আদায় চলছে অতিরিক্ত বাসভাড়া

ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিল যাত্রীকে

‘যত সিট, তত যাত্রী পরিবহনে’ সরকারি নির্দেশনা মানছে না বাস-মিনিবাসের মালিকরা। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাসে দাঁড়িয়ে ও গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করছে চালকরা। ‘সিটিং সার্ভিস বন্ধ, তাই মালিকের নির্দেশ যত ইচ্ছা যাত্রী উঠাও। গাদাগাদি তো হবেই। দাঁড়ানোর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী নিবো। ঢাকায় এখন সব লোকাল।’

এভাবে কথাগুলো বললেন যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের বাস ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক কন্ট্রাক্টর। এই বাসটি আগের সিটিং সার্ভিসে চলাচল করতো। নতুন ভাড়া কার্যকরের আগে থেকে তারা দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া নিতো। এই রুটে সর্বনি¤œ বাস ভাড়া ছিল ১২ টাকা।

জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত ৮ নভেম্বর দূরপাল্লার বাসে ২৭ শতাংশ ও মহানগরী পর্যায়ে বাসে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। সর্বনি¤œ ভাড়া বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিটিং সার্ভিসের নামে আগে থেকে বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া ১০-১৫ টাকা আদায় করা হতো। নতুন ভাড়া ঘোষণা হওয়ার পর তা আরও বাড়িয়ে দেয় বাস মালিকরা। এরপর থেকে ঢাকা মহানগরীর সব সিটিং বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া আদায় করা হয় ১৫-২৫ টাকা।

এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের স্টাফদের বাগবিত-া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের ভাড়া নিয়ে বাগবিত-ার জেরে যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ বাসের এক চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই প্রেক্ষিতে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রোববারের মধ্যে সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসসহ যত প্রকার বেআইনি সার্ভিস আছে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। আর বিআরটিএর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের বিরুদ্ধে রোববার থেকে অভিযান শুরু হবে।’

গতকাল ঢাকা মহানগরীর সব বাস-মিনিবাস থেকে ‘সিটিং সার্ভিস লেখা’ সব স্টিকার তুলে দেয়া হয়েছে। সব বাসের সিটের অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বাস-মিনিবাসে সিটের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের কারণে গাদাগাদি হচ্ছে। অথচ আদায় করা হচ্ছে বর্ধিত ভাড়া। এ নিয়ে যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে বাগবিত-া লেগেই আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষেধ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যত সিট তত যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু বাস-মিনিবাসের মালিকরা তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিঠুন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ী রুটের রাইদা পরিবহন সরকারের কোন নির্দেশ মানে না। বাসটি সিটিংয়ের নামের দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করে। বাসে উঠলে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়। নতুন ভাড়ায় তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন কিলোমিটারের কম দূরত্বেও ২০ টাকা ভাড়া নেয়। সিটিং সার্ভিস বাস কথা বলে এখন যাত্রী নিচ্ছে গাদাগাদি করে। ভাড়া বেশিই নিচ্ছে।’

গুলিস্তান এলাকায় মাসুম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদপুর-কাঁচপুর রুটের বাস রজনীগন্ধা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। এ বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া নেয়া হয় ২৫ টাকা। ৩ কিলোমিটারের কম দূরত্বে একই ভাড়া নেয়া হয়। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেই খারাপ ব্যবহার করে। সিটের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়। বাসের ভিতরে গাদাগাদি অবস্থা। অথচ নতুন ভাড়া বাসের সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা। এরা সরকারি এই নির্দেশনা মানছে না।’

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে যত সিট ও তত যাত্রী পরিবহন করতে হবে। বেশি ভাড়া নেয়া যাবে না। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। সাধারণত বাসের সিট অনুপাতে যাত্রী ধারণ বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সিটিংয়ের কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা অন্যায়।’ তাই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মাধ্যমে এ সব বাস মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিআরটিএ’র সূত্র জানায়, নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় এবং সিএনজি চালিত বাসে নতুন ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর ৬টি বাসকে জরিমানা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুরে টিটিপাড়া ট্রাফিকবক্সের পাশে এই আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং ব্যবস্থা নেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক। এ সময় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ৬টি বাসকে মোট ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট প্রতিটি গাড়িতে ঝোলানো থাকবে, যেন সাধারণ মানুষ সেই চার্টগুলো দেখে ভাড়া দিতে পারে। কিন্তু অনেক গাড়িতে আমরা সেই চার্টটি পাইনি। অনেক বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথাও যাত্রীরা বলেছেন। এজন্য ৬টি বাসকে আমরা ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এই ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

ভাড়া নিয়ে বিতর্ক

চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিল যাত্রীকে

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার এলাকায় ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে চলন্ত বাস থেকে আবদুল হামিদ (৫১) নামে এক যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে হেল্পার। এ ঘটনায় পুলিশ ওই বাসের চালক মো. আশরাফ (১৮) ও হেল্পার মো. হানিফকে আটক করেছে। গত শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আবদুল হামিদ ওয়াসার মোড় থেকে লালখান বাজার গিয়ে পাঁচ টাকা ভাড়া দেন। কিন্তু হেল্পার আট টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে এ নিয়ে হেল্পার হানিফের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নিচে ফেলা দেয়া হয়।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে সিবিচগামী ১০ নম্বর (চট্ট মেট্টো জ-১১-১৮৭২) বাসের যাত্রী ছিলেন আবদুল হামিদ। ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে হামিদকে গাড়ি থেকে ফেলে দেন বাসের চালক ও হেল্পার। আহত যাত্রী হামিদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত চালক ও হেল্পারকে আটক এবং বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

ভাড়া বেশি না দেয়ায় নারী যাত্রীকে অপমান

রাজধানীতে ভাড়া বেশি না দেয়ায় এক নারী যাত্রীকে অপমান করে ধমক দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দিল বোরাক বাসের কনট্রাকটার ও ড্রাইভার। গত শুক্রবার রাত দশটায় রাজধানীতে বঙ্গভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বোরাক বাসের নম্বর হচ্ছেÑ ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৪৫৩।

সরেজমিন দেখা যায়, বোরকা পরিহিত ওই নারী যাত্রী গুলিস্তান থেকে বোরাক বাসে উঠে ধোলাইপাড় যাওয়ার উদ্যেশ্যে। কন্ট্রাকটার ভাড়া চাওয়ার পর ২০ টাকা নোট বের করে দিয়ে নারী যাত্রী কন্ট্রাকটারকে বলেন আমি ধোলাইপাড় যাব। এ সময় কন্টাকটার যাত্রীকে ৫ টাকা ফেরত দেয়। যাত্রী বলেন, ‘ভাই ১০ টাকা রাখেন বেশি রাইখেন না।’ কিন্তু কন্ট্রাকটার যাত্রীর কথা না শুনে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে একপর্যায়ে ঝগড়া বাধে কন্ট্রাকটার ও নারী যাত্রীদের মাঝে। কন্ট্রাকটার যাত্রীকে ধমক দিয়ে বলেন, বোরাক বাসে উঠলে এখন থেকে জুরাইনের আগে যেখানে নামবেন ১৫ টাকা ভাড়াই দিতে হবে। আপনি বাস থেকে নামেন। ওস্তাদ বাস থামান, এই মহিলাকে নামাইয়া দেন। এ সময় বাসের ড্রাইভার তার কন্ট্রাকটারকে বলে, এই মহিলাকে বাস থেকে নামিয়ে দে।’

পরে কন্ট্রাকটারের কথা মতো ড্রাইভার বাস থামালে বঙ্গভবনের সামনে ওই নারী যাত্রীকে বাস থেকে কন্ট্রাকটার নামিয়ে দেন। এ সময় বাসের নারী ও অন্যযাত্রীরা প্রতিবাদ করলে বোরাক বাসের শ্রমিকরা যাত্রীদের কথা শোনেননি।

এ বিষয়ে ওই বোরাক বাসের ড্রাইভার জানান, ‘ওই মহিলা আমগো কথা না শুইনা তেড়ামি করেছে দেইখ্খা তাকে বাস থাইকা নামাইয়া দিছি। ডিজেলের দাম বাড়ার পর বাসের মহাজন এখন জমা নেয় ১৪০০ টাকা। আগে নিত ১১০০ টাকা। তো আমগো যেমনে পোশায় তেমনিভাবে যাত্রীদের কাছ ভাড়া নিব।’

জানা গেছে, গুলিস্তান থেকে জুরাইন পর্যন্ত আগে বোরাক বাসে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন নিচ্ছে ১৫ টাকা। কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী অভিযোগ করেন, বর্তমানে বোরাক বাসের স্টাফরা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এবং তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া না দিলে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের অপমান অপদস্ত করছে এবং বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছে।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

আদায় চলছে অতিরিক্ত বাসভাড়া

ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিল যাত্রীকে

image

‘যত সিট, তত যাত্রী পরিবহনে’ সরকারি নির্দেশনা মানছে না বাস-মিনিবাসের মালিকরা। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাসে দাঁড়িয়ে ও গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করছে চালকরা। ‘সিটিং সার্ভিস বন্ধ, তাই মালিকের নির্দেশ যত ইচ্ছা যাত্রী উঠাও। গাদাগাদি তো হবেই। দাঁড়ানোর পাশাপাশি ছাদেও যাত্রী নিবো। ঢাকায় এখন সব লোকাল।’

এভাবে কথাগুলো বললেন যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের বাস ট্রান্স সিলভা পরিবহনের এক কন্ট্রাক্টর। এই বাসটি আগের সিটিং সার্ভিসে চলাচল করতো। নতুন ভাড়া কার্যকরের আগে থেকে তারা দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া নিতো। এই রুটে সর্বনি¤œ বাস ভাড়া ছিল ১২ টাকা।

জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত ৮ নভেম্বর দূরপাল্লার বাসে ২৭ শতাংশ ও মহানগরী পর্যায়ে বাসে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। সর্বনি¤œ ভাড়া বাসে ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিটিং সার্ভিসের নামে আগে থেকে বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া ১০-১৫ টাকা আদায় করা হতো। নতুন ভাড়া ঘোষণা হওয়ার পর তা আরও বাড়িয়ে দেয় বাস মালিকরা। এরপর থেকে ঢাকা মহানগরীর সব সিটিং বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া আদায় করা হয় ১৫-২৫ টাকা।

এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে রাজধানীরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের স্টাফদের বাগবিত-া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের ভাড়া নিয়ে বাগবিত-ার জেরে যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ বাসের এক চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এই প্রেক্ষিতে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রোববারের মধ্যে সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসসহ যত প্রকার বেআইনি সার্ভিস আছে তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। আর বিআরটিএর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ‘সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের বিরুদ্ধে রোববার থেকে অভিযান শুরু হবে।’

গতকাল ঢাকা মহানগরীর সব বাস-মিনিবাস থেকে ‘সিটিং সার্ভিস লেখা’ সব স্টিকার তুলে দেয়া হয়েছে। সব বাসের সিটের অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বাস-মিনিবাসে সিটের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের কারণে গাদাগাদি হচ্ছে। অথচ আদায় করা হচ্ছে বর্ধিত ভাড়া। এ নিয়ে যাত্রী ও বাস স্টাফদের মধ্যে বাগবিত-া লেগেই আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষেধ করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যত সিট তত যাত্রী পরিবহনের নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু বাস-মিনিবাসের মালিকরা তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিঠুন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ী রুটের রাইদা পরিবহন সরকারের কোন নির্দেশ মানে না। বাসটি সিটিংয়ের নামের দুই-তিন গুণ ভাড়া আদায় করে। বাসে উঠলে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়। নতুন ভাড়ায় তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিন কিলোমিটারের কম দূরত্বেও ২০ টাকা ভাড়া নেয়। সিটিং সার্ভিস বাস কথা বলে এখন যাত্রী নিচ্ছে গাদাগাদি করে। ভাড়া বেশিই নিচ্ছে।’

গুলিস্তান এলাকায় মাসুম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদপুর-কাঁচপুর রুটের বাস রজনীগন্ধা পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে। এ বাসে সর্বনি¤œ ভাড়া নেয়া হয় ২৫ টাকা। ৩ কিলোমিটারের কম দূরত্বে একই ভাড়া নেয়া হয়। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেই খারাপ ব্যবহার করে। সিটের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়। বাসের ভিতরে গাদাগাদি অবস্থা। অথচ নতুন ভাড়া বাসের সর্বনি¤œ ভাড়া ১০ টাকা ও মিনিবাসে ৮ টাকা। এরা সরকারি এই নির্দেশনা মানছে না।’

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সংবাদকে বলেন, ‘সিটিং ও গেইটলক সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে যত সিট ও তত যাত্রী পরিবহন করতে হবে। বেশি ভাড়া নেয়া যাবে না। দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ। সাধারণত বাসের সিট অনুপাতে যাত্রী ধারণ বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সেখানে সিটিংয়ের কথা বলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা অন্যায়।’ তাই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মাধ্যমে এ সব বাস মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিআরটিএ’র সূত্র জানায়, নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় এবং সিএনজি চালিত বাসে নতুন ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর ৬টি বাসকে জরিমানা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুরে টিটিপাড়া ট্রাফিকবক্সের পাশে এই আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং ব্যবস্থা নেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক। এ সময় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ৬টি বাসকে মোট ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট প্রতিটি গাড়িতে ঝোলানো থাকবে, যেন সাধারণ মানুষ সেই চার্টগুলো দেখে ভাড়া দিতে পারে। কিন্তু অনেক গাড়িতে আমরা সেই চার্টটি পাইনি। অনেক বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথাও যাত্রীরা বলেছেন। এজন্য ৬টি বাসকে আমরা ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এই ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

ভাড়া নিয়ে বিতর্ক

চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিল যাত্রীকে

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার এলাকায় ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে চলন্ত বাস থেকে আবদুল হামিদ (৫১) নামে এক যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে হেল্পার। এ ঘটনায় পুলিশ ওই বাসের চালক মো. আশরাফ (১৮) ও হেল্পার মো. হানিফকে আটক করেছে। গত শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আবদুল হামিদ ওয়াসার মোড় থেকে লালখান বাজার গিয়ে পাঁচ টাকা ভাড়া দেন। কিন্তু হেল্পার আট টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে এ নিয়ে হেল্পার হানিফের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নিচে ফেলা দেয়া হয়।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে সিবিচগামী ১০ নম্বর (চট্ট মেট্টো জ-১১-১৮৭২) বাসের যাত্রী ছিলেন আবদুল হামিদ। ভাড়া নিয়ে বিতর্কের জেরে হামিদকে গাড়ি থেকে ফেলে দেন বাসের চালক ও হেল্পার। আহত যাত্রী হামিদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত চালক ও হেল্পারকে আটক এবং বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

ভাড়া বেশি না দেয়ায় নারী যাত্রীকে অপমান

রাজধানীতে ভাড়া বেশি না দেয়ায় এক নারী যাত্রীকে অপমান করে ধমক দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দিল বোরাক বাসের কনট্রাকটার ও ড্রাইভার। গত শুক্রবার রাত দশটায় রাজধানীতে বঙ্গভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বোরাক বাসের নম্বর হচ্ছেÑ ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৪৫৩।

সরেজমিন দেখা যায়, বোরকা পরিহিত ওই নারী যাত্রী গুলিস্তান থেকে বোরাক বাসে উঠে ধোলাইপাড় যাওয়ার উদ্যেশ্যে। কন্ট্রাকটার ভাড়া চাওয়ার পর ২০ টাকা নোট বের করে দিয়ে নারী যাত্রী কন্ট্রাকটারকে বলেন আমি ধোলাইপাড় যাব। এ সময় কন্টাকটার যাত্রীকে ৫ টাকা ফেরত দেয়। যাত্রী বলেন, ‘ভাই ১০ টাকা রাখেন বেশি রাইখেন না।’ কিন্তু কন্ট্রাকটার যাত্রীর কথা না শুনে তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে একপর্যায়ে ঝগড়া বাধে কন্ট্রাকটার ও নারী যাত্রীদের মাঝে। কন্ট্রাকটার যাত্রীকে ধমক দিয়ে বলেন, বোরাক বাসে উঠলে এখন থেকে জুরাইনের আগে যেখানে নামবেন ১৫ টাকা ভাড়াই দিতে হবে। আপনি বাস থেকে নামেন। ওস্তাদ বাস থামান, এই মহিলাকে নামাইয়া দেন। এ সময় বাসের ড্রাইভার তার কন্ট্রাকটারকে বলে, এই মহিলাকে বাস থেকে নামিয়ে দে।’

পরে কন্ট্রাকটারের কথা মতো ড্রাইভার বাস থামালে বঙ্গভবনের সামনে ওই নারী যাত্রীকে বাস থেকে কন্ট্রাকটার নামিয়ে দেন। এ সময় বাসের নারী ও অন্যযাত্রীরা প্রতিবাদ করলে বোরাক বাসের শ্রমিকরা যাত্রীদের কথা শোনেননি।

এ বিষয়ে ওই বোরাক বাসের ড্রাইভার জানান, ‘ওই মহিলা আমগো কথা না শুইনা তেড়ামি করেছে দেইখ্খা তাকে বাস থাইকা নামাইয়া দিছি। ডিজেলের দাম বাড়ার পর বাসের মহাজন এখন জমা নেয় ১৪০০ টাকা। আগে নিত ১১০০ টাকা। তো আমগো যেমনে পোশায় তেমনিভাবে যাত্রীদের কাছ ভাড়া নিব।’

জানা গেছে, গুলিস্তান থেকে জুরাইন পর্যন্ত আগে বোরাক বাসে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন নিচ্ছে ১৫ টাকা। কয়েকজন ভুক্তভোগী যাত্রী অভিযোগ করেন, বর্তমানে বোরাক বাসের স্টাফরা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এবং তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া না দিলে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের অপমান অপদস্ত করছে এবং বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছে।