‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতায় পেরেক ঠুকেছে’

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে কমিশন গঠনের দাবি করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, এই কাজটা করা না হলে নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার পুরোপুরি শেষ হয়েছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। ‘নেপথ্যের কুশীলবদের মধ্যে কেউ যদি মারাও যান, তাহলেও তাদের বিচার করতে হবে। তাহলে ইতিহাসে তারা অন্তত চিহ্নিত হয়ে থাকবেন বক্তারা জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসক রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে পুনরায় প্রবর্তন করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতা সেখানে পেরেক ঠুকেছে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চ আয়োজিত ‘ঘৃণ্য আইন ইনডেমনিটি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি জানান। প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদন খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ডিবিসি সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘যে কোন ঘটনায় দায়মুক্তি দিতে পারে আদালত। কিন্তু অধ্যাদেশ জারি করে দায় মুক্তি দেয়ার ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। সেই ঘটনা ঘটেছে এ দুর্ভাগা বাংলাদেশে।’ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হয় পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশকে সংবিধানের অংশ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১২ নভেম্বর আজকের দিনে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করে জাতীয় সংসদ। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক দুই সামরিক শাসক আমাদের জীবনে পদে পদে অনেকগুলো মাইন পুঁতে রেখে গেছে। আমাদেরকে, সরকারকে এসব মাইন দেখে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হয়। ‘সামরিক শাসক আমাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে পুনরায় প্রবর্তন করে জাতি হিসেবে আমাদের যে মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতা সেখানে পেরেক ঠুকেছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, দায়মুক্তির বিষয়টি আমার কাছে অস্বস্তিকর। ইনডেমনিটির মাধ্যমে দায়মুক্তি কোথাও হয়েছে কি না আমার জানা নেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায়, টেলিফোন করে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে কি না। এমন ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও মনে হয় না হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেগুলোর বিচার হয়েছে। কোন সরকারই সেসব বিচার বাধাগ্রস্ত করেনি।’

‘১৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী ঘটনায় যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার কুশীলব যারা, পেছনের নেপথ্যের কারিগর ছিল যারা, তাদের বিচার হয়নি। এই কুশীলবদের যতক্ষণ না বিচারের আওতায় আনা যাবে ততক্ষণ বিচার শেষ হয়েছে, তা আমরা বলতে পারব না। তাই এখন সময় হয়েছে তাদের চিহ্নিত করার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেছে, শেখ রাসেলকে হত্যা করেছে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু যারা হত্যার পেছনে ছিল, এ হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্রকারী ছিল, যারা এত সুবিধা ভোগ করেছে, তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে এর নেপথ্যের কারিগরদের বিচার করতে হবে।’

সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘কেউ মারা গেছে না বেঁচে আছে সেটা বিচার-বিবেচনার বিষয় না। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও তার পরবর্তী ঘটনার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে অবশ্যই একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় যারা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য থেকেই নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করা যায়।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘এই ধরনের আইন পৃথিবীর কোথাও হতে পারে, সেটা কোন সভ্য সমাজ কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ তা হয়েছে। ‘হিমালয়সম ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মুশতাক আহমেদ অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সামরিক শাসক মেজর জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করে খুনিদের রক্ষা করেন।’

image

জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চের আলোচনা সভায় বক্তারা - সংবাদ

আরও খবর
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১০৩ জন হাসপাতালে
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ
‘আমি এই বাংলার পাড়া-গাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর’
কিছু রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
রাজবাড়ীতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
নির্যাতনের মামলা করায় ফের সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে নিল ডিবি
প্রচারণার শুরুতেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা টুকু পুত্রের সমর্থকদের
বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী জয়ী, নেপথ্যে নানা কারণ
রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ে নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে -মির্জা ফখরুল
হেমন্তের নতুন ধানের গন্ধ মাঠজুড়ে

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতায় পেরেক ঠুকেছে’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চের আলোচনা সভায় বক্তারা - সংবাদ

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে কমিশন গঠনের দাবি করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, এই কাজটা করা না হলে নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার পুরোপুরি শেষ হয়েছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। ‘নেপথ্যের কুশীলবদের মধ্যে কেউ যদি মারাও যান, তাহলেও তাদের বিচার করতে হবে। তাহলে ইতিহাসে তারা অন্তত চিহ্নিত হয়ে থাকবেন বক্তারা জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসক রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে পুনরায় প্রবর্তন করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতা সেখানে পেরেক ঠুকেছে।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চ আয়োজিত ‘ঘৃণ্য আইন ইনডেমনিটি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি জানান। প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদন খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ডিবিসি সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘যে কোন ঘটনায় দায়মুক্তি দিতে পারে আদালত। কিন্তু অধ্যাদেশ জারি করে দায় মুক্তি দেয়ার ঘটনা পৃথিবীর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। সেই ঘটনা ঘটেছে এ দুর্ভাগা বাংলাদেশে।’ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর মাধ্যমে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হয় পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে এই অধ্যাদেশকে সংবিধানের অংশ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১২ নভেম্বর আজকের দিনে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল করে জাতীয় সংসদ। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক দুই সামরিক শাসক আমাদের জীবনে পদে পদে অনেকগুলো মাইন পুঁতে রেখে গেছে। আমাদেরকে, সরকারকে এসব মাইন দেখে সতর্কতার সঙ্গে চলতে হয়। ‘সামরিক শাসক আমাদের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামকে পুনরায় প্রবর্তন করে জাতি হিসেবে আমাদের যে মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতা সেখানে পেরেক ঠুকেছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, দায়মুক্তির বিষয়টি আমার কাছে অস্বস্তিকর। ইনডেমনিটির মাধ্যমে দায়মুক্তি কোথাও হয়েছে কি না আমার জানা নেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায়, টেলিফোন করে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে কি না। এমন ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও মনে হয় না হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে সেগুলোর বিচার হয়েছে। কোন সরকারই সেসব বিচার বাধাগ্রস্ত করেনি।’

‘১৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী ঘটনায় যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তাদের বিচার হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার কুশীলব যারা, পেছনের নেপথ্যের কারিগর ছিল যারা, তাদের বিচার হয়নি। এই কুশীলবদের যতক্ষণ না বিচারের আওতায় আনা যাবে ততক্ষণ বিচার শেষ হয়েছে, তা আমরা বলতে পারব না। তাই এখন সময় হয়েছে তাদের চিহ্নিত করার।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেছে, শেখ রাসেলকে হত্যা করেছে, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু যারা হত্যার পেছনে ছিল, এ হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্রকারী ছিল, যারা এত সুবিধা ভোগ করেছে, তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে এর নেপথ্যের কারিগরদের বিচার করতে হবে।’

সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘কেউ মারা গেছে না বেঁচে আছে সেটা বিচার-বিবেচনার বিষয় না। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও তার পরবর্তী ঘটনার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে অবশ্যই একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের সময় যারা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য থেকেই নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করা যায়।’

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘এই ধরনের আইন পৃথিবীর কোথাও হতে পারে, সেটা কোন সভ্য সমাজ কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ তা হয়েছে। ‘হিমালয়সম ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মুশতাক আহমেদ অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সামরিক শাসক মেজর জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করে খুনিদের রক্ষা করেন।’