেশি মামলা করেছে দুদক। যেসব মামলায় পিকে হালদার ছাড়াও তার বিভিন্ন সহযোগীরা আসামি হয়েছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পিকে হালদারকে আসামি করে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। ওই মামলার পর পিকে হালদারের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিল দুদক। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পিকে হালদার কৌশলে বেনাপোল সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে চলে যায়। পরে সেখান থেকে চলে যায় কানাডায়। বর্তমানে কানার টরোন্টোতে ব্যবসা করছে পিকে হালদার। ওই ঘটনার পর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া করে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নেয়ার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকার লেনদেন এবং বিদেশে অর্থ পাচারেরও প্রমাণ মিলেছে দুদকের তদন্তে।
২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলার তদন্তে দুদক তার উল্লেখিত পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে। গতকাল এ মামলায় চার্জশিট আদালতে দাখিলের বিষয়টি অনুমোদন করেছে দুদক। চার্জশিটে পিকে হালদার ছাড়াও আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। যারা পিকে হালদারের ঘনিষ্ট। এর আগে এ মামলায় পিকে হালদারের সম্পদ আদালত কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হলে নিয়ন্ত্রণে নেয় দুদক।
দুদক জানিয়েছে, আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেন ও অবৈধ উপায়ে অর্জনপূর্বক এসটিআর, এলসিটিআর এবং ইএফটিআর-এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ কানাডায় পাচারের অভিযোগে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে।
দুদক বলেছে, মামলায় প্রথমে শুধু প্রশান্ত কুমার হালদারকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরা হলেন- পিকের মা লিলাবতী হালদার, বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, ঘনিষ্ট শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা, তার মেয়ে অনন্দিতা মৃধা, পূণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায়, সুমন কুমার মিস্ত্রি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক সালাউদ্দিন প্রতিবেদনে পিকের সঙ্গে ওই ১৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করলে দুদক অনুমোদন করে। দুদক জানিয়েছে, প্রশান্ত কুমার হালদার নিজ নামে-বেনামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি, কাগুজে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৮টি হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮১ কোটি টাকা জমা ও ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন।
তার সহোদর আসামি প্রিতিশ কুমার হালদারসহ ১৩ জন আসামির পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত হয়ে কানাডায় অসংখ্য এসটিআর এলসিটিআর এবং ইএফটিআর এর মাধ্যমে এক কোটি ১৭ লাখ কানাডিয়ান ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকের বিরুদ্ধে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি করে ১০ হাজার টাকারও বেশি অর্থ ঋণের নামে হাতিয়ে নেয়া এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচার, দেশে থাকা সহযোগীদের হেফাজতে রাখাসহ নানা অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। এ পর্যন্ত এ জালিয়াতির ঘটনায় ১৫টির বেশি মামলা করেছে দুদক। যেসব মামলায় পিকে হালদার ছাড়াও তার বিভিন্ন সহযোগীরা আসামি হয়েছেন।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পিকে হালদারকে আসামি করে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। ওই মামলার পর পিকে হালদারের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছিল দুদক। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পিকে হালদার কৌশলে বেনাপোল সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে চলে যায়। পরে সেখান থেকে চলে যায় কানাডায়। বর্তমানে কানার টরোন্টোতে ব্যবসা করছে পিকে হালদার। ওই ঘটনার পর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেওলিয়া করে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নেয়ার অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়।