কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী, কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। তার বইয়ের ভাষায় কথার জাদুতে মোহিত হননি এমন বাঙালি পাঠক পাওয়া যাবে না। পাঠক সৃষ্টিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাকে নিয়ে আজো পাঠক অনুরাগীদের আগ্রহের সীমা নেই।

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মদিন আজ। প্রিয় এই লেখকের জন্মদিনে তাঁর অগণিত ভক্ত-পাঠক নানাভাবে তাঁকে স্মরণ করে থাকে। প্রিয় লেখকের জন্মদিন নিয়ে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সামরিজা ইসলাম বলেন, ‘আমার বই পড়তে ভালো লাগতো না। আমার জন্মদিনে আমার মা আমাকে বিভিন্ন লেখকের বই উপহার দিতেন। আমি সাজিয়ে রাখতাম। অষ্টম শ্রেণীতে যখন আমি তখন এনে দিলেন হুমায়ূন সমগ্র। একদিন কি মনে করে পড়তে শুরু করলাম। ওই যে শুরু করেছি। আর ছাড়তে পারিনি।’ হুমায়ূনের বই কেন ভালো লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে সামরিজা বলেন,‘তিনি এতো সহজ করে লিখতে পারেন। তাঁর লেখায় নাটকীয়তাও থাকে, কিন্তু সবটাই যেন আমার কথা। খুব মজা লাগে।’

হুমায়ূনের লেখার ভক্ত বাংলাদেশ মেডিকেলের চিকিৎসক নাফিসা এখলাস। তিনি বলেন, ‘মন খারাপ হলে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তাম। এখনো পড়ি। তাঁর নাটক, সিনেমা ছোটবেলায় দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম আর এখন ইউটিউবে দেখি। আসলে তাঁর সব কিছুই আমার ভালো লাগে। নুহাশ পল্লীতে গেলে তাঁর সৃষ্টিশীল মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এমন লেখক আর পাবো কি না সন্দেহ মন্তব্য করে হুমায়ূন ভক্ত এই চিকিৎসক বলেন, ‘তাঁর জন্মদিনে তাঁর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে। মনে হয় আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে দেশ আরও কিছু অনবদ্য সাহিত্য পেতো।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে এক আয়োজনে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ‘বাকের ভাই’খ্যাত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেছিলেন, হুমায়ূনকে আমরা শুধুই একভাবে দেখার চেষ্টা করি। তিনি ‘বাকের ভাই’ লিখেছেন, জনপ্রিয় নাটক লিখেছেন। কিন্তু এখানেই শেষ কথা না। তাঁকে নিয়ে সত্যিকার অর্থে বিচার-বিশ্লেষণ এখনো হয়নি। তাঁকে জনপ্রিয় লেখক বলা হয়। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করা উচিত। তাঁর মূল্যায়ন যথাযথভাবে এখনও হয়নি। যদিও আমাদের দেশে সব কিছু অনেক দেরিতে হয়।’

হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার আশ্চর্যসুন্দর সাবলিল রচনার মধ্য দিয়ে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নানাবাড়িতে হ?ুমায়ূন আহমেদের জন্ম। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেয়া এই ছেলেটিই পরবর্তিতে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জননন্দিত কথাশিল্পী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

জন্মদিনের আড়ম্বরতা পছন্দ ছিল না হুমায়ূনের। তবু রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে বন্ধুবান্ধব, একেবারে কাছের কিছু মানুষদের নিয়ে কেক কাটতেন। রাত গড়িয়ে সকাল হলে ভক্তদের শুভেচ্ছায় হতেন শিক্ত। ভক্তরা ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানাত প্রিয় লেখককে। এছাড়া দিনভর নানা আয়োজন তো থাকতই। সেই আয়োজনেও থাকতো চমক। বছর ঘুরে আজ এসেছে সেই শুভক্ষণ। আজ ১৩ নভেম্বর বাংলা সাহিত্যের এই জননন্দিত লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদ।

প্রায় অর্ধশত বছর আগে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি গুনি এই লেখককে। আমৃত্যু ছোটগল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক- প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি।

তাঁর চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। আবার ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কা-’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভূবন’ নাটকগুলোর আলোচিত সংলাপ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়।

রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, বাকের ভাই, রুপা চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’। তাঁর লেখা গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক।

জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।

image
আরও খবর
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতায় পেরেক ঠুকেছে’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১০৩ জন হাসপাতালে
‘আমি এই বাংলার পাড়া-গাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর’
কিছু রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
রাজবাড়ীতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
নির্যাতনের মামলা করায় ফের সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে নিল ডিবি
প্রচারণার শুরুতেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা টুকু পুত্রের সমর্থকদের
বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী জয়ী, নেপথ্যে নানা কারণ
রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ে নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে -মির্জা ফখরুল
হেমন্তের নতুন ধানের গন্ধ মাঠজুড়ে

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

image

বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী, কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। তার বইয়ের ভাষায় কথার জাদুতে মোহিত হননি এমন বাঙালি পাঠক পাওয়া যাবে না। পাঠক সৃষ্টিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাকে নিয়ে আজো পাঠক অনুরাগীদের আগ্রহের সীমা নেই।

কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মদিন আজ। প্রিয় এই লেখকের জন্মদিনে তাঁর অগণিত ভক্ত-পাঠক নানাভাবে তাঁকে স্মরণ করে থাকে। প্রিয় লেখকের জন্মদিন নিয়ে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সামরিজা ইসলাম বলেন, ‘আমার বই পড়তে ভালো লাগতো না। আমার জন্মদিনে আমার মা আমাকে বিভিন্ন লেখকের বই উপহার দিতেন। আমি সাজিয়ে রাখতাম। অষ্টম শ্রেণীতে যখন আমি তখন এনে দিলেন হুমায়ূন সমগ্র। একদিন কি মনে করে পড়তে শুরু করলাম। ওই যে শুরু করেছি। আর ছাড়তে পারিনি।’ হুমায়ূনের বই কেন ভালো লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে সামরিজা বলেন,‘তিনি এতো সহজ করে লিখতে পারেন। তাঁর লেখায় নাটকীয়তাও থাকে, কিন্তু সবটাই যেন আমার কথা। খুব মজা লাগে।’

হুমায়ূনের লেখার ভক্ত বাংলাদেশ মেডিকেলের চিকিৎসক নাফিসা এখলাস। তিনি বলেন, ‘মন খারাপ হলে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়তাম। এখনো পড়ি। তাঁর নাটক, সিনেমা ছোটবেলায় দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম আর এখন ইউটিউবে দেখি। আসলে তাঁর সব কিছুই আমার ভালো লাগে। নুহাশ পল্লীতে গেলে তাঁর সৃষ্টিশীল মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এমন লেখক আর পাবো কি না সন্দেহ মন্তব্য করে হুমায়ূন ভক্ত এই চিকিৎসক বলেন, ‘তাঁর জন্মদিনে তাঁর মৃত্যুর কথা মনে পড়ে। মনে হয় আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে দেশ আরও কিছু অনবদ্য সাহিত্য পেতো।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে এক আয়োজনে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ‘বাকের ভাই’খ্যাত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেছিলেন, হুমায়ূনকে আমরা শুধুই একভাবে দেখার চেষ্টা করি। তিনি ‘বাকের ভাই’ লিখেছেন, জনপ্রিয় নাটক লিখেছেন। কিন্তু এখানেই শেষ কথা না। তাঁকে নিয়ে সত্যিকার অর্থে বিচার-বিশ্লেষণ এখনো হয়নি। তাঁকে জনপ্রিয় লেখক বলা হয়। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করা উচিত। তাঁর মূল্যায়ন যথাযথভাবে এখনও হয়নি। যদিও আমাদের দেশে সব কিছু অনেক দেরিতে হয়।’

হুমায়ূন আহমেদের অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার আশ্চর্যসুন্দর সাবলিল রচনার মধ্য দিয়ে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নানাবাড়িতে হ?ুমায়ূন আহমেদের জন্ম। নেত্রকোনার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেয়া এই ছেলেটিই পরবর্তিতে হয়ে ওঠেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জননন্দিত কথাশিল্পী, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

জন্মদিনের আড়ম্বরতা পছন্দ ছিল না হুমায়ূনের। তবু রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে বন্ধুবান্ধব, একেবারে কাছের কিছু মানুষদের নিয়ে কেক কাটতেন। রাত গড়িয়ে সকাল হলে ভক্তদের শুভেচ্ছায় হতেন শিক্ত। ভক্তরা ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানাত প্রিয় লেখককে। এছাড়া দিনভর নানা আয়োজন তো থাকতই। সেই আয়োজনেও থাকতো চমক। বছর ঘুরে আজ এসেছে সেই শুভক্ষণ। আজ ১৩ নভেম্বর বাংলা সাহিত্যের এই জননন্দিত লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূন আহমেদ।

প্রায় অর্ধশত বছর আগে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ পাঠকমহলে এতটাই নন্দিত হয়েছিল যে এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি গুনি এই লেখককে। আমৃত্যু ছোটগল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক- প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি।

তাঁর চিত্রনাট্য ও পরিচালনার ছবিগুলোর মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে। আবার ‘অচিন বৃক্ষ’, ‘খাদক’, ‘একি কা-’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অন্যভূবন’ নাটকগুলোর আলোচিত সংলাপ এখনও অনেকের মুখেই শোনা যায়।

রসবোধ আর অলৌকিকতার মিশেলে বাংলা কথা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর সৃষ্টি হিমু, মিছির আলী, বাকের ভাই, রুপা চরিত্রগুলো পেয়েছে ‘অমরত্ব’। তাঁর লেখা গানগুলো এখনো মানুষের মুখে মুখে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরো মনোযোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ (১৯৮৮) অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন নন্দিত এই কথাসাহিত্যিক।

জাপান টেলিভিশন ‘এনএইচকে’ হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে নির্মাণ করে ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘হু ইজ হু ইন এশিয়া’।