প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘বি’ ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন মহিউদ্দিন তাজবীর। গত ২০ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিটের প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৬৯.৫০ নাম্বার পান এ শিক্ষার্থী। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তাজবীরের জিপিএ ছিল যথাক্রমে ৪.২৮ এবং ৪.৩৩। বিগত দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পাওয়া ৮৫ নাম্বার নিয়ে তাজবীরের সর্বমোট নাম্বার দাঁড়াচ্ছে ১৫৫ এর কাছাকাছি। অন্যদিকে এসএসসির জিপিএ-৫ অনুযায়ী অটোপাশের মাধ্যমে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তাজবীরের চেয়ে ১৫ নাম্বার কম পেয়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করে পছন্দের বিষয় পেতে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা শুরু করেছে। গতকাল ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী পছন্দের বিষয়ের জন্য আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত দিনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফলের ওপর ২৮ নাম্বার রাখা হলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে যা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টোটাল নাম্বারের সমান। আর এতেই বেধেছে আপত্তি। এসএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারাই অটোপাসের মাধ্যমে এবারের এইচএসসিতে সমপরিমাণ ফলাফল করেছে।
এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাসের বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিগত দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল থেকে ২০ শতাংশ করে রেখেছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ও গুচ্ছভুক্ত বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আলাদা নাম্বারই রাখেনি। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসিতে যথাক্রমে ৪০ এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে দেয়া অটোপাসের এইচএসসিতে ৬০ নাম্বার রেখেছে। বলা চলে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলের ওপরই এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নির্ভর করছে।
ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অনেকের এসএসসিতে একটু খারাপ ফলাফল হওয়ায় এইচএসসিতে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু করোনার কারণে এইচএসসিতে আটোপাস দেয়ায় এইচএসসিতে ভালো ফলাফল আসেনি। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেও জিপিএ এর এই অযৌক্তিক ১০০ নাম্বারের শর্তের জন্য আমাদের অনেকের আশা নিরাশায় পরিণত হবে। এসএসসি আর এইচএসসির জিপিএ যদি ভর্তি পরীক্ষার নাম্বারের চেয়ে বেশি মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই পরীক্ষার কি অর্থ? আমাদের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার তো কোন মূল্যই রইলো না। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার নাম্বার ভর্তি পরীক্ষার নাম্বারের সমপরিমাণ রাখায় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেয়েও অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
মোহাম্মদ ফয়সাল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৬১ পেয়েছি, কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল মিলিয়ে আমার টোটাল থাকছে ১৩৭ নাম্বার। এসএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা আটোপ্রমোশনে এইচএসসি জিপিএ-৫ পাওয়ার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৪০ নাম্বার পেয়েও তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।
এদিকে শুরুতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি চূড়ান্ত ভর্তি আবেদন ফি হিসেবে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করলেও পরে ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাঝপথে আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি বাবদ ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। সে হিসেবে কেউ গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি ইউনিটে শুধু আবেদন করলে তাকে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা গুনতে হবে। এর আগে স্বাভাবিক নিয়মে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় ৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা নেয়া হতো এবং ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী ইউনিটে আবেদনের জন্য কোন খরচ হতো না। শিক্ষার্থীরা এ ‘ফি’কে তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী ফি নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। এই ফি-কে ‘অযৌক্তিক’ বলে তা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, এটা আমার কোন একক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ডিনদের নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১ , ২৬ কার্তিক ১৪২৮ ৫ রবিউস সানি ১৪৪৩
মাহমুদ তানজীদ, জবি
প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ‘বি’ ইউনিট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন মহিউদ্দিন তাজবীর। গত ২০ অক্টোবর ‘বি’ ইউনিটের প্রকাশিত ফলাফলে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৬৯.৫০ নাম্বার পান এ শিক্ষার্থী। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তাজবীরের জিপিএ ছিল যথাক্রমে ৪.২৮ এবং ৪.৩৩। বিগত দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পাওয়া ৮৫ নাম্বার নিয়ে তাজবীরের সর্বমোট নাম্বার দাঁড়াচ্ছে ১৫৫ এর কাছাকাছি। অন্যদিকে এসএসসির জিপিএ-৫ অনুযায়ী অটোপাশের মাধ্যমে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তাজবীরের চেয়ে ১৫ নাম্বার কম পেয়ে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি দৌড়ে তার চেয়ে এগিয়ে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করে পছন্দের বিষয় পেতে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা শুরু করেছে। গতকাল ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী পছন্দের বিষয়ের জন্য আবেদনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিগত দিনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফলের ওপর ২৮ নাম্বার রাখা হলেও এবার তা বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে যা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টোটাল নাম্বারের সমান। আর এতেই বেধেছে আপত্তি। এসএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারাই অটোপাসের মাধ্যমে এবারের এইচএসসিতে সমপরিমাণ ফলাফল করেছে।
এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাসের বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিগত দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল থেকে ২০ শতাংশ করে রেখেছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ও গুচ্ছভুক্ত বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আলাদা নাম্বারই রাখেনি। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসিতে যথাক্রমে ৪০ এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে দেয়া অটোপাসের এইচএসসিতে ৬০ নাম্বার রেখেছে। বলা চলে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলের ওপরই এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নির্ভর করছে।
ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অনেকের এসএসসিতে একটু খারাপ ফলাফল হওয়ায় এইচএসসিতে ভালোভাবে পড়াশোনা করেছে। কিন্তু করোনার কারণে এইচএসসিতে আটোপাস দেয়ায় এইচএসসিতে ভালো ফলাফল আসেনি। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেও জিপিএ এর এই অযৌক্তিক ১০০ নাম্বারের শর্তের জন্য আমাদের অনেকের আশা নিরাশায় পরিণত হবে। এসএসসি আর এইচএসসির জিপিএ যদি ভর্তি পরীক্ষার নাম্বারের চেয়ে বেশি মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই পরীক্ষার কি অর্থ? আমাদের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার তো কোন মূল্যই রইলো না। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার নাম্বার ভর্তি পরীক্ষার নাম্বারের সমপরিমাণ রাখায় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো নাম্বার পেয়েও অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
মোহাম্মদ ফয়সাল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষায় আমি ৬১ পেয়েছি, কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল মিলিয়ে আমার টোটাল থাকছে ১৩৭ নাম্বার। এসএসসিতে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা আটোপ্রমোশনে এইচএসসি জিপিএ-৫ পাওয়ার কারণে ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৪০ নাম্বার পেয়েও তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে।
এদিকে শুরুতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি চূড়ান্ত ভর্তি আবেদন ফি হিসেবে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করলেও পরে ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মাঝপথে আবেদন ফি ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ইউনিটে আবেদন ফি বাবদ ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। সে হিসেবে কেউ গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি ইউনিটে শুধু আবেদন করলে তাকে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা গুনতে হবে। এর আগে স্বাভাবিক নিয়মে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় ৫০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা নেয়া হতো এবং ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী ইউনিটে আবেদনের জন্য কোন খরচ হতো না। শিক্ষার্থীরা এ ‘ফি’কে তাদের উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় ভর্তি পরীক্ষা পরবর্তী ফি নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। এই ফি-কে ‘অযৌক্তিক’ বলে তা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, এটা আমার কোন একক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় ডিনদের নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি মিটিং করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।