বাংলাদেশ-ফ্রান্স তিন চুক্তি সই

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদে পদক্ষেপ নিতে ফ্রান্সের প্রতি আহবান

করোনা ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিমান চলাচল খাতে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াতে ফ্রান্সের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। প্যারিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান সফরে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা।

পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি চুক্তির আওতায় করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় বাজেট সহায়তা হিসেবে ২০ কোটি ইউরো দেবে এজেন্সি ফ্রান্স ডেভলোপমেন্ট (এএফডি)।’ এছাড়া ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পে ফ্রান্স নতুন করে ১৩ কোটি ইউরো দেবে। চলমান এ প্রকল্পে আগে ৩ কোটি ইউরো দিয়েছিল দেশটি।

ফাতিমা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘অর্থাৎ আজকে আমরা স্বাক্ষর করলাম ৩৩০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি। এখন পর্যন্ত যে সহায়তা আমরা (ফ্রান্সের কাছ থেকে) পেয়েছি, সেটা ছিল ৮০০ মিলিয়ন ইউরো। এটা যোগ হওয়ার পরে আমাদের সহায়তা ১ বিলিয়ন ইউরো অতিক্রম করলো।’

ইআরডি সচিব বলেন, ‘ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে ২০১২ সাল থেকে। গত তিন বছরে বাংলাদেশের জন্য তাদের সহায়তার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ফ্রান্সের এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক (এশিয়া) ফিলোপে অরলিঁয়ে দুই দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

এছাড়া বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ফ্রান্স সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা বাড়াতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা মূলত এভিয়েশন সেন্টারে নলেজ শেয়ারিং এবং ট্রেইনিং বিষয়ক যে সহযোগিতা, সেটাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তার সঙ্গে আমরা যৌথভাবে এভিয়েশন সেফটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জয়েন্ট ইভেন্ট আয়োজন করতে পারব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ হওয়ায় এই পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, করোনা ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিমান চলাচল খাতে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াতে ফ্রান্সের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।

গত বুধবার প্যারিসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে এই আহ্বান জানানো হয়।’ এ ব্যাপারে ফ্রান্স আশ্বাস দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে ফ্রান্সের নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। মোমেন বলেন, ‘ফ্রান্সের সব নেতার সঙ্গে বিশেষকরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের নেতাদের অবহিত করা হয় যে, বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রি-পক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমন কি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিটি) গিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘মায়ানমার এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং এর সমাধানও তাদের হাতে রয়েছে।’ মায়ানমারের সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান ইস্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ মায়ানমারের সামরিক জান্তা শাসকদের সঙ্গে সরাসরি কোন আলোচনা করেনি।’ মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের নেতাদের বলেছি, পশ্চিমা বিশ্ব মায়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রশ্ন, সামরিক সরকার চলাকালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য সংলাপের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে কি-না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি যে ১৯৭০ ও ১৯৯০ এর দশকে মায়ানমারে সামরিক সরকার ছিল। কিন্তু ওই সময় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেছে।’

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯২ সালে প্রায় দুই লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে এবং তাদের মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার জনকে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৯৭০’র দশকেও একই কাজ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সকে বলেছি যে, গত চার বছর ধরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে কোন সংঘাত ঘটেনি। এখানে কোন সহিংসতা হয়নি। কাজেই, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর এখন উপযুক্ত সময়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করেছে যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সু-সম্পর্ক রয়েছে।’

মোমেন আরও বলেন, ‘মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সম্মত আছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মর্যাদা সহকারে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারেও তারা রাজি রয়েছে। তবে তারা কোন কিছু বাস্তবায়ন করছে না। আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলেছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের নেতারা বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে আসিয়ানকে কিছু জানানো হয়েছে কি-না।’ তিনি বলেন,‘আমরা উত্তরে বলেছি-অবশ্যই, আমরা আসিয়ানকে জানিয়েছি। ফ্রান্স বলেছে, তারা আসিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা আসিয়ানকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে আসিয়ানের ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সংস্থাটি কোন সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোন কিছু বলতে পারে না।’

ড. মোমেন আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এই ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের নেতাদের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।’

image

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক -বাসস

আরও খবর
তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সজাগ থাকতে হবে : রাষ্ট্রপতি
প্রতিশ্রুত তহবিলের খসড়ায় পথরেখা না থাকায় টিআইবির উদ্বেগ
অ্যাপসায় বাজিমাত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ও বাঁধন
বকশিশ লোভী সেই হাসপাতাল কর্মচারী আসাদুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক, বললেন সচিব
জামায়াত নেতা খালেকসহ দু’জনের রায় যে কোনদিন
জড়িত আরও ৩ জন গ্রেপ্তার, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত
ঢাকায় স্কুলে ভর্তি শুরু ২৫ নভেম্বর
এবারও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ যোগী আদিত্যনাথ, কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা
বিষেভরা ‘বিষমুক্ত’ সবজি
নষ্ট রাজনীতির হোতা বিএনপি : সেতুমন্ত্রী
বিএনপির পঞ্চাশোর্ধ্ব বেশিরভাগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা : ফখরুল

শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১ , ২৭ কার্তিক ১৪২৮ ৬ রবিউস সানি ১৪৪৩

বাংলাদেশ-ফ্রান্স তিন চুক্তি সই

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদে পদক্ষেপ নিতে ফ্রান্সের প্রতি আহবান

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে সালাম জুবায়ের

image

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক -বাসস

করোনা ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিমান চলাচল খাতে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াতে ফ্রান্সের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। প্যারিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান সফরে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা।

পরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি চুক্তির আওতায় করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় বাজেট সহায়তা হিসেবে ২০ কোটি ইউরো দেবে এজেন্সি ফ্রান্স ডেভলোপমেন্ট (এএফডি)।’ এছাড়া ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্পে ফ্রান্স নতুন করে ১৩ কোটি ইউরো দেবে। চলমান এ প্রকল্পে আগে ৩ কোটি ইউরো দিয়েছিল দেশটি।

ফাতিমা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘অর্থাৎ আজকে আমরা স্বাক্ষর করলাম ৩৩০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি। এখন পর্যন্ত যে সহায়তা আমরা (ফ্রান্সের কাছ থেকে) পেয়েছি, সেটা ছিল ৮০০ মিলিয়ন ইউরো। এটা যোগ হওয়ার পরে আমাদের সহায়তা ১ বিলিয়ন ইউরো অতিক্রম করলো।’

ইআরডি সচিব বলেন, ‘ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে ২০১২ সাল থেকে। গত তিন বছরে বাংলাদেশের জন্য তাদের সহায়তার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।’

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ফ্রান্সের এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক (এশিয়া) ফিলোপে অরলিঁয়ে দুই দেশের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

এছাড়া বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং ফ্রান্স সিভিল এভিয়েশন অথরিটির মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা বাড়াতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা মূলত এভিয়েশন সেন্টারে নলেজ শেয়ারিং এবং ট্রেইনিং বিষয়ক যে সহযোগিতা, সেটাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তার সঙ্গে আমরা যৌথভাবে এভিয়েশন সেফটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জয়েন্ট ইভেন্ট আয়োজন করতে পারব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ হওয়ায় এই পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ফ্রান্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, করোনা ব্যবস্থাপনা, পানি ও বিমান চলাচল খাতে আর্থিক সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়াতে ফ্রান্সের সঙ্গে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।

গত বুধবার প্যারিসে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে এই আহ্বান জানানো হয়।’ এ ব্যাপারে ফ্রান্স আশ্বাস দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার আলোচনা চলাকালে ফ্রান্সের নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমরা আন্তরিকভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকবো।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখন ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। মোমেন বলেন, ‘ফ্রান্সের সব নেতার সঙ্গে বিশেষকরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালে রোহিঙ্গা ইস্যুর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের নেতাদের অবহিত করা হয় যে, বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয়, ত্রি-পক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমন কি আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিটি) গিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘মায়ানমার এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং এর সমাধানও তাদের হাতে রয়েছে।’ মায়ানমারের সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থান ইস্যুর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ মায়ানমারের সামরিক জান্তা শাসকদের সঙ্গে সরাসরি কোন আলোচনা করেনি।’ মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের নেতাদের বলেছি, পশ্চিমা বিশ্ব মায়ানমারের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তারা মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে ফ্রান্সের প্রশ্ন, সামরিক সরকার চলাকালে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য সংলাপের ব্যাপারে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে কি-না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি যে ১৯৭০ ও ১৯৯০ এর দশকে মায়ানমারে সামরিক সরকার ছিল। কিন্তু ওই সময় তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করেছে।’

এই প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯২ সালে প্রায় দুই লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে এবং তাদের মধ্যে দুই লাখ ৩৬ হাজার জনকে সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয় এবং ১৯৭০’র দশকেও একই কাজ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সকে বলেছি যে, গত চার বছর ধরে দেশটির রাখাইন রাজ্যে কোন সংঘাত ঘটেনি। এখানে কোন সহিংসতা হয়নি। কাজেই, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর এখন উপযুক্ত সময়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফ্রান্সের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করেছে যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সু-সম্পর্ক রয়েছে।’

মোমেন আরও বলেন, ‘মায়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সম্মত আছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মর্যাদা সহকারে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির ব্যাপারেও তারা রাজি রয়েছে। তবে তারা কোন কিছু বাস্তবায়ন করছে না। আমরা আমাদের কষ্টের কথা বলেছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রান্সের নেতারা বাংলাদেশের কাছে জানতে চেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে আসিয়ানকে কিছু জানানো হয়েছে কি-না।’ তিনি বলেন,‘আমরা উত্তরে বলেছি-অবশ্যই, আমরা আসিয়ানকে জানিয়েছি। ফ্রান্স বলেছে, তারা আসিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা আসিয়ানকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে আসিয়ানের ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সংস্থাটি কোন সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কোন কিছু বলতে পারে না।’

ড. মোমেন আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফ্রান্সের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এই ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ফ্রান্সের নেতাদের পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।’