শিক্ষক সংকট-সক্ষমতার অভাবে অচল বেশিরভাগ শিক্ষালয়ের কম্পিউটার ল্যাব

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করে তুলতে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে সৈয়দপুরে। এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবে চলছে বেহাল দশা। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাব ব্যবহারই করা হয় না। ল্যাব পরিচালনায় কম্পিউটার শিক্ষকের সঙ্কট রয়েছে। আবার শিক্ষক থাকলেও তাদের রয়েছে সক্ষমতার অভাব। আর স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের তদারকি না থাকায় ল্যাবগুলো নাম সর্বস্ব ল্যাবে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদপ্তর থেকে উপজেলায় ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচির (সেসিপ) আওতায় ৫টি আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। প্রতিটি ল্যাবে লেনভো ব্রান্ডের ১৭ থেকে ২২টি ল্যাপটপ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত উপকরণ দেয়া হয়। এসব ল্যাব স্থাপনে ব্যয় হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। সরেজমিনে খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের ভেতরে লেখা শেখ ডিজিটাল রাসেল কম্পিউটার ল্যাব, ভেতরে কোন কম্পিউটার নেই। কিছু অব্যবহৃত মালপত্র ও পুরাতন বই-খাতা রাখা আছে। কম্পিউটারের ব্যবহারিক ক্লাস কোথায় হয় নবম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা অবাক যেন এমন শব্দের সঙ্গে পরিচিতি নেই তাদের। তারা জানান, একদিনও ল্যাবে তাদের ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই রকম। সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক জানান, ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ৩টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কক্ষ সঙ্কটের কারণে শিক্ষকরা সেটি শিক্ষক কমনরুম হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। খালিশা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ল্যাব চালানো প্রধান অন্তরায়, ইন্টারনেট সংযোগ পেতেও ভোগান্তি আছে। এছাড়া কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ না থাকায়ও সমস্যা হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল কম্পিটার ল্যাবে দেয়া ২২টি ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। এগুলো প্রতিষ্ঠানে দেয়ার কিছুদিন পর থেকেই ৫টি অকেজো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মেরামত করা হয়নি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী আছে ১০০ থেকে ২০০ জন। একসঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া কষ্টকর হয়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগে জানান, কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী নন। তারা অনলাইন কিংবা কম্পিউটারের কাজ বাইরে কম্পিউটার দোকান থেকে করেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ল্যাপটপ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এতে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত ল্যাবগুলো শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসছে না। সৈয়দপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক লোকমান হাকিম বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে ভালো করা যায়। আমাদের কলেজে কম্পিউটার ল্যাব সবসময় সচল থাকে। আমরা প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীকে গ্রুপ করে একেকদিন একেক গ্রুপকে ব্যবহারিক ক্লাসে নিয়ে আসি এবং শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান এবং সহজসাধ্য অনেক প্রোগ্রামই শিখিয়ে দিচ্ছি। ল্যাবের দূরাবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা ইয়াসমিন বলেন, সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব চালু রাখার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। ক্লাস্টার করে করে দায়িত্বশীলরা এখন ল্যাবগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

শিক্ষক সংকট-সক্ষমতার অভাবে অচল বেশিরভাগ শিক্ষালয়ের কম্পিউটার ল্যাব

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করে তুলতে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে সৈয়দপুরে। এ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপিত শেখ রাসেল কম্পিউটার ল্যাবে চলছে বেহাল দশা। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাব ব্যবহারই করা হয় না। ল্যাব পরিচালনায় কম্পিউটার শিক্ষকের সঙ্কট রয়েছে। আবার শিক্ষক থাকলেও তাদের রয়েছে সক্ষমতার অভাব। আর স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের তদারকি না থাকায় ল্যাবগুলো নাম সর্বস্ব ল্যাবে পরিণত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদপ্তর থেকে উপজেলায় ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচির (সেসিপ) আওতায় ৫টি আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। প্রতিটি ল্যাবে লেনভো ব্রান্ডের ১৭ থেকে ২২টি ল্যাপটপ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত উপকরণ দেয়া হয়। এসব ল্যাব স্থাপনে ব্যয় হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। সরেজমিনে খালিশা বেলপুকুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষের ভেতরে লেখা শেখ ডিজিটাল রাসেল কম্পিউটার ল্যাব, ভেতরে কোন কম্পিউটার নেই। কিছু অব্যবহৃত মালপত্র ও পুরাতন বই-খাতা রাখা আছে। কম্পিউটারের ব্যবহারিক ক্লাস কোথায় হয় নবম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তারা অবাক যেন এমন শব্দের সঙ্গে পরিচিতি নেই তাদের। তারা জানান, একদিনও ল্যাবে তাদের ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই রকম। সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক জানান, ১৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ৩টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কক্ষ সঙ্কটের কারণে শিক্ষকরা সেটি শিক্ষক কমনরুম হিসেবেও ব্যবহার হয়ে থাকে। খালিশা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ল্যাব চালানো প্রধান অন্তরায়, ইন্টারনেট সংযোগ পেতেও ভোগান্তি আছে। এছাড়া কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ না থাকায়ও সমস্যা হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল কম্পিটার ল্যাবে দেয়া ২২টি ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। এগুলো প্রতিষ্ঠানে দেয়ার কিছুদিন পর থেকেই ৫টি অকেজো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মেরামত করা হয়নি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী আছে ১০০ থেকে ২০০ জন। একসঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া কষ্টকর হয়।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগে জানান, কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকেই কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী নন। তারা অনলাইন কিংবা কম্পিউটারের কাজ বাইরে কম্পিউটার দোকান থেকে করেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ল্যাপটপ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এতে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত ল্যাবগুলো শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসছে না। সৈয়দপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক লোকমান হাকিম বলেন, সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে ভালো করা যায়। আমাদের কলেজে কম্পিউটার ল্যাব সবসময় সচল থাকে। আমরা প্রতি ক্লাসের শিক্ষার্থীকে গ্রুপ করে একেকদিন একেক গ্রুপকে ব্যবহারিক ক্লাসে নিয়ে আসি এবং শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের প্রাথমিক জ্ঞান এবং সহজসাধ্য অনেক প্রোগ্রামই শিখিয়ে দিচ্ছি। ল্যাবের দূরাবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা ইয়াসমিন বলেন, সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব চালু রাখার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। ক্লাস্টার করে করে দায়িত্বশীলরা এখন ল্যাবগুলো সচল করার চেষ্টা চলছে।