পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত তাদের সুরক্ষার ‘বিরাট বোঝা’ ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ বাংলাদেশকে বয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে লেখা এক যৌথ চিঠিতে মার্কিন সিনেটের ওই ১২ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ৫ নভেম্বর ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধিত্বকারী ৯ মার্কিন সিনেটের মার্কো রুবিও, বেন কার্ডিন, ডিক ডারবিন, ক্রিস কুন্স, রন ওয়াইডেন, ক্রিস ভ্যান হলেন, এড মার্কি, করি বুকার ও এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং রিপাবলিকান পার্টির তিন সিনেটর জেফ মার্কলে, সুজান কলিন্স ও রজার উইকার যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে পাঠিয়েছেন।

ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রভাবশালী সদস্য মার্কো রুবিওর ওয়েবসাইটে ৯ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠির তথ্যটি প্রকাশ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠির শুরুতে ২০১৭ সালের অনুপ্রবেশের পর থেকে ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় সরকারের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন তারা। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, জীবিকার সুযোগ সীমিত হওয়া ও ভাসানচরে ‘বলপূর্বক’ স্থানান্তরের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা উদ্বিগ্ন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তাকর্মী ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন সিনেটররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য সামাজিক সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিবিরে মানবিক সহায়তাকর্মী ও সুরক্ষাকর্মীদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটররা।

সাম্প্রতিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন সিনেটররা তাদের চিঠিতে লিখেছেন, অগ্নিকা-ের ঘটনার পাশাপাশি অপরাধী ও একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে নারীসহ রোহিঙ্গারা ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তারা ওই হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছেন। অপরাধীদের যাতে দায়মুক্তি দেয়া না হয় এবং শিবিরে যেকোন ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে দ্বিগুণ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

চিঠিতে সিনেটররা লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টিও সিনেটররা আমলে নিয়েছেন। তবে তারা ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া এবং পরে তাদের আবার সেখানে ফিরিয়ে আনার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি তাদের সম্মতিতে করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে ভাসানচর বসবাস উপযোগী কি না, তা নিয়ে একটি সমন্বিত কারিগরি সমীক্ষার সুযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন সিনেটের ১২ জন সদস্য লিখেছেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের জোরকরে ভাসানচরে নেয়া সমর্থন করি না এবং আমরা এ ধরনের নীতিতে সহযোগিতার জন্য অর্থায়নও নিষিদ্ধ করেছি।’

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা। তারা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার সমর্থন আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, রাখাইন রাজ্যে সংকটের মূল কারণ ও নৃশংসতার জন্য মায়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে জোরালো ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর বিষয়েও তারা উদ্যোগ নেবেন বলেও চিঠিতে বলা হয়।

আরও খবর
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতায় পেরেক ঠুকেছে’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১০৩ জন হাসপাতালে
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ
‘আমি এই বাংলার পাড়া-গাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর’
কিছু রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
রাজবাড়ীতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
নির্যাতনের মামলা করায় ফের সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে নিল ডিবি
প্রচারণার শুরুতেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা টুকু পুত্রের সমর্থকদের
বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী জয়ী, নেপথ্যে নানা কারণ
রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ে নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে -মির্জা ফখরুল
হেমন্তের নতুন ধানের গন্ধ মাঠজুড়ে

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

রোহিঙ্গা ইস্যু

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি

কূটনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত তাদের সুরক্ষার ‘বিরাট বোঝা’ ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে’ বাংলাদেশকে বয়ে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে লেখা এক যৌথ চিঠিতে মার্কিন সিনেটের ওই ১২ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ৫ নভেম্বর ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রতিনিধিত্বকারী ৯ মার্কিন সিনেটের মার্কো রুবিও, বেন কার্ডিন, ডিক ডারবিন, ক্রিস কুন্স, রন ওয়াইডেন, ক্রিস ভ্যান হলেন, এড মার্কি, করি বুকার ও এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং রিপাবলিকান পার্টির তিন সিনেটর জেফ মার্কলে, সুজান কলিন্স ও রজার উইকার যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে পাঠিয়েছেন।

ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রভাবশালী সদস্য মার্কো রুবিওর ওয়েবসাইটে ৯ নভেম্বর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠির তথ্যটি প্রকাশ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠির শুরুতে ২০১৭ সালের অনুপ্রবেশের পর থেকে ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় সরকারের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন তারা। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, জীবিকার সুযোগ সীমিত হওয়া ও ভাসানচরে ‘বলপূর্বক’ স্থানান্তরের মতো বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা উদ্বিগ্ন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তাকর্মী ও রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন সিনেটররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের জন্য সামাজিক সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিবিরে মানবিক সহায়তাকর্মী ও সুরক্ষাকর্মীদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটররা।

সাম্প্রতিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন সিনেটররা তাদের চিঠিতে লিখেছেন, অগ্নিকা-ের ঘটনার পাশাপাশি অপরাধী ও একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে নারীসহ রোহিঙ্গারা ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তারা ওই হত্যার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছেন। অপরাধীদের যাতে দায়মুক্তি দেয়া না হয় এবং শিবিরে যেকোন ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে দ্বিগুণ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

চিঠিতে সিনেটররা লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টিও সিনেটররা আমলে নিয়েছেন। তবে তারা ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া এবং পরে তাদের আবার সেখানে ফিরিয়ে আনার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি তাদের সম্মতিতে করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে ভাসানচর বসবাস উপযোগী কি না, তা নিয়ে একটি সমন্বিত কারিগরি সমীক্ষার সুযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন সিনেটের ১২ জন সদস্য লিখেছেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের জোরকরে ভাসানচরে নেয়া সমর্থন করি না এবং আমরা এ ধরনের নীতিতে সহযোগিতার জন্য অর্থায়নও নিষিদ্ধ করেছি।’

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা। তারা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার সমর্থন আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, রাখাইন রাজ্যে সংকটের মূল কারণ ও নৃশংসতার জন্য মায়ানমারকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়ে জোরালো ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর বিষয়েও তারা উদ্যোগ নেবেন বলেও চিঠিতে বলা হয়।