এক সময় সবুজ পাতার চা বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে এ অঞ্চলের মানুষকে যেতে হতো সুদুর সিলেট কিংবা শ্রীমঙ্গলে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার শিল্প সমৃদ্ধ হবিরবাড়ী গ্রামে চা বাগান করে স্থানীয় কৃষিতে চমক লাগিয়েছেন ওই গ্রামের হাজী শহীদুল ইসলাম। উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে নিভৃত পল্লীর আদা পাহাড়ি উচুঁ উঁচু তিনটি চালায় শোভা পাচ্ছে সাড়ি সাড়ি চা গাছ। যেখানে আর মাত্র এক বছর পর বাগান মালিরা পিঠে টুরকি ঝুলিয়ে দল বেধে গাছ হতে সংগ্রহ করবে চায়ের কচিপাতা। পাশেই রয়েছে বাগান মালিকের দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র গ্রীণ অরণ্য পার্ক। পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সামান্য পথ হাটলেই পরিচিত হতে পারবে ওই বাগানের চা গাছের সাথে।
গত সোমবার দুপুরে হবিরবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চা বাগানে শ্রমিকদের কাজ তদারকিতে ব্যস্ত রয়েছেন হাজী শহীদুল ইসলাম। কাজের ফাকে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান সিলেট, চিটাগাং ও পঞ্চগড়ের মত ভালুকার কয়েকটি গ্রামের ভূমি রয়েছে যেখানে চা আবাদে ব্যাপক সফলতা পাওয়ার মত। তার মধ্যে নিজের গ্রাম হবিরবাড়ীতে রয়েছে উচুঁ উঁচু লাল মাটির চালা জমি যেখানে চা আবাদ সম্ভব। উঁচু হতে ঢালু কাঠামোর জমিতে বৃষ্টির পানি জমেনা তাই টেক টিলা আকৃতির এ জমি চা আবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় হতে প্রতি পিস ৫ টাকা হিসাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৩০ হাজার চা গাছের চারা কিনে আনেন। ৬০ হাজার টাকার মত খরচে ৩টি চালার ১০ একর জমির মাটি চাষ করে তাতে পঞ্চগড়ের শ্রমিক দিয়ে চারা গুলি রোপণ করান। তাতেও প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রথম দিকে পঞ্চগড়ের শ্রমিকরা বাগানে চাড়ার পরিচর্যা করার বিষয়ে এলাকার শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে ৩টি চালার ৩টি বাগানের চা গাছ গুলোর বয়স দুই বছর হওয়ায় দেড় থেকে ২ ফুট উচুঁ হয়ে ডাল পালায় সবুজ পাতা ছড়াচ্ছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গাছগুলো ঝুপড়ি আকৃতিতে রুপ নেবে। আর তখন সিলেট, শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের মতো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে ভালুকার নতুন চা বাগানগুলো। আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের চা পাতা বিক্রয়োপযোগী হবে বলে তিনি আশা করছেন। গাছে গাছে নতুন পাতা বের হওয়ার পর লাল মাকড়সা আক্রমণ করে যে কারণে এক সপ্তাহ পর পর সারা বাগানে কীটনাশক ছিটানো লাগে। এছাড়া কিছুদিন পর পর গাছের চারিদিকের মাটি কুপিয়ে তাতে পানি সেচ দিতে হয়। বাগান পরিচর্যার জন্য সব সময় ১০-১৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন।
নিজের বাগানের প্রসার বৃদ্ধি ও এলাকার মানুষকে চা আবাদে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষে নিজস্ব নার্সারিতে ২৪ হাজার চা গাছের কলম তৈরি করেছেন। তিনি জানান চা আবাদে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আকাশমণির বাগান করা থেকে এলাকার কৃষকরা বিরত থাকবেন। চা রপ্তানিযোগ্য অর্থকরী ফসল হওয়ায় এর চাহিদা সব সময় রয়েছে। তার বাগান হতে অর্গানিক চা তৈরির লক্ষ্যে নিজে একটি মিনি ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যাতে এলাকার কৃষকরা চায়ের আবাদ করলে স্থানীয়ভাবে সুবিধা পেতে পারেন। উপজেলার হবিরবাড়ী, কাঠালী, বাশিল, খুর্দ, মেহেরাবাড়ী এলাকায় অনেক আদা পাহাড়ি উচুঁ চালা জমি রয়েছে যেগুলো প্রায় সময় পতিত গোচারণ ভূমি হিসেবে পরে থাকে। তার মতে ওই সব জমির মালিকরা চা বাগান করলে ভালুকর কৃষিতে অতি অল্প সময়েই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩
প্রতিনিধি ভালুকা (ময়মনসিংহ)
এক সময় সবুজ পাতার চা বাগানের মনোরম দৃশ্য দেখতে এ অঞ্চলের মানুষকে যেতে হতো সুদুর সিলেট কিংবা শ্রীমঙ্গলে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার শিল্প সমৃদ্ধ হবিরবাড়ী গ্রামে চা বাগান করে স্থানীয় কৃষিতে চমক লাগিয়েছেন ওই গ্রামের হাজী শহীদুল ইসলাম। উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে নিভৃত পল্লীর আদা পাহাড়ি উচুঁ উঁচু তিনটি চালায় শোভা পাচ্ছে সাড়ি সাড়ি চা গাছ। যেখানে আর মাত্র এক বছর পর বাগান মালিরা পিঠে টুরকি ঝুলিয়ে দল বেধে গাছ হতে সংগ্রহ করবে চায়ের কচিপাতা। পাশেই রয়েছে বাগান মালিকের দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র গ্রীণ অরণ্য পার্ক। পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সামান্য পথ হাটলেই পরিচিত হতে পারবে ওই বাগানের চা গাছের সাথে।
গত সোমবার দুপুরে হবিরবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চা বাগানে শ্রমিকদের কাজ তদারকিতে ব্যস্ত রয়েছেন হাজী শহীদুল ইসলাম। কাজের ফাকে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান সিলেট, চিটাগাং ও পঞ্চগড়ের মত ভালুকার কয়েকটি গ্রামের ভূমি রয়েছে যেখানে চা আবাদে ব্যাপক সফলতা পাওয়ার মত। তার মধ্যে নিজের গ্রাম হবিরবাড়ীতে রয়েছে উচুঁ উঁচু লাল মাটির চালা জমি যেখানে চা আবাদ সম্ভব। উঁচু হতে ঢালু কাঠামোর জমিতে বৃষ্টির পানি জমেনা তাই টেক টিলা আকৃতির এ জমি চা আবাদের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় হতে প্রতি পিস ৫ টাকা হিসাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৩০ হাজার চা গাছের চারা কিনে আনেন। ৬০ হাজার টাকার মত খরচে ৩টি চালার ১০ একর জমির মাটি চাষ করে তাতে পঞ্চগড়ের শ্রমিক দিয়ে চারা গুলি রোপণ করান। তাতেও প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রথম দিকে পঞ্চগড়ের শ্রমিকরা বাগানে চাড়ার পরিচর্যা করার বিষয়ে এলাকার শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে ৩টি চালার ৩টি বাগানের চা গাছ গুলোর বয়স দুই বছর হওয়ায় দেড় থেকে ২ ফুট উচুঁ হয়ে ডাল পালায় সবুজ পাতা ছড়াচ্ছে। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গাছগুলো ঝুপড়ি আকৃতিতে রুপ নেবে। আর তখন সিলেট, শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের মতো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে ভালুকার নতুন চা বাগানগুলো। আগামী এক বছরের মধ্যে বাগানের চা পাতা বিক্রয়োপযোগী হবে বলে তিনি আশা করছেন। গাছে গাছে নতুন পাতা বের হওয়ার পর লাল মাকড়সা আক্রমণ করে যে কারণে এক সপ্তাহ পর পর সারা বাগানে কীটনাশক ছিটানো লাগে। এছাড়া কিছুদিন পর পর গাছের চারিদিকের মাটি কুপিয়ে তাতে পানি সেচ দিতে হয়। বাগান পরিচর্যার জন্য সব সময় ১০-১৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন।
নিজের বাগানের প্রসার বৃদ্ধি ও এলাকার মানুষকে চা আবাদে আগ্রহ বাড়ানোর লক্ষে নিজস্ব নার্সারিতে ২৪ হাজার চা গাছের কলম তৈরি করেছেন। তিনি জানান চা আবাদে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আকাশমণির বাগান করা থেকে এলাকার কৃষকরা বিরত থাকবেন। চা রপ্তানিযোগ্য অর্থকরী ফসল হওয়ায় এর চাহিদা সব সময় রয়েছে। তার বাগান হতে অর্গানিক চা তৈরির লক্ষ্যে নিজে একটি মিনি ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যাতে এলাকার কৃষকরা চায়ের আবাদ করলে স্থানীয়ভাবে সুবিধা পেতে পারেন। উপজেলার হবিরবাড়ী, কাঠালী, বাশিল, খুর্দ, মেহেরাবাড়ী এলাকায় অনেক আদা পাহাড়ি উচুঁ চালা জমি রয়েছে যেগুলো প্রায় সময় পতিত গোচারণ ভূমি হিসেবে পরে থাকে। তার মতে ওই সব জমির মালিকরা চা বাগান করলে ভালুকর কৃষিতে অতি অল্প সময়েই অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।