আমদানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে তিনগুণ

আমদানি বেশি হওয়ায় ফের বাণিজ্য ঘাটতির আকার অনেক বড় হয়েছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫০ কোটি ৩০ লাখ (৬.৫ বিলিয়ন) ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার। তবে এই ঘাটতিতে চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ১০ লাখ (১৭.৩২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৮১ কোটি ৮০ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এ হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

তবে অর্থনীতিবিদরা জানান, আমদানি বাড়াতে এই ঘাটতি বেড়েছে। এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার পর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সব কিছু আগের মতোই চলছে। উৎপাদন কর্মকা- চলছে পুরোদমে। এই কারণেই আমদানি বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য মঙ্গল।

করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে।

শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। ওই অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে আমদানিতে উল্লম্ফনের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান চূড়ায় ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ (৩.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৮০ লাখ (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে সেই জোয়ার আর নেই। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের এই তিন মাসে এসেছিল ৬৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের এই তিন মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১০ কোটি (৩.১০ বিলিয়ন) ডলারের মতো। ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

আমদানি বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে তিনগুণ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

আমদানি বেশি হওয়ায় ফের বাণিজ্য ঘাটতির আকার অনেক বড় হয়েছে। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫০ কোটি ৩০ লাখ (৬.৫ বিলিয়ন) ডলার যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২০৪ কোটি (২.০৪ বিলিয়ন) ডলার। তবে এই ঘাটতিতে চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ১ হাজার ৭৩২ কোটি ১০ লাখ (১৭.৩২ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই তিন মাসে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৮১ কোটি ৮০ লাখ (১০.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এ হিসাবেই অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।

তবে অর্থনীতিবিদরা জানান, আমদানি বাড়াতে এই ঘাটতি বেড়েছে। এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার পর অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সব কিছু আগের মতোই চলছে। উৎপাদন কর্মকা- চলছে পুরোদমে। এই কারণেই আমদানি বাড়ছে। এটা অর্থনীতির জন্য মঙ্গল।

করোনা মহামারির কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় দ্বিতীয়ার্ধে এসে আমদানি বাড়তে শুরু করে।

শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ২৩ বিলিয়ন (২ হাজার ৩০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়। ওই অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে আমদানিতে উল্লম্ফনের কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই সূচক আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান চূড়ায় ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বরে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৫৩ কোটি ২০ লাখ ডলার। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। অথচ গত বছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৪৮ কোটি ১০ লাখ (৩.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৮০ লাখ (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল এই সূচক। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে সেই জোয়ার আর নেই। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৫৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের এই তিন মাসে এসেছিল ৬৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮১ কোটি ডলার। অথচ গত বছরের এই তিন মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১০ কোটি (৩.১০ বিলিয়ন) ডলারের মতো। ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।