কুমিল্লার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের গাফিলতি ছিল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক বলেন, দুর্গাপূজার সময় অপশক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় রাজনীতিবিদদের গাফিলতি ছিল। আগামীতে যাতে কুমিল্লার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।

ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ‘আন্তঃ ধর্মীয় সংলাপ’-এর আয়োজন করা হয়।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেইসবুকের লেখাগুলোর নজরদারী করতে হবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। যারা উন্মাদান সৃষ্টি করে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক আরও বলেন, চিলে কান নিয়ে গেছে এ কথা শুনে কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে দৌঁড়ানো যাবে না। কুমিল্লার ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। মসজিদের মাইক ধর্মীয় কাজে ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদের খুদবায় ইসলামের প্রকৃত ব্যাখা তুলে ধরতে হবে। ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নজরদারি করতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। একটি গোষ্ঠী ধর্মকে টেনে এনে রাজনীতি করে এ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল করতে দেয়া হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং অন্য ধর্মের প্রতি উদারতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গেলে দেশে আন্তঃধর্মীয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যার যার ধর্মের বিধান সে, সে মেনে চললে দেশে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ধর্মকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নই।

এছাড়াও সংলাপে অংশ নেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, জেলা ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, চক বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলনা কামরুজ্জামান, বাকিগঞ্জ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সরুবরানন্দ মহারাজ, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক পান্না বালা, মহানাম সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক কান্তি বন্ধু বহ্মচারি, ইসলামী চিন্তাবিদ কে এম আবদুল মমিন সিরাজী, ফরিদ শাহ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অরুণ ম-ল, কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষক সুব্রত কুমার মুখার্জী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান, নারীনেত্রী আসমা আক্তার, আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. ওহেদুজ্জামান, বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র সেলিম রেজা, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সম্প্রীতির বাংলাদেশ অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। কোন গোষ্ঠীকে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। এজন্য এ আন্তঃধর্মীয় সংলাপ মাঝে মধ্যেই আয়োজন করতে হবে এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও এ সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ২৯ কার্তিক ১৪২৮ ৮ রবিউস সানি ১৪৪৩

কুমিল্লার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতাদের গাফিলতি ছিল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক বলেন, দুর্গাপূজার সময় অপশক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় রাজনীতিবিদদের গাফিলতি ছিল। আগামীতে যাতে কুমিল্লার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে।

ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসন ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ‘আন্তঃ ধর্মীয় সংলাপ’-এর আয়োজন করা হয়।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেইসবুকের লেখাগুলোর নজরদারী করতে হবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। যারা উন্মাদান সৃষ্টি করে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক আরও বলেন, চিলে কান নিয়ে গেছে এ কথা শুনে কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে দৌঁড়ানো যাবে না। কুমিল্লার ঘটনা ঘটানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। মসজিদের মাইক ধর্মীয় কাজে ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদের খুদবায় ইসলামের প্রকৃত ব্যাখা তুলে ধরতে হবে। ওয়াজ মাহফিলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নজরদারি করতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। একটি গোষ্ঠী ধর্মকে টেনে এনে রাজনীতি করে এ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল করতে দেয়া হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং অন্য ধর্মের প্রতি উদারতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা গেলে দেশে আন্তঃধর্মীয় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যার যার ধর্মের বিধান সে, সে মেনে চললে দেশে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ধর্মকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নই।

এছাড়াও সংলাপে অংশ নেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, জেলা ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, চক বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলনা কামরুজ্জামান, বাকিগঞ্জ মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সরুবরানন্দ মহারাজ, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক পান্না বালা, মহানাম সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক কান্তি বন্ধু বহ্মচারি, ইসলামী চিন্তাবিদ কে এম আবদুল মমিন সিরাজী, ফরিদ শাহ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অরুণ ম-ল, কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের শিক্ষক সুব্রত কুমার মুখার্জী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক রেজভী জামান, নারীনেত্রী আসমা আক্তার, আলফাডাঙ্গা থানার ওসি মো. ওহেদুজ্জামান, বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র সেলিম রেজা, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সম্প্রীতির বাংলাদেশ অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। কোন গোষ্ঠীকে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। এজন্য এ আন্তঃধর্মীয় সংলাপ মাঝে মধ্যেই আয়োজন করতে হবে এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও এ সংলাপের আয়োজন করতে হবে।