পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে টাকা নিচ্ছিল প্রতারক চক্র

গ্রেপ্তার ৩

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করে মফিজুল হক টুটুল। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা জানা মফিজুলের কাজ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের রুম ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেয়া কাগজপত্র পরিষ্কার করা। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট আবেদনের নথি সংগ্রহ করে দুই সহযোগীকে সরবরাহ করে মফিজুল। তার দুই সহযোগী মো. রাশেল হোসেন ইমন ও জুয়েল আহমেদ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবির) কর্মকর্তা সেজে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দ্রুত পৌঁছে দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে। যারা আবেদনকারী তারাও নানা ঝামেলা এড়াতে টাকা দিতে রাজি হয়ে যায়। এভাবে মফিজুল ইমন ও জুয়েল চক্র গত ৩ বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির বাদী ছিল পুলিশ। মামলাটি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। মামলায় বলা হয় একটি চক্র পুলিশ কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ চক্রটিকে শনাক্ত করে। অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকেই চক্রের মূল হোতা মফিজুল ইসলাম, ভুয়া এসআই মো. রাশেল হোসেন ইমন এবং জুয়েল আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রটির ৩ মাসের কর্মকাণ্ড অনুসন্ধান করে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাকিংএর মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও প্রমাণ মিলিছে। এছাড়া মিলেছে একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্টের আবেদনের সি্লপ। যেসব স্লিপ থেকে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারণা করতো চক্রটি। ধারণা করা হচ্ছে গত ৩ বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের কাছে শত শত পাসপোর্ট আবেদনের স্লিপ মিলিছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মফিজুল ঝাড়ুদার হলেও মো. জুয়েল হোসেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরেই দালালির কাজ করে। বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও পরিচয় দেয়। রাশেল হোসেন ইমন ছাত্র। তবে সেও জুয়েলের মতো পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দালালির কাজ করে। একই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ঝাড়–দার মফিজুলের সঙ্গে তাদের পরিচয় ও সখ্য তৈরি হয়। এরপর ৩ জনে মিলে প্রতারণার চক্র গড়ে তোলে।

অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার জানান, মফিজুল হক টুটুল দীর্ঘদিন ধরেই পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় আগারগাঁওয়ে ঝাড়ুদার হিসেবে চাকরি করে আসছিল। মাস্টাররোলে ঝাড়ুদারের কাজ করতে দিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দালাল হিসেবে কাজ করা জুয়েল আহমেদ ও মো. রাশেল হোসেন ইমনের সঙ্গে এরপর ৩ জনে মিলে প্রতারক বাহিনী গঠন করে।

গত ৩ বছরে পাসপোর্টের আবেদনকারী শত শত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাসপোর্ট দ্রুত সময়ে করে দেয়া, পাসপোর্টের আবেদনে সমস্যা আছে, কাগজপত্রে ভুল হয়েছে এসব নানা ধরনের কথা বলে টাকা চাইতো। আবেদনকারীদের কাছে ৫শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা চাইতো যাতে আবেদনকারীরাও দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা মনে করতো না। আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দিতো। আবেদনকারীরা পরে পাসপোর্ট পেতে নানা সমস্যায় পড়তেন।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, লেখাপড়া খুব বেশি না জানা মফিজুলের কাজ ছিল ঝুড়িতে ফেলে দেয়া পাসপোর্ট আবেদনকারীদের স্লিপগুলো সংগ্রহ করা। সংগ্রহের পর এসব স্লিপ মো. রাশেল হোসেন ইমন ও জুয়েলের কাছে দিতো মফিজুল। জুয়েল ও ইমন নিজেদের পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ (এসবির) এসআই পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছে ফোন করতো। ফোন করে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পাসপোর্টের আবেদনের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে টাকা দাবি করতো।

মফিজুল প্রতিটি স্লিপ বাবদ ৩ থেকে ৪শ করে টাকা পেতো ইমন ও জুয়েলের কাছ থেকে। ইমন ও জুয়েল সারাদেশ থেকে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের সি্লপ মফিজুলের কাছ থেকে পেতো তাদের ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে টাকা নিতো। বলতো আপনার পাসপোর্টের তদন্তটি আমার কাছে, আপনি আপনার নাম, ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠান। আর নানা সমস্যার কথা বলে আবেদনকারীদের আতঙ্কিত করতো। সমস্যা সমাধান করে দেয়ার কথা বলে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকাও নিতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, এ ৩ প্রতারক চক্র গত ৩ বছরে কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা আসতো। যেসব ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তারা টাকা নিতো পরবর্তীতের যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। যারা প্রতারিত হতো তারাও এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করতো না নানা ঝামেলা হওয়ার ভয়ে। চক্রে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

আরও খবর
ফরাসি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকায় শুরু প্রযুক্তি খাতের বিশ্ব সম্মেলন ‘ডব্লিউসিআইটি ২০২১’
শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে সারাদেশে এক নিয়ম, যশোরে ভিন্ন!
ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষ নিহত ৫
১০ স্কুল স্থাপন প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি মন্ত্রণালয় ও পিবিআই
প্রশ্নফাঁসে জড়িত ৫ জন গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে দুর্নীতি মামলায় পুলিশের এসআই কারাগারে
হয়রানির প্রতিবাদে দেশ-বিদেশে জনমত গঠনের সিদ্ধান্ত বিএনপির
ভর্তি পরীক্ষার চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল
নূর হোসেন দিবস পালিত
গুচ্ছ ভর্তি ফি বাতিলসহ ৩ দফা দাবি ছাত্র সংগঠনের

বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩

এসবির কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন

পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে টাকা নিচ্ছিল প্রতারক চক্র

গ্রেপ্তার ৩

সাইফ বাবলু

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করে মফিজুল হক টুটুল। ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা জানা মফিজুলের কাজ পাসপোর্ট অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের রুম ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেয়া কাগজপত্র পরিষ্কার করা। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট আবেদনের নথি সংগ্রহ করে দুই সহযোগীকে সরবরাহ করে মফিজুল। তার দুই সহযোগী মো. রাশেল হোসেন ইমন ও জুয়েল আহমেদ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবির) কর্মকর্তা সেজে আবেদনকারীদের পাসপোর্ট দ্রুত পৌঁছে দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে। যারা আবেদনকারী তারাও নানা ঝামেলা এড়াতে টাকা দিতে রাজি হয়ে যায়। এভাবে মফিজুল ইমন ও জুয়েল চক্র গত ৩ বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির বাদী ছিল পুলিশ। মামলাটি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। মামলায় বলা হয় একটি চক্র পুলিশ কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ চক্রটিকে শনাক্ত করে। অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকেই চক্রের মূল হোতা মফিজুল ইসলাম, ভুয়া এসআই মো. রাশেল হোসেন ইমন এবং জুয়েল আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চক্রটির ৩ মাসের কর্মকাণ্ড অনুসন্ধান করে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাকিংএর মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও প্রমাণ মিলিছে। এছাড়া মিলেছে একাধিক ব্যক্তির পাসপোর্টের আবেদনের সি্লপ। যেসব স্লিপ থেকে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রতারণা করতো চক্রটি। ধারণা করা হচ্ছে গত ৩ বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। চক্রের কাছে শত শত পাসপোর্ট আবেদনের স্লিপ মিলিছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মফিজুল ঝাড়ুদার হলেও মো. জুয়েল হোসেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরেই দালালির কাজ করে। বিভিন্ন ব্যক্তিদের পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও পরিচয় দেয়। রাশেল হোসেন ইমন ছাত্র। তবে সেও জুয়েলের মতো পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দালালির কাজ করে। একই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ঝাড়–দার মফিজুলের সঙ্গে তাদের পরিচয় ও সখ্য তৈরি হয়। এরপর ৩ জনে মিলে প্রতারণার চক্র গড়ে তোলে।

অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার জানান, মফিজুল হক টুটুল দীর্ঘদিন ধরেই পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় আগারগাঁওয়ে ঝাড়ুদার হিসেবে চাকরি করে আসছিল। মাস্টাররোলে ঝাড়ুদারের কাজ করতে দিয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দালাল হিসেবে কাজ করা জুয়েল আহমেদ ও মো. রাশেল হোসেন ইমনের সঙ্গে এরপর ৩ জনে মিলে প্রতারক বাহিনী গঠন করে।

গত ৩ বছরে পাসপোর্টের আবেদনকারী শত শত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাসপোর্ট দ্রুত সময়ে করে দেয়া, পাসপোর্টের আবেদনে সমস্যা আছে, কাগজপত্রে ভুল হয়েছে এসব নানা ধরনের কথা বলে টাকা চাইতো। আবেদনকারীদের কাছে ৫শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা চাইতো যাতে আবেদনকারীরাও দেয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা মনে করতো না। আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দিতো। আবেদনকারীরা পরে পাসপোর্ট পেতে নানা সমস্যায় পড়তেন।

ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, লেখাপড়া খুব বেশি না জানা মফিজুলের কাজ ছিল ঝুড়িতে ফেলে দেয়া পাসপোর্ট আবেদনকারীদের স্লিপগুলো সংগ্রহ করা। সংগ্রহের পর এসব স্লিপ মো. রাশেল হোসেন ইমন ও জুয়েলের কাছে দিতো মফিজুল। জুয়েল ও ইমন নিজেদের পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ (এসবির) এসআই পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছে ফোন করতো। ফোন করে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পাসপোর্টের আবেদনের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে টাকা দাবি করতো।

মফিজুল প্রতিটি স্লিপ বাবদ ৩ থেকে ৪শ করে টাকা পেতো ইমন ও জুয়েলের কাছ থেকে। ইমন ও জুয়েল সারাদেশ থেকে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের সি্লপ মফিজুলের কাছ থেকে পেতো তাদের ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে টাকা নিতো। বলতো আপনার পাসপোর্টের তদন্তটি আমার কাছে, আপনি আপনার নাম, ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠান। আর নানা সমস্যার কথা বলে আবেদনকারীদের আতঙ্কিত করতো। সমস্যা সমাধান করে দেয়ার কথা বলে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকাও নিতো।

তদন্তকারীরা বলছেন, এ ৩ প্রতারক চক্র গত ৩ বছরে কি পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা আসতো। যেসব ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তারা টাকা নিতো পরবর্তীতের যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। যারা প্রতারিত হতো তারাও এ বিষয়ে কোন অভিযোগ করতো না নানা ঝামেলা হওয়ার ভয়ে। চক্রে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।