অ্যামাজন বনভূমি ধ্বংসের নতুন রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬ চলছে। বন ও পরিবেশ রক্ষায় ওই সম্মেলনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই জানা গেলো অ্যামাজনে রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি নিধন হয়েছে গত অক্টোবরেই। দেশটির একটি সরকারি সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরের আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা, ৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৩৩৯ বর্গ মাইল) অ্যামাজনের রেইনফরেস্ট উজাড় হয়েছে। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই) বন উজাড়ের তথ্য নথিভুক্ত করা শুরুর পর থেকে অক্টোবরে বনভূমি নিধনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গত বছরের তুলনায় অক্টোবরেই বন নিধনের পরিমাণ ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

২০২০ সালে বেআইনিভাবে খননকাজ এবং গাছ কেটে কৃষি জমি তৈরি করার কারণে বননিধন চরমভাবে বেড়ে গেছে। ২০২০ সালে যে পরিমাণ বন ধ্বংস হয়েছে, ২০২১ সালেও একইভাবে আরও ৭ হাজার ৮৮০ বর্গকিলোমটিার বন উজাড় হয়েছে বছর শেষ হতে না হতেই।

গ্লাসগো সম্মেলনকে ঘিরে ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি নিধনের ইতি টানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো ২০২৮ সালের মধ্যে অবৈধভাবে বন উজাড় ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো বলছে, বোলসোনারোর আমলেই খনন কাজ আর কৃষি জমি তৈরির জন্য বননিধন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

গ্রিনপিস অ্যামাজন ক্যাম্পেইনের মুখপাত্র রোমুলো বাতিস্তা বলেন, বননিধন এবং আগুন লাগার ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং আদিবাসী ও স্থানীয়দের মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন করবে না। আইএনপিইর তথ্য-উপাত্ত বলছে, আমাজনে শুধু অক্টোবরেই ১১ হাজার পাঁচশর বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ছিল ১৭ হাজার তিনশ। কিন্তু ২০১৯ সালের পর এসব ঘটনা দ্রুত বেড়েছে এবং তখন ছিল সাত হাজার নয়শটি।

২০১৯ সালে জেইর বোলসোনারো ক্ষমতায় বসার পর অ্যামাজনের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার খোয়া গেছে এক বছরেই, যার আয়তন প্রায় লেবাননের সমান। গত দশকে এটা ছিল ৬ হাজার পাঁচশ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত এক বিশাল বনভূমি অ্যামাজন। ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯টি দেশজুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। অ্যামাজনের ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩ শতাংশ পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম ও ফরাসি গায়ানায়। পৃথিবীজুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেকই অ্যামাজনে।

অতিরিক্ত সময়ে গড়াল জলবায়ু সম্মেলন

গত শুক্রবার কপ২৬ সম্মেলনের পর্দা নামার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনে দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। স্কটল্যান্ডের প্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত দিনে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে সমাধানে না পৌঁছানোয় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। আলোচকেরা যুক্তিতর্ক চালিয়ে যাওয়ার কারণে সংবাদ সম্মেলনও বাতিল করা হয়। আলোচনাকারীদের শনিবার আবারও অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কপের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ধনীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। চূড়ান্ত খসড়া চুক্তিটি আটকে যাওয়ায় সময় একদিন বাড়ানো হলো। তবে এই প্রথমবার সম্মেলন পেছনো হয়নি, আগেও এমন ঘটনা ঘটে।

সম্মেলনে যোগ দেয়া সৌদি প্রতিনিধি আয়মান শাসলি বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়, এমন কোনও পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে তার দেশ। শেষ মুহূর্তে খসড়া থেকে চূড়ান্ত চুক্তিতে যাওয়ার বিষয়ে কাজ করছেন সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি একক ভূমিকা রাখে কয়লা। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ১৯০টি দেশ ও সংস্থা কয়লার ব্যবহার ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কপ২৬-এ যে চুক্তির খসড়া প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জোরালও বক্তব্য নেই বলে খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

image

অক্টোবরে ব্রাজিলে ৮৭৭ বর্গকিলোমিটার অ্যামাজনের রেইনফরেস্ট উজাড় হয়েছে- এএফপি

আরও খবর
ভারতীয় গম আফগানিস্তানে পাঠাতে সাহায্য করবে পাকিস্তান
বাইডেন-শি জিনপিং বৈঠকে বসছেন সোমবার
আরও বিষাক্ত হচ্ছে দিল্লির বাতাস

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

অ্যামাজন বনভূমি ধ্বংসের নতুন রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল

অ্যামাজন বনভূমি ধ্বংসের নতুন রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল

image

অক্টোবরে ব্রাজিলে ৮৭৭ বর্গকিলোমিটার অ্যামাজনের রেইনফরেস্ট উজাড় হয়েছে- এএফপি

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলন কপ২৬ চলছে। বন ও পরিবেশ রক্ষায় ওই সম্মেলনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এর মধ্যেই জানা গেলো অ্যামাজনে রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি নিধন হয়েছে গত অক্টোবরেই। দেশটির একটি সরকারি সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরের আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা, ৮৭৭ বর্গকিলোমিটার (৩৩৯ বর্গ মাইল) অ্যামাজনের রেইনফরেস্ট উজাড় হয়েছে। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (আইএনপিই) বন উজাড়ের তথ্য নথিভুক্ত করা শুরুর পর থেকে অক্টোবরে বনভূমি নিধনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গত বছরের তুলনায় অক্টোবরেই বন নিধনের পরিমাণ ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

২০২০ সালে বেআইনিভাবে খননকাজ এবং গাছ কেটে কৃষি জমি তৈরি করার কারণে বননিধন চরমভাবে বেড়ে গেছে। ২০২০ সালে যে পরিমাণ বন ধ্বংস হয়েছে, ২০২১ সালেও একইভাবে আরও ৭ হাজার ৮৮০ বর্গকিলোমটিার বন উজাড় হয়েছে বছর শেষ হতে না হতেই।

গ্লাসগো সম্মেলনকে ঘিরে ২০৩০ সালের মধ্যে বনভূমি নিধনের ইতি টানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল অন্যতম। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো ২০২৮ সালের মধ্যে অবৈধভাবে বন উজাড় ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশবাদি সংগঠনগুলো বলছে, বোলসোনারোর আমলেই খনন কাজ আর কৃষি জমি তৈরির জন্য বননিধন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

গ্রিনপিস অ্যামাজন ক্যাম্পেইনের মুখপাত্র রোমুলো বাতিস্তা বলেন, বননিধন এবং আগুন লাগার ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এবং আদিবাসী ও স্থানীয়দের মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন করবে না। আইএনপিইর তথ্য-উপাত্ত বলছে, আমাজনে শুধু অক্টোবরেই ১১ হাজার পাঁচশর বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছর ছিল ১৭ হাজার তিনশ। কিন্তু ২০১৯ সালের পর এসব ঘটনা দ্রুত বেড়েছে এবং তখন ছিল সাত হাজার নয়শটি।

২০১৯ সালে জেইর বোলসোনারো ক্ষমতায় বসার পর অ্যামাজনের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার খোয়া গেছে এক বছরেই, যার আয়তন প্রায় লেবাননের সমান। গত দশকে এটা ছিল ৬ হাজার পাঁচশ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত এক বিশাল বনভূমি অ্যামাজন। ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এই অরণ্যের প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। ৯টি দেশজুড়ে এই অরণ্য বিস্তৃত। অ্যামাজনের ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩ শতাংশ পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম ও ফরাসি গায়ানায়। পৃথিবীজুড়ে যে রেইনফরেস্ট তার অর্ধেকই অ্যামাজনে।

অতিরিক্ত সময়ে গড়াল জলবায়ু সম্মেলন

গত শুক্রবার কপ২৬ সম্মেলনের পর্দা নামার কথা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবিলা ও জলবায়ু পরিবর্তনে দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। স্কটল্যান্ডের প্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত দিনে বেশ কিছু ইস্যু নিয়ে সমাধানে না পৌঁছানোয় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। আলোচকেরা যুক্তিতর্ক চালিয়ে যাওয়ার কারণে সংবাদ সম্মেলনও বাতিল করা হয়। আলোচনাকারীদের শনিবার আবারও অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কপের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ধনীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি। চূড়ান্ত খসড়া চুক্তিটি আটকে যাওয়ায় সময় একদিন বাড়ানো হলো। তবে এই প্রথমবার সম্মেলন পেছনো হয়নি, আগেও এমন ঘটনা ঘটে।

সম্মেলনে যোগ দেয়া সৌদি প্রতিনিধি আয়মান শাসলি বলেন, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়, এমন কোনও পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে তার দেশ। শেষ মুহূর্তে খসড়া থেকে চূড়ান্ত চুক্তিতে যাওয়ার বিষয়ে কাজ করছেন সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিরা। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি একক ভূমিকা রাখে কয়লা। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ১৯০টি দেশ ও সংস্থা কয়লার ব্যবহার ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কপ২৬-এ যে চুক্তির খসড়া প্রকাশিত হয়েছে, তাতে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জোরালও বক্তব্য নেই বলে খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।