বিচারকের ‘পাওয়ার সিজ’ করতে চিঠি দেয়া হবে বললেন আইনমন্ত্রী

রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণাকারী বিচারকের পাওয়ার সিজ (ক্ষমতা কেড়ে নেয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

গত ১১ নভেম্বর ওই মামলার রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এমনকি আলামত না পেলে মামলা না নেয়ারও সুপারিশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওনার রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। অবজারভেশনে (পর্যবেক্ষণ) এ সম্পর্কিত উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন এ নিয়ে বলতে পারি- এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। বাংলাদেশের আইনে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধে মামলা দায়েরের কোন সময়সীমা নেই। এই কারণে আগামীকাল প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় সে জন্য একটা চিঠি লিখছি।

গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার। রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়।

রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে আদালত পুলিশের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দেন। পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে ধর্ষণের আলামত থাকে না। এরপর কোন ভিকটিম মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মামলা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোন মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় অযথা আদালতের সময় নষ্ট হয়।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণের এই মামলাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। এই মামলায় বিচার করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এই সময়ে আরও অনেক মামলা নিষ্পত্তি করা যেত। অথচ বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী ঘটনাস্থলের কোন আলামত নেই। এ ধরনের মামলা গ্রহণ করে এবং তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে জনগণের সময় নষ্ট করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন।

পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোন আলামত ছাড়া, মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ ছাড়া এই অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

আদালতের এমন পর্যবেক্ষণে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন। রাজধানীতে কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজধানীতে মশাল জ্বালিয়ে পদযাত্রা করা হয়েছে। ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীনতা রাষ্ট্র আর কত দিন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘শিকল ভাঙা’র এই পদযাত্রার সময় নারীরা ‘রাজপথে নারীর সাড়া জাগরণ নতুন ধারা’, ‘ঘুম ভাঙানো মাসিপিসি চলো পুরুষতন্ত্র পিষি’, ‘আর কত আজব ইনকিলাব হোক আসল ইনকিলাব’ ‘৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?,’ ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীন, আর কত দিন’, ‘চলন-বলন- পোশাক রাখো, রাষ্ট্র এবার দায় নাও’, ‘পুরুষের ক্ষমতা, ভেঙে হোক সমতা’, ‘পথে-ঘাটে দিনে-রাতে, চলতে চাই নিরাপদে- ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

রেইনট্রি ধর্ষণ মামলা

বিচারকের ‘পাওয়ার সিজ’ করতে চিঠি দেয়া হবে বললেন আইনমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণাকারী বিচারকের পাওয়ার সিজ (ক্ষমতা কেড়ে নেয়া) করতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

গত ১১ নভেম্বর ওই মামলার রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এমনকি আলামত না পেলে মামলা না নেয়ারও সুপারিশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওনার রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। অবজারভেশনে (পর্যবেক্ষণ) এ সম্পর্কিত উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন এ নিয়ে বলতে পারি- এটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। বাংলাদেশের আইনে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধে মামলা দায়েরের কোন সময়সীমা নেই। এই কারণে আগামীকাল প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় সে জন্য একটা চিঠি লিখছি।

গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার। রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়।

রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে আদালত পুলিশের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দেন। পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে ধর্ষণের আলামত থাকে না। এরপর কোন ভিকটিম মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে মামলা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, ধর্ষণের আলামত না পেলে পুলিশ যেন কোন মামলা গ্রহণ না করে। এ ধরনের মামলায় অযথা আদালতের সময় নষ্ট হয়।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, রেইনট্রি হোটেল ধর্ষণের এই মামলাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর। এই মামলায় বিচার করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এই সময়ে আরও অনেক মামলা নিষ্পত্তি করা যেত। অথচ বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী ঘটনাস্থলের কোন আলামত নেই। এ ধরনের মামলা গ্রহণ করে এবং তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে জনগণের সময় নষ্ট করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন।

পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোন আলামত ছাড়া, মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ ছাড়া এই অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

আদালতের এমন পর্যবেক্ষণে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন। রাজধানীতে কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজধানীতে মশাল জ্বালিয়ে পদযাত্রা করা হয়েছে। ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীনতা রাষ্ট্র আর কত দিন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘শিকল ভাঙা’র এই পদযাত্রার সময় নারীরা ‘রাজপথে নারীর সাড়া জাগরণ নতুন ধারা’, ‘ঘুম ভাঙানো মাসিপিসি চলো পুরুষতন্ত্র পিষি’, ‘আর কত আজব ইনকিলাব হোক আসল ইনকিলাব’ ‘৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?,’ ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীন, আর কত দিন’, ‘চলন-বলন- পোশাক রাখো, রাষ্ট্র এবার দায় নাও’, ‘পুরুষের ক্ষমতা, ভেঙে হোক সমতা’, ‘পথে-ঘাটে দিনে-রাতে, চলতে চাই নিরাপদে- ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।