হেমন্তের নতুন ধানের গন্ধ মাঠজুড়ে

শীত-শরতের সেতু বাঁধতে বঙ্গের ভূমিতে নেমেছে হেমন্তের দিন। মাঠে মাঠে হালকা বাতাসে দুলছে সোনার ধান। কার্তিকের সবুজ মধ্যাহ্নে ফসলের মাঠে চোখজুড়ে স্বপ্ন বুনছে কৃষাণ-কৃষাণিরা।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলের মাঠ ক্রমে ঢেকে দিচ্ছে মৃদু কুয়াশা। জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা এ বাংলায় এমনই বিচিত্র দৃশ্যের আবাহন নিয়ে হাজির হয়েছে চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। এরই মধ্যদিয়ে প্রকৃতিও শোনাচ্ছে শীতের পূর্বাভাস। শীতের শুরুতে অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে বাংলার ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠলে নতুন ধানের আবাহনে এই নবান্নের উৎসব। জমির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নবান্ন তাদের কাছে আজও উৎসবের মতো। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আগামী বুধবার ১৭ নভেম্বর, ১লা অগ্রহায়ণ প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলের এই দিনটিকে নবান্ন উৎসব হিসেবেই মেনে আসছে জমির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক।

এদিকে বরেন্দ্রর মাঠ জুড়ে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধানের কাটা ও মাড়াই। এরইমধ্যে কাটা পড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ ধান। কাটার উপযুক্ত হতে বাকি এখনও ৮৮ শতাংশ ধান মাঠে। তবে এই মাস পেরোনোর আগেই শতভাগ ধান উঠবে কৃষকের গোলায়।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ দুই হাজার হেক্টর। যেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন চাল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে শুধু আবাদই হয় নি; যে ১২ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে সেখানে উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন চাল। বাকি ৮৮ শতাংশের প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৩ দশমিক ১৯ বা এর আশেপাশেই থাকবে বলে আশাবাদী আঞ্চলিক কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা বলছেন, এবার রোপা আমন চাষে তেমন বেগ পেতে হয় নি। পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও এবার কম ছিলো। ফসল নষ্টকারী ইঁদুরের আক্রমণ ছিল শঙ্কার চেয়ে অনেক কম। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া গেছে রোপা চাষে। যার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে।

তারা আরও বলছেন, ফলন বেশি হলে দামে গিয়ে কমে যায়। এটা কৃষকদের জন্য দুর্ভোগের। বিশেষ করে, যেসব চাষীদের ধান মজুদ করে রাখার সক্ষমতা নেই। তাদের ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে তুলতে হয়। এই সময়টাই কৃষক তার ধানের ন্যায্য দামটা পায় না। তবে এবার চালের দাম বেশি। এ কারণে বাজারে এখন পর্যন্ত ধানের দামও ভালো আছে। আশা করছি, সামনেও ধানের বাজার খুব একটা কমবে না। আর যেহেতু ফলন ও দাম দু’টাই ভালো সুতরাং এবার খুশিটাও বেশি।

রাজশাহী জেলার পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলার ধান খেত ঘুরে দেখা যায়, পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। গেরস্ত উঠানে উঠতে শুরু করেছে ধানের পালা। ধানের মৌ মৌ গন্ধ খেত থেকে পৌঁছেছে গেরস্থ উঠানেও। মাড়াই কাজে শ্রমিকদের পাশাপাশি গেরস্থ বাড়ির কর্তা থেকে শুরু করে পরিবারের অন্য সদস্যরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গোদাগাড়ি উপজেলার কৃষক আশরাফুল হক জানান, তার খেত জুড়ে ফসল দেখলে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা পড়বে। তিনি প্রায় ৩ বিঘা মতো জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত ধানের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতি বিঘায় ২২ মনের বেশি ফলন হবে বলে আশা করছি।

পবা উপজেলার কৃষক সাদ্দাম হোসেন জানান, এবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। মধ্যের বৃষ্টিটা ধানের জন্য অনেক উপকারী ছিলো। কয়েকটি সেচ কম লেগেছে। তার সঙ্গে পোকার উপদ্রবও তেমন নেই। তার সাড়ে চার বিঘা জমিতে সুমন শরণা ধানের আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘায় অন্য বছরের তুলনায় ১ থেকে দেড় মণ ধান বেশি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রোপা আমনের আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। এবার রোপা মৌসুমে ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৫১সহ আরও কয়েকটি ধানের আবাদ হয়েছে। তবে ব্রি ধান ৫১-এর আবাদটা কিছুটা বেশি। এখন পর্যন্ত তেমন কোন দুর্যোগের সম্মুখীনও চাষীদের হতে হয়নি। সবমিলিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে রোপা আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।

image

ধান কাটছে কৃষাণীরা

আরও খবর
‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে জাতির মূলনীতি অসাম্প্রদায়িকতায় পেরেক ঠুকেছে’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ১২ মার্কিন সিনেটরের চিঠি
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ১০৩ জন হাসপাতালে
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ
‘আমি এই বাংলার পাড়া-গাঁয়ে বাঁধিয়াছি ঘর’
কিছু রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তা কা-জ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন : ওবায়দুল কাদের
রাজবাড়ীতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
নির্যাতনের মামলা করায় ফের সংবাদ সম্মেলন থেকে তুলে নিল ডিবি
প্রচারণার শুরুতেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা টুকু পুত্রের সমর্থকদের
বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী জয়ী, নেপথ্যে নানা কারণ
রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ে নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে -মির্জা ফখরুল

শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ , ২৮ কার্তিক ১৪২৮ ৭ রবিউস সানি ১৪৪৩

হেমন্তের নতুন ধানের গন্ধ মাঠজুড়ে

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

image

ধান কাটছে কৃষাণীরা

শীত-শরতের সেতু বাঁধতে বঙ্গের ভূমিতে নেমেছে হেমন্তের দিন। মাঠে মাঠে হালকা বাতাসে দুলছে সোনার ধান। কার্তিকের সবুজ মধ্যাহ্নে ফসলের মাঠে চোখজুড়ে স্বপ্ন বুনছে কৃষাণ-কৃষাণিরা।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলের মাঠ ক্রমে ঢেকে দিচ্ছে মৃদু কুয়াশা। জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা এ বাংলায় এমনই বিচিত্র দৃশ্যের আবাহন নিয়ে হাজির হয়েছে চতুর্থ ঋতু হেমন্ত। এরই মধ্যদিয়ে প্রকৃতিও শোনাচ্ছে শীতের পূর্বাভাস। শীতের শুরুতে অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে বাংলার ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠলে নতুন ধানের আবাহনে এই নবান্নের উৎসব। জমির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নবান্ন তাদের কাছে আজও উৎসবের মতো। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আগামী বুধবার ১৭ নভেম্বর, ১লা অগ্রহায়ণ প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলের এই দিনটিকে নবান্ন উৎসব হিসেবেই মেনে আসছে জমির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক।

এদিকে বরেন্দ্রর মাঠ জুড়ে শুরু হয়েছে রোপা আমন ধানের কাটা ও মাড়াই। এরইমধ্যে কাটা পড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ ধান। কাটার উপযুক্ত হতে বাকি এখনও ৮৮ শতাংশ ধান মাঠে। তবে এই মাস পেরোনোর আগেই শতভাগ ধান উঠবে কৃষকের গোলায়।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ দুই হাজার হেক্টর। যেখানে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন চাল। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে শুধু আবাদই হয় নি; যে ১২ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে সেখানে উৎপাদন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ১৯ মেট্রিক টন চাল। বাকি ৮৮ শতাংশের প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৩ দশমিক ১৯ বা এর আশেপাশেই থাকবে বলে আশাবাদী আঞ্চলিক কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা বলছেন, এবার রোপা আমন চাষে তেমন বেগ পেতে হয় নি। পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও এবার কম ছিলো। ফসল নষ্টকারী ইঁদুরের আক্রমণ ছিল শঙ্কার চেয়ে অনেক কম। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া গেছে রোপা চাষে। যার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে।

তারা আরও বলছেন, ফলন বেশি হলে দামে গিয়ে কমে যায়। এটা কৃষকদের জন্য দুর্ভোগের। বিশেষ করে, যেসব চাষীদের ধান মজুদ করে রাখার সক্ষমতা নেই। তাদের ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে তুলতে হয়। এই সময়টাই কৃষক তার ধানের ন্যায্য দামটা পায় না। তবে এবার চালের দাম বেশি। এ কারণে বাজারে এখন পর্যন্ত ধানের দামও ভালো আছে। আশা করছি, সামনেও ধানের বাজার খুব একটা কমবে না। আর যেহেতু ফলন ও দাম দু’টাই ভালো সুতরাং এবার খুশিটাও বেশি।

রাজশাহী জেলার পবা ও গোদাগাড়ি উপজেলার ধান খেত ঘুরে দেখা যায়, পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। গেরস্ত উঠানে উঠতে শুরু করেছে ধানের পালা। ধানের মৌ মৌ গন্ধ খেত থেকে পৌঁছেছে গেরস্থ উঠানেও। মাড়াই কাজে শ্রমিকদের পাশাপাশি গেরস্থ বাড়ির কর্তা থেকে শুরু করে পরিবারের অন্য সদস্যরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গোদাগাড়ি উপজেলার কৃষক আশরাফুল হক জানান, তার খেত জুড়ে ফসল দেখলে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটা পড়বে। তিনি প্রায় ৩ বিঘা মতো জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত ধানের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রতি বিঘায় ২২ মনের বেশি ফলন হবে বলে আশা করছি।

পবা উপজেলার কৃষক সাদ্দাম হোসেন জানান, এবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। মধ্যের বৃষ্টিটা ধানের জন্য অনেক উপকারী ছিলো। কয়েকটি সেচ কম লেগেছে। তার সঙ্গে পোকার উপদ্রবও তেমন নেই। তার সাড়ে চার বিঘা জমিতে সুমন শরণা ধানের আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘায় অন্য বছরের তুলনায় ১ থেকে দেড় মণ ধান বেশি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রোপা আমনের আবাদ ও উৎপাদন হয়েছে। এবার রোপা মৌসুমে ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৫১সহ আরও কয়েকটি ধানের আবাদ হয়েছে। তবে ব্রি ধান ৫১-এর আবাদটা কিছুটা বেশি। এখন পর্যন্ত তেমন কোন দুর্যোগের সম্মুখীনও চাষীদের হতে হয়নি। সবমিলিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে রোপা আমনের আবাদ ভালো হয়েছে।