ঢাকা-বরিশাল লঞ্চের কেবিন ভাড়ায় নেই নীতিমালা

ইচ্ছেমতো আদায় করা হচ্ছে

সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনের ভাড়ার কোন সঠিক কোন নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছে মতো তা আদায় করছে মালিকরা। ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চের ৭০০ টাকা সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১২০০-১৫০০ টাকা। ডাবল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৪০০-৩০০০ হাজার টাকা।

অনেক সময় টাকা বেশি নিয়ে বুকিং কেবিনও অন্যদের দিয়ে দিচ্ছে লঞ্চ স্টাফরা। যদিও বলা হয় ডেকে ভাড়া চারগুণ কেবিনের ভাড়া হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আরও বেশি নেয়া হয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ ভাড়া একবারে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ লঞ্চ যাত্রীরা। সরকার এক সঙ্গে এত টাকা লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করার তা দিতে পারছে না ডেকের যাত্রীরা। তাই অনেক রুটে বাধ্য হয়ে কম ভাড়া নিচ্ছে বলে জানান লঞ্চ মালিকরা।

জানা গেছে, এক সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌপথ। যাত্রাপথে দীর্ঘ সময়ের কারণে দিন দিন যাত্রীবিমুখ হয়ে পড়ছে এই নৌপথ। এর মধ্যে আবার প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে ঢাকা-বরিশাল বিভিন্ন রুটের লঞ্চে। লঞ্চের ভাড়া ও সময় বেশি লাগার কারণে অনেকেই সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে দেখা গেছে।

মাহমুদুল হাসান নামে বরিশালের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা। কিন্তু বাসে সময় লাগে ৩-৫ ঘণ্টা। তুলনামূলক বাসের ভাড়াও কিছুটা কম। এছাড়া লঞ্চে কেবিনের ভাড়াও অনেক বাড়ানো হয়েছে। তাই বরিশালগামী বাসের যাত্রী আগে থেকে বাড়ছে। এছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে গেলে লঞ্চে যাত্রীই পাবে না।’ তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। লঞ্চ নতুন ভাড়ায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪০ পয়সা স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনি¤œ ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই ভাড়াও আদায় করতে পারছে না লঞ্চ মালিকরা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকদের চাহিদা ছিল ১০০ শতাংশ ভাড়া বাড়নোর। সরকার তা নাকচ করে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা প্রতিযোগিতার কারণে তা আদায় করে না। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগেই ২৫০ টাকা ভাড়া নিতো ২০০ টাকা। এখন একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই অনেক মালিকরা কিছু টাকা কম নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে বেশি নেয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লঞ্চের কেবিনের ক্ষেত্রে ডেকের ভাড়া চারগুণ নির্ধারিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ ২০১৩ সালের ভাড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকা-বরিশালের দূরত্ব ১৬১ কিলোমিটার। নতুন ভাড়ায় রুটের ডেকের ভাড়া হয় ৩৫২ টাকা, যা আগে ছিল ২৫৫ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরে আগে ভাড়া ছিল ১১৫ টাকা। এখন তা ১৫৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু অনেক লঞ্চ মালিক ১৫০ টাকা নিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

আক্তার হোসেন নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘সাড়ে ৩০০ টাকা লঞ্চে ডেকের ভাড়া। একটি পরিবারে ৪ জন সদস্য হলে তাদের ভাড়া হবে ১৪০০ টাকা। সাধারণ গরিব পরিবারের পক্ষে ১৪০০ টাকা দেয়া কষ্টকর।’ তাই লঞ্চের ভাড়া কমানোর বাদী জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছে। অনেকেই আবার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। নির্ধারিত ভাড়া বেশি নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

ঢাকা-বরিশাল লঞ্চের কেবিন ভাড়ায় নেই নীতিমালা

ইচ্ছেমতো আদায় করা হচ্ছে

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনের ভাড়ার কোন সঠিক কোন নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছে মতো তা আদায় করছে মালিকরা। ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চের ৭০০ টাকা সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১২০০-১৫০০ টাকা। ডাবল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২৪০০-৩০০০ হাজার টাকা।

অনেক সময় টাকা বেশি নিয়ে বুকিং কেবিনও অন্যদের দিয়ে দিচ্ছে লঞ্চ স্টাফরা। যদিও বলা হয় ডেকে ভাড়া চারগুণ কেবিনের ভাড়া হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আরও বেশি নেয়া হয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ ভাড়া একবারে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ লঞ্চ যাত্রীরা। সরকার এক সঙ্গে এত টাকা লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করার তা দিতে পারছে না ডেকের যাত্রীরা। তাই অনেক রুটে বাধ্য হয়ে কম ভাড়া নিচ্ছে বলে জানান লঞ্চ মালিকরা।

জানা গেছে, এক সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌপথ। যাত্রাপথে দীর্ঘ সময়ের কারণে দিন দিন যাত্রীবিমুখ হয়ে পড়ছে এই নৌপথ। এর মধ্যে আবার প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে ঢাকা-বরিশাল বিভিন্ন রুটের লঞ্চে। লঞ্চের ভাড়া ও সময় বেশি লাগার কারণে অনেকেই সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে দেখা গেছে।

মাহমুদুল হাসান নামে বরিশালের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা। কিন্তু বাসে সময় লাগে ৩-৫ ঘণ্টা। তুলনামূলক বাসের ভাড়াও কিছুটা কম। এছাড়া লঞ্চে কেবিনের ভাড়াও অনেক বাড়ানো হয়েছে। তাই বরিশালগামী বাসের যাত্রী আগে থেকে বাড়ছে। এছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে গেলে লঞ্চে যাত্রীই পাবে না।’ তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। লঞ্চ নতুন ভাড়ায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪০ পয়সা স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনি¤œ ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই ভাড়াও আদায় করতে পারছে না লঞ্চ মালিকরা।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকদের চাহিদা ছিল ১০০ শতাংশ ভাড়া বাড়নোর। সরকার তা নাকচ করে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা প্রতিযোগিতার কারণে তা আদায় করে না। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগেই ২৫০ টাকা ভাড়া নিতো ২০০ টাকা। এখন একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই অনেক মালিকরা কিছু টাকা কম নিচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে বেশি নেয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লঞ্চের কেবিনের ক্ষেত্রে ডেকের ভাড়া চারগুণ নির্ধারিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ ২০১৩ সালের ভাড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকা-বরিশালের দূরত্ব ১৬১ কিলোমিটার। নতুন ভাড়ায় রুটের ডেকের ভাড়া হয় ৩৫২ টাকা, যা আগে ছিল ২৫৫ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরে আগে ভাড়া ছিল ১১৫ টাকা। এখন তা ১৫৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু অনেক লঞ্চ মালিক ১৫০ টাকা নিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

আক্তার হোসেন নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, ‘সাড়ে ৩০০ টাকা লঞ্চে ডেকের ভাড়া। একটি পরিবারে ৪ জন সদস্য হলে তাদের ভাড়া হবে ১৪০০ টাকা। সাধারণ গরিব পরিবারের পক্ষে ১৪০০ টাকা দেয়া কষ্টকর।’ তাই লঞ্চের ভাড়া কমানোর বাদী জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন সংবাদকে বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছে। অনেকেই আবার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। নির্ধারিত ভাড়া বেশি নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।