হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন চাষিরা
যশোরের কৃষি বিভাগ ঘোষিত বিষমুক্ত ইউনিয়ন লেবুতলার সবজি এখন বিষেভরা। বিষমুক্ত প্রকল্প ঘোষণা করেই কৃষি বিভাগ খালাস। তারা এখন কৃষকের পাশে নেই। পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে সবজিতে বিষ ব্যবহার করছে।
পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলী হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আচ্ছা কনতো, আমার এই ৫০ হাজার টাকা এখন কিডা দেবে। ক্ষেতের সব কোপিতি পুকা লেগে গেছে। পাতা ফুটো হয়ে যাচ্ছে। বিষ তেল দিচ্ছি। কিন্তু তেলের কোন ‘মর্যাদা’ নেই। কোন কাজ হচ্ছে না। কেউ কচ্ছেও না কি করলি এই পুকা যাবে।’
তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে সবজির চাষ করেছেন। কিন্তু পোকায় কেটে তাকে ‘জেরবার’ করে ছেড়েছে। বাধা কপি, ফুল কপি, পালং ও লালশাকসহ মাঠের সব ফসল এখন পোকায় একাকার। ক্ষতিকর এই কীট দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে দায়িত্বশীল এমন কেউ পাশে নেই তাদের।
এই দুঃসময়ে ভরসা একমাত্র কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের পরামর্শেই পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ করছে তারা। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না।
সবজি চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লাল শাকে সকালে পুকা লাগলি বিকেলে শেষ। ওষুধ না মারলি পুকা কোন টাইম দেয় না। তিনি গালাগাল ছুড়ে দিয়ে বলেন, যারা কয় এই গিরাম বিষমুক্ত তারা ভ-, মিথ্যুক।’ এই চাষি তার বাধা কপি ক্ষেতে নিয়ে দেখান, পোকা লেগে কপির পাতায় বহু ছিদ্র। তিনি জানান, কপির মাথায় ফুল আসলে পোকার আক্রমণ শুরু হচ্ছে। ফলে ফুল কপি আর বাড়ছে না। বাড়লে সেই কপি ভালো হয় না। বাজারে দাম মেলে না। পোকা লেগে একই দশা বাধা কপিরও। লেবুতলার বীরনারায়ণপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ফুল কপি, বাধা কপি, লাল, পালং, পুইশাক, পটলসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ চলছে। মাঠ জোড়া সেই সবজির কেউ পরিচর্যা করছেন, কেউবা কন্টেইনার কাঁধে ঝুলিয়ে সবজিতে বিষ স্প্রে করছেন। অথচ এক বছর আগে এখানকার সবজি চাষিরা কীটনাশকের ব্যবহার ছেড়ে দেন। পোকামাকড় ঠেকাতে বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতির সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ও জাল ব্যবহার শুরু করেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে ভার্মি কম্পোস্টে ঝুঁকে পড়েন। যার কারণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) মডেল ঘোষণা করা হয় লেবুতলা ইউনিয়নকে।
কিন্তু কৃষি বিভাগের সঙ্গে কৃষকদের যোগাযোগ কমে যাওয়ায় সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ইউনিয়নটিতে সবজি ক্ষেতগুলোয় দেদারছে কীটনাশক ব্যবহার চলছে। এখানকার ফসলের মাঠে গেলে যত্রতত্র কীটনাশকের প্যাকেট ও বোতল চোখে পড়ে। চাষিদের কাঁধে কন্টেইনার বাঁধিয়ে সবজিতে কীটনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়।
আবদুল মান্নান নামে আরেক সবজি চাষি বলেন, ‘ভূঁইতে পুকা মানা যাচ্ছে না। বিষ তেল মারেই যাচ্ছি কিন্তু তাতেও যাচ্ছে না। পুকা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। কোন কৃষি সুপারভাইজারও আইসতেছে না পরামর্শ দিতি।’ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে বুধবার সকালে ২ বার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিন বিকেলে অফিস চলাকালীন সময়ে কল করলে রিসিভ করে নামাজে আছি জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস জানান, শীতকালীন সবজির আগাম চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এজন্য বালাইনাশক একটু বেশি দরকার পড়ে। পুরোপুরি শীত শুরু হলে পোকার সংক্রমণ কমে আসবে।
শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১ , ২৭ কার্তিক ১৪২৮ ৬ রবিউস সানি ১৪৪৩
হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন চাষিরা
রুকুনউদ্দৌলাহ, যশোর
যশোরের কৃষি বিভাগ ঘোষিত বিষমুক্ত ইউনিয়ন লেবুতলার সবজি এখন বিষেভরা। বিষমুক্ত প্রকল্প ঘোষণা করেই কৃষি বিভাগ খালাস। তারা এখন কৃষকের পাশে নেই। পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে সবজিতে বিষ ব্যবহার করছে।
পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলী হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আচ্ছা কনতো, আমার এই ৫০ হাজার টাকা এখন কিডা দেবে। ক্ষেতের সব কোপিতি পুকা লেগে গেছে। পাতা ফুটো হয়ে যাচ্ছে। বিষ তেল দিচ্ছি। কিন্তু তেলের কোন ‘মর্যাদা’ নেই। কোন কাজ হচ্ছে না। কেউ কচ্ছেও না কি করলি এই পুকা যাবে।’
তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে সবজির চাষ করেছেন। কিন্তু পোকায় কেটে তাকে ‘জেরবার’ করে ছেড়েছে। বাধা কপি, ফুল কপি, পালং ও লালশাকসহ মাঠের সব ফসল এখন পোকায় একাকার। ক্ষতিকর এই কীট দমনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে দায়িত্বশীল এমন কেউ পাশে নেই তাদের।
এই দুঃসময়ে ভরসা একমাত্র কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তাদের পরামর্শেই পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ করছে তারা। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না।
সবজি চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লাল শাকে সকালে পুকা লাগলি বিকেলে শেষ। ওষুধ না মারলি পুকা কোন টাইম দেয় না। তিনি গালাগাল ছুড়ে দিয়ে বলেন, যারা কয় এই গিরাম বিষমুক্ত তারা ভ-, মিথ্যুক।’ এই চাষি তার বাধা কপি ক্ষেতে নিয়ে দেখান, পোকা লেগে কপির পাতায় বহু ছিদ্র। তিনি জানান, কপির মাথায় ফুল আসলে পোকার আক্রমণ শুরু হচ্ছে। ফলে ফুল কপি আর বাড়ছে না। বাড়লে সেই কপি ভালো হয় না। বাজারে দাম মেলে না। পোকা লেগে একই দশা বাধা কপিরও। লেবুতলার বীরনারায়ণপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ফুল কপি, বাধা কপি, লাল, পালং, পুইশাক, পটলসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ চলছে। মাঠ জোড়া সেই সবজির কেউ পরিচর্যা করছেন, কেউবা কন্টেইনার কাঁধে ঝুলিয়ে সবজিতে বিষ স্প্রে করছেন। অথচ এক বছর আগে এখানকার সবজি চাষিরা কীটনাশকের ব্যবহার ছেড়ে দেন। পোকামাকড় ঠেকাতে বিকল্প হিসেবে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতির সেক্স ফেরোমোন ফাঁদ ও জাল ব্যবহার শুরু করেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে ভার্মি কম্পোস্টে ঝুঁকে পড়েন। যার কারণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার (আইপিএম) মডেল ঘোষণা করা হয় লেবুতলা ইউনিয়নকে।
কিন্তু কৃষি বিভাগের সঙ্গে কৃষকদের যোগাযোগ কমে যাওয়ায় সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ইউনিয়নটিতে সবজি ক্ষেতগুলোয় দেদারছে কীটনাশক ব্যবহার চলছে। এখানকার ফসলের মাঠে গেলে যত্রতত্র কীটনাশকের প্যাকেট ও বোতল চোখে পড়ে। চাষিদের কাঁধে কন্টেইনার বাঁধিয়ে সবজিতে কীটনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়।
আবদুল মান্নান নামে আরেক সবজি চাষি বলেন, ‘ভূঁইতে পুকা মানা যাচ্ছে না। বিষ তেল মারেই যাচ্ছি কিন্তু তাতেও যাচ্ছে না। পুকা নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। কোন কৃষি সুপারভাইজারও আইসতেছে না পরামর্শ দিতি।’ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে বুধবার সকালে ২ বার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এদিন বিকেলে অফিস চলাকালীন সময়ে কল করলে রিসিভ করে নামাজে আছি জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস জানান, শীতকালীন সবজির আগাম চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এজন্য বালাইনাশক একটু বেশি দরকার পড়ে। পুরোপুরি শীত শুরু হলে পোকার সংক্রমণ কমে আসবে।