এক চক্রই চুরি করেছে ২ শতাধিক গাড়ি

রাস্তা বা গ্যারেজে পার্কিং করা গাড়ি চুরি করা তাদের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। ডুব্লিকেট চাবি অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে যে কোন গাড়ি তারা চুরি করে নিয়ে যান চোখের পলক ফেলার আগেই। দেশের এমন কোন জেলা নেই যে এরা গাড়ি চুরি করেনি। গত ১০ থেকে ১২ বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২শর বেশি গাড়ি চুরি করেছে চক্রটি। চক্রের হোতা আজিজুল হক ওরফে রাজু চুরির নেতৃত্ব দিতো। তবে এবার ধরা পড়লো ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (ডিবি) বিভাগের জালে। চক্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুরি করা ৫টি পিক্যাপও উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের কাছ থেকে গাড়ি চুরির কৌশল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ডিবি।

গতকাল চক্রের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। বলেন, ডেমরা থানার সারুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আজিজুল শেখ ওরফে রাজু, মো. ফজলুল হক ওরফে ফজুল, মো. ইউসুফ, মো. আবদুল্লাহ শিকারী এবং উম্মে হ্যানি মিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে কদমতলী থানা এলাকায় চুরি হয়ে যাওয়া একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আজিজুলের দেয়া তথ্যে যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল এলাকার নিমতলা ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে আরও চারটি চোরাই পিকআপ উদ্ধার করা হয়।

উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, গত ১০ অক্টোবর কদমতলী থানা এলাকা থেকে দুটি পিকাপ চুরির ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির ওয়ারী ডিবিশন। অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তরিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমানের টিম মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে গাড়ি চুরিতে পেশাদার এ চক্রের সন্ধান মিলে। এরপর তাদের কার্যক্রমের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গাড়ি চুরির পর অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে যোগাযোগ করেন গাড়ির মালিকের সঙ্গে। গাড়ি ফেরত দেয়ার কথা বলে দাবি করেন মোটা অঙ্কের টাকা। মালিক পুলিশের কাছে গেলে গাড়ি ফেরত না দিয়ে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে ফেলেন। এভাবে বছরের পর পর বহু গাড়ি চুরি করে বিক্রি করে আসছিল চক্রটি। চক্রটির দলনেতা আজিজুলের নেতৃত্বে গত ১০ থেকে ১২ বছরে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২ শতাধিক গাড়ি চুরি করেছে। এসব গাড়ি অধিকাংশ তারা যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছে।

ডিসি আশরাফ জানান, গ্রেপ্তারকৃদের মূল টার্গেট পিক্যাপ চুরি করা। পণ্যবাহী এসব পিক্যাপ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে রাখে। এরপর অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনে ও সিম ব্যবহার করে গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি ফেরত দেয়ার শর্তে টাকা দাবি করতো। বিকাশের মাধ্যমে চাহিদা মতো টাকা পেয়ে চোরাই গাড়ি দূরবর্তী কোন স্থানে রেখে গাড়ির মালিককে গাড়ি নিয়ে যেতে বলতো। এরপর গাড়ির কাগজপত্র দেয়ার জন্য পুনরায় টাকা আদায় করতো। যেসব গাড়ির মালিক গ্রেপ্তারকৃতদের চাহিদা মতো টাকা দিত না কিংবা পুলিশে অভিযোগ করতো সেসকল গাড়ি ফেরত না দিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রয় করতো।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গত ১৫ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এদের প্রধান টার্গেট পিক্যাপ ভ্যান। কোন গাড়ি এরা একাধিকবার চুরি করতো। মালিক এবং গাড়ি বুঝে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি ফেরত দেয়ার কথা বলে। এ চক্রের দল নেতার নাম আজিজুল শেখ ওরফে রাজু। অন্যরা তার সহযোগী। আজিজুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

এক চক্রই চুরি করেছে ২ শতাধিক গাড়ি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাস্তা বা গ্যারেজে পার্কিং করা গাড়ি চুরি করা তাদের জন্য কোন কঠিন কাজ নয়। ডুব্লিকেট চাবি অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে যে কোন গাড়ি তারা চুরি করে নিয়ে যান চোখের পলক ফেলার আগেই। দেশের এমন কোন জেলা নেই যে এরা গাড়ি চুরি করেনি। গত ১০ থেকে ১২ বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২শর বেশি গাড়ি চুরি করেছে চক্রটি। চক্রের হোতা আজিজুল হক ওরফে রাজু চুরির নেতৃত্ব দিতো। তবে এবার ধরা পড়লো ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (ডিবি) বিভাগের জালে। চক্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে চুরি করা ৫টি পিক্যাপও উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের কাছ থেকে গাড়ি চুরির কৌশল সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় ডিবি।

গতকাল চক্রের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। বলেন, ডেমরা থানার সারুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. আজিজুল শেখ ওরফে রাজু, মো. ফজলুল হক ওরফে ফজুল, মো. ইউসুফ, মো. আবদুল্লাহ শিকারী এবং উম্মে হ্যানি মিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে কদমতলী থানা এলাকায় চুরি হয়ে যাওয়া একটি পিকআপ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আজিজুলের দেয়া তথ্যে যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল এলাকার নিমতলা ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে আরও চারটি চোরাই পিকআপ উদ্ধার করা হয়।

উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, গত ১০ অক্টোবর কদমতলী থানা এলাকা থেকে দুটি পিকাপ চুরির ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির ওয়ারী ডিবিশন। অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তরিকুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমানের টিম মামলাটি তদন্ত শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে গাড়ি চুরিতে পেশাদার এ চক্রের সন্ধান মিলে। এরপর তাদের কার্যক্রমের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গাড়ি চুরির পর অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে যোগাযোগ করেন গাড়ির মালিকের সঙ্গে। গাড়ি ফেরত দেয়ার কথা বলে দাবি করেন মোটা অঙ্কের টাকা। মালিক পুলিশের কাছে গেলে গাড়ি ফেরত না দিয়ে যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে ফেলেন। এভাবে বছরের পর পর বহু গাড়ি চুরি করে বিক্রি করে আসছিল চক্রটি। চক্রটির দলনেতা আজিজুলের নেতৃত্বে গত ১০ থেকে ১২ বছরে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২ শতাধিক গাড়ি চুরি করেছে। এসব গাড়ি অধিকাংশ তারা যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছে।

ডিসি আশরাফ জানান, গ্রেপ্তারকৃদের মূল টার্গেট পিক্যাপ চুরি করা। পণ্যবাহী এসব পিক্যাপ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে রাখে। এরপর অনিবন্ধিত মোবাইল ফোনে ও সিম ব্যবহার করে গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি ফেরত দেয়ার শর্তে টাকা দাবি করতো। বিকাশের মাধ্যমে চাহিদা মতো টাকা পেয়ে চোরাই গাড়ি দূরবর্তী কোন স্থানে রেখে গাড়ির মালিককে গাড়ি নিয়ে যেতে বলতো। এরপর গাড়ির কাগজপত্র দেয়ার জন্য পুনরায় টাকা আদায় করতো। যেসব গাড়ির মালিক গ্রেপ্তারকৃতদের চাহিদা মতো টাকা দিত না কিংবা পুলিশে অভিযোগ করতো সেসকল গাড়ি ফেরত না দিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রয় করতো।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গত ১৫ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এদের প্রধান টার্গেট পিক্যাপ ভ্যান। কোন গাড়ি এরা একাধিকবার চুরি করতো। মালিক এবং গাড়ি বুঝে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি ফেরত দেয়ার কথা বলে। এ চক্রের দল নেতার নাম আজিজুল শেখ ওরফে রাজু। অন্যরা তার সহযোগী। আজিজুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলা আদালতে বিচারাধীন।