বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা

চলতি মৌসুমটি বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও বাণিজ্যের মৌসুম হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে গম ও চালের বাণিজ্য রেকর্ড পরিমাণ বাড়বে। সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড ফুড সিচুয়েশন শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ও বাণিজ্য রেকর্ড গড়ার পথে। তবে মজুদ প্রায় ৬০ লাখ টনেরও বেশি কমতে পারে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম এক দশকের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগী সরকারগুলো। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিবর্তে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্যে লাগাম টেনে ধরতে নানা পলিসি গ্রহণের উদ্বেগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

এফএওর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ২৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। আগের মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২৭৭ কোটি ১৯ লাখ টন। সে হিসেবে উৎপাদন বাড়লে তা প্রত্যাশার তুলনায় ৬৭ লাখ টন কম। এদিকে সরবরাহ দাঁড়াবে ৩৬১ কোটি ৮৮ লাখ টনে। আগের মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৩৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টন খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়েছিল।

সংস্থাটি বলছে, চলতি মৌসুমে উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে। ফলে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এ সময় খাদ্যশস্য ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮১ কোটি ১৬ লাখ টনে। আগের মৌসুমে ২৭৬ কোটি ৩৪ লাখ টন খাদ্যশস্য বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছিল।

এফএও জানায়, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য ৪৭ কোটি ৮১ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মৌসুমে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৬৬ লাখ টন। সে হিসাবে বাণিজ্য বাড়বে ১৫ লাখ টন। সংস্থাটি মৌসুমের শুরুতে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ টন বাণিজ্যের পূর্বাভাস দিয়েছিল। সে হিসেবেও বাণিজ্য ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

এদিকে রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও ব্যবহার ও বাণিজ্য বেড়ে গেলে বড় পরিসরে কমতে পারে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ। গত মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ টন খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে মজুদ কমে ৮১ কোটি ৯২ লাখ টনে নামতে পারে।

খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত গত মৌসুমের ২৯ দশমিক ৪ থেকে কিছুটা কমে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে পারে। যদিও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনুপাত তুলনামূলক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানেই থাকবে। মজুদ ও অনুপাত কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এফএও বলছে, কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোয় এবার উৎপাদন প্রত্যাশার নিচে অবস্থান করছে। এ কারণেই মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত কমেছে।

এফএও বলছে, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখবে গম ও চাল। এর মধ্যে গমের বাণিজ্য ১৯ কোটি ২০ লাখ টনের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান ও তুরস্কে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমদানি বাড়াচ্ছে এসব দেশ। অন্যদিকে মজুদ পরিপূর্ণ রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মিসর। এসব বিষয়ই কৃষিপণ্যটির বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এবার রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেন বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি গম সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। এদিকে এফএওর প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদন ৫১ কোটি ৮২ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। বাণিজ্যের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৩ লাখ টন।

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা

সংবাদ ডেস্ক

image

চলতি মৌসুমটি বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও বাণিজ্যের মৌসুম হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এর মধ্যে গম ও চালের বাণিজ্য রেকর্ড পরিমাণ বাড়বে। সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড ফুড সিচুয়েশন শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ও বাণিজ্য রেকর্ড গড়ার পথে। তবে মজুদ প্রায় ৬০ লাখ টনেরও বেশি কমতে পারে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম এক দশকের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যোগী সরকারগুলো। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিবর্তে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্যে লাগাম টেনে ধরতে নানা পলিসি গ্রহণের উদ্বেগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

এফএওর প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন ২৭৯ কোটি ৩৩ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। আগের মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২৭৭ কোটি ১৯ লাখ টন। সে হিসেবে উৎপাদন বাড়লে তা প্রত্যাশার তুলনায় ৬৭ লাখ টন কম। এদিকে সরবরাহ দাঁড়াবে ৩৬১ কোটি ৮৮ লাখ টনে। আগের মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৩৫৭ কোটি ৯৫ লাখ টন খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হয়েছিল।

সংস্থাটি বলছে, চলতি মৌসুমে উৎপাদনের তুলনায় ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে। ফলে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এ সময় খাদ্যশস্য ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৮১ কোটি ১৬ লাখ টনে। আগের মৌসুমে ২৭৬ কোটি ৩৪ লাখ টন খাদ্যশস্য বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছিল।

এফএও জানায়, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য ৪৭ কোটি ৮১ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। গত মৌসুমে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৬৬ লাখ টন। সে হিসাবে বাণিজ্য বাড়বে ১৫ লাখ টন। সংস্থাটি মৌসুমের শুরুতে ৪৭ কোটি ৩২ লাখ টন বাণিজ্যের পূর্বাভাস দিয়েছিল। সে হিসেবেও বাণিজ্য ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

এদিকে রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও ব্যবহার ও বাণিজ্য বেড়ে গেলে বড় পরিসরে কমতে পারে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ। গত মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ টন খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে মজুদ কমে ৮১ কোটি ৯২ লাখ টনে নামতে পারে।

খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত গত মৌসুমের ২৯ দশমিক ৪ থেকে কিছুটা কমে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে নামতে পারে। যদিও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনুপাত তুলনামূলক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানেই থাকবে। মজুদ ও অনুপাত কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এফএও বলছে, কানাডা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোয় এবার উৎপাদন প্রত্যাশার নিচে অবস্থান করছে। এ কারণেই মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত কমেছে।

এফএও বলছে, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখবে গম ও চাল। এর মধ্যে গমের বাণিজ্য ১৯ কোটি ২০ লাখ টনের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান ও তুরস্কে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমদানি বাড়াচ্ছে এসব দেশ। অন্যদিকে মজুদ পরিপূর্ণ রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে মিসর। এসব বিষয়ই কৃষিপণ্যটির বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। এবার রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউক্রেন বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি গম সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। এদিকে এফএওর প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদন ৫১ কোটি ৮২ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। বাণিজ্যের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১৩ লাখ টন।