প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচিতে সহায়তার মাধ্যমে উত্তর তাদের নিজেদের সম্মত উন্নয়ন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।’

গতকাল প্যারিস পিস ফোরামে (পিপিএফ) সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গ্লোবাল সাউথ-এ অনেক নিজস্ব উন্নয়ন সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে, এই সমাধানগুলোর অনেকগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োগ করা ও জোরদার করা যেতে পারে এবং এই প্রয়াস প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে পুনরায় সমাধান উদ্ভাবন এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোতে সরাসরি সাড়া দেয়ার লক্ষ্যে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য আরও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সাউথ-সাউথ সহযোগিতা কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং ব্যয়-সাশ্রয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

২০১৯ সালে একটি ‘সাউথ-সাউথ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি দক্ষিণে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান সৃষ্টির জন্য একটি প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ, জি-২০ এবং ওইসিডিকে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ধারণাটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’

তবুও, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার প্রয়াস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় পেছনে আসন নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ এই ধরনের অনেক সম্ভাব্য সাউথ-সাউথ সহযোগিতা প্রকল্পের অর্থায়ন কম রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ত্রিমুখী সহযোগিতার ধারণাটি সম্ভাবনার অনুরূপ সফল হয়নি এবং এই ঘাটতি দূর করা দরকার।’

বিশ্বব্যাপী বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে অসম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন আমরা দেখেছি যে, আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা গ্লোবাল সাউথের লাখ লাখ লোককে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার সুযোগ লাভের বিশাল ব্যবধানটি খুব বেশি উল্লেখ করার মতো।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ভ্যাকসিনের সমতা ও গুণমান নিশ্চিত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন শেয়ার করার লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা ট্রিপস ছাড় দেয়াসহ সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে আমাদের অর্জন বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছে গেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত বিশ বছরে আমাদের কাজের উপর ভিত্তি করে, আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত হওয়ায় প্রস্তাব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ লাভ করায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য কাজ করা।’

‘প্লাটফর্মটি আমাদের মূল্য-ভিত্তিক কূটনীতির কাজকে সমন্বয় ও সম্প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা ও মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে সাহায্য করবে,’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সবসময়ই বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) স্বার্থ তুলে ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছি এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনের এবং প্রমাণিত। (বাসস)।

প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে সালাম জুবায়ের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকে ‘বৈশ্বিক পাবলিক পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবার সুযোগ না থাকায় সংকটকালীন সময়ে দূরশিক্ষণ এবং অনলাইন শিক্ষা বিশ্বে নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করছে।’

প্যারিস সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে ইউনেস্কো সদরদপ্তরে ৪১তম সাধারণ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের কষ্টার্জিত অর্জনকে নষ্ট করছে। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি রেখা প্রকাশ করেছে। ইউনেস্কোর মতে, স্কুল আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। মহামারীর এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা ‘নতুন স্বাভাবিক’ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। যদিও এটি নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো দ্রুত অনলাইন প্লাটফর্মে চলে যেতে পারে। কিন্তু উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো সম্পদ ও প্রযুক্তির অভাবে আরও পিছিয়ে পড়েছে। এটি স্কুলে স্বাক্ষরতার হার, যুব ও প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষার ক্ষেত্রে গত এক দশকের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের অপব্যবহার বন্ধে ইউনেস্কোসহ বিশ্ব সংস্থাগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাইজেশন অধিকতর সেবা এবং অবাধ তথ্য প্রবাহকে উন্নত করছে। কিন্তু ক্ষতিকর উপাদান এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়াতে ডিজিটাল সরঞ্জাম ও প্লাটফর্মের অপব্যবহারের কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রবাব ফেলছে। ইউনেস্কোর মতো বিশ্ব সংস্থার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও এটি প্রাণঘাতি বাস্তবতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে আমরা উচ্চাভিলাষী জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছি। আশা করি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক সচেতনতা এবং সংবেদনশীলতা বাড়াতে সদস্যদেশগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি জলবায়ু শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিতে ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জরুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত গতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আমাদের সমুদ্রের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ওপর ইউনেস্কোর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। একটি শক্তিশালী, গতিশীল, উদ্ভাবনী বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।’

ইউনেস্কো বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানব সমাজের বিকাশের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।’

শিক্ষার সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সুনির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা এবং মেয়েদের শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি। ভবিষ্যত কর্ম-জগতের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করেছি।’

সারাদেশের প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলে তথ্য-প্রযুক্তি সামগ্রী সরবরাহ করা; প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া; ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ৪ কোটি পাঠ্য বই বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা জানান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে শিক্ষক এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এমসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির প্রমুখ।

প্যারিস পিস ফোরামে শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সৃষ্ট ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ আঞ্চলিক সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় প্যারিসে ল্যা ভিলেটের গ্র্যান্ড হলে প্যারিস পিস ফোরামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান। প্যারিস পিস ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্যাসক্যাল ল্যামির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস।

বিশ্বকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা পরিহার করে সম্পদকে শান্তি ও টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব এখন অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে রয়েছে। পুরোনো এবং নতুন সংঘাতগুলো শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।’

এই মহামারীকে অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি কূটনীতি বৃদ্ধি করার তাগিদ দেন তিনি।

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী সদস্য দিয়ে বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ‘সারাবিশ্বে শান্তি হলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা’- এমন অভিমত প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলি এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত ও সমুদ্র বিরোধ নিরসনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

যেকোন ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের মাটি অন্য যেকোন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেই না।’

মানুষের জীবন-জীবিকা এবং বাড়িঘর বাঁচাতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

পিপিএফ প্যানেল আলোচনায় শেখ হাসিনা

প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান

ফ্রান্সের প্যারিস থেকে সালাম জুবায়ের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচিতে সহায়তার মাধ্যমে উত্তর তাদের নিজেদের সম্মত উন্নয়ন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।’

গতকাল প্যারিস পিস ফোরামে (পিপিএফ) সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গ্লোবাল সাউথ-এ অনেক নিজস্ব উন্নয়ন সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে, এই সমাধানগুলোর অনেকগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োগ করা ও জোরদার করা যেতে পারে এবং এই প্রয়াস প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে পুনরায় সমাধান উদ্ভাবন এড়াতে সাহায্য করতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলোতে সরাসরি সাড়া দেয়ার লক্ষ্যে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য আরও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরের অর্থায়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা সাউথ-সাউথ সহযোগিতা কর্মসূচির স্বচ্ছতা এবং ব্যয়-সাশ্রয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

২০১৯ সালে একটি ‘সাউথ-সাউথ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি দক্ষিণে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান সৃষ্টির জন্য একটি প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ, জি-২০ এবং ওইসিডিকে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ধারণাটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’

তবুও, সাউথ-সাউথ সহযোগিতার প্রয়াস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় পেছনে আসন নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ এই ধরনের অনেক সম্ভাব্য সাউথ-সাউথ সহযোগিতা প্রকল্পের অর্থায়ন কম রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ত্রিমুখী সহযোগিতার ধারণাটি সম্ভাবনার অনুরূপ সফল হয়নি এবং এই ঘাটতি দূর করা দরকার।’

বিশ্বব্যাপী বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে অসম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন আমরা দেখেছি যে, আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা গ্লোবাল সাউথের লাখ লাখ লোককে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার সুযোগ লাভের বিশাল ব্যবধানটি খুব বেশি উল্লেখ করার মতো।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ভ্যাকসিনের সমতা ও গুণমান নিশ্চিত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন শেয়ার করার লক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা ট্রিপস ছাড় দেয়াসহ সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে আমাদের অর্জন বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছে গেছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত বিশ বছরে আমাদের কাজের উপর ভিত্তি করে, আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত হওয়ায় প্রস্তাব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ লাভ করায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরি করার জন্য কাজ করা।’

‘প্লাটফর্মটি আমাদের মূল্য-ভিত্তিক কূটনীতির কাজকে সমন্বয় ও সম্প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা ও মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে সাহায্য করবে,’ যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সবসময়ই বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) স্বার্থ তুলে ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছি এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনের এবং প্রমাণিত। (বাসস)।

প্যারিস (ফ্রান্স) থেকে সালাম জুবায়ের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষাকে ‘বৈশ্বিক পাবলিক পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সবার সুযোগ না থাকায় সংকটকালীন সময়ে দূরশিক্ষণ এবং অনলাইন শিক্ষা বিশ্বে নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করছে।’

প্যারিস সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেলে ইউনেস্কো সদরদপ্তরে ৪১তম সাধারণ অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের কষ্টার্জিত অর্জনকে নষ্ট করছে। এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি রেখা প্রকাশ করেছে। ইউনেস্কোর মতে, স্কুল আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত। মহামারীর এই সময়ে অনলাইন শিক্ষা ‘নতুন স্বাভাবিক’ হিসেবে বিকশিত হয়েছে। যদিও এটি নতুন বৈষম্য সৃষ্টি করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশগুলো দ্রুত অনলাইন প্লাটফর্মে চলে যেতে পারে। কিন্তু উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো সম্পদ ও প্রযুক্তির অভাবে আরও পিছিয়ে পড়েছে। এটি স্কুলে স্বাক্ষরতার হার, যুব ও প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষার ক্ষেত্রে গত এক দশকের অর্জনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

ডিজিটাল প্লাটফর্মের অপব্যবহার বন্ধে ইউনেস্কোসহ বিশ্ব সংস্থাগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাইজেশন অধিকতর সেবা এবং অবাধ তথ্য প্রবাহকে উন্নত করছে। কিন্তু ক্ষতিকর উপাদান এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়াতে ডিজিটাল সরঞ্জাম ও প্লাটফর্মের অপব্যবহারের কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রবাব ফেলছে। ইউনেস্কোর মতো বিশ্ব সংস্থার এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও এটি প্রাণঘাতি বাস্তবতা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে আমরা উচ্চাভিলাষী জলবায়ু প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। আমরা বিদেশি বিনিয়োগে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১০টি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করেছি। আশা করি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক সচেতনতা এবং সংবেদনশীলতা বাড়াতে সদস্যদেশগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি জলবায়ু শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিতে ইউনেস্কোর প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জরুরি বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দ্রুত গতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আমাদের সমুদ্রের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

মানুষের জীবনমান উন্নয়নের ওপর ইউনেস্কোর সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। একটি শক্তিশালী, গতিশীল, উদ্ভাবনী বহুপাক্ষিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের চেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।’

ইউনেস্কো বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানব সমাজের বিকাশের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।’

শিক্ষার সম্প্রসারণে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সুনির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা এবং মেয়েদের শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছি। ভবিষ্যত কর্ম-জগতের জন্য ব্যবহারিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করেছি।’

সারাদেশের প্রায় ৮৩ হাজার স্কুলে তথ্য-প্রযুক্তি সামগ্রী সরবরাহ করা; প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া; ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ৪ কোটি পাঠ্য বই বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা জানান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে শিক্ষক এবং ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মণি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এমসিসিআই’র সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির প্রমুখ।

প্যারিস পিস ফোরামে শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে সৃষ্ট ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ আঞ্চলিক সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় প্যারিসে ল্যা ভিলেটের গ্র্যান্ড হলে প্যারিস পিস ফোরামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান। প্যারিস পিস ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্যাসক্যাল ল্যামির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্রোঁ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস।

বিশ্বকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা পরিহার করে সম্পদকে শান্তি ও টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব এখন অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে রয়েছে। পুরোনো এবং নতুন সংঘাতগুলো শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।’

এই মহামারীকে অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি কূটনীতি বৃদ্ধি করার তাগিদ দেন তিনি।

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী সদস্য দিয়ে বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। ‘সারাবিশ্বে শান্তি হলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা’- এমন অভিমত প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলি এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত ও সমুদ্র বিরোধ নিরসনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

যেকোন ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের মাটি অন্য যেকোন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেই না।’

মানুষের জীবন-জীবিকা এবং বাড়িঘর বাঁচাতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।