দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাবে গণতন্ত্র অন্তিম অবস্থায় ইসি মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ১১ নভেম্বর ৮৩৪টি ইউপিতে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮০ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। একে আক্ষরিক অর্থে নির্বাচন বলা যায় না। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেখানে নির্বাচন নেই। গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। এবারের ইউপি নির্বাচনকে রক্তাক্ত বললে অত্যুক্তি হবে না। আগের মতো সবার জন্য উন্মুক্ত হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

গতকাল নির্বাচন কমিশনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাব গণতন্ত্রকে অন্তিম অবস্থায় নিয়ে গেছে। খেলায় যেমন পক্ষ-বিপক্ষ প্রয়োজন হয়, তেমনি একপক্ষীয় কোন গণতন্ত্র হয় না। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আমরা লাইফ সাপোর্ট থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয় এ বার্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছি।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, কুমিল্লার লাকসাম ও চট্টগ্রামের রাউজান বিশ্বে আদর্শ নির্বাচনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যপদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে রাউজান উপজেলায় ১৪টি ইউপি চেয়ারম্যান, ১২৬ জন সদস্য ও ৪২ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে ১৮২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ইউপি নির্বাচন দলীয়ভিত্তিতে না হওয়া উচিত। পৃথক একটি স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ গঠন করে এসব নির্বাচন করা যায়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ঠিক করে না, তার দায় কমিশন কেন নেবে? তবে এই পরিবর্তন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক বাস্তবতায় রিটার্নিং অফিসারদের স্থানীয় সাংসদ বা নেতাদের মনোভাব বুঝে চলতে হয়। এর ফলে তারা (রিটার্নিং অফিসার) হানাহানি, গোলযোগ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো ধামাচাপা দিতে চান। তাদের ধামাধরা না হয়ে উপায় থাকে না। বিভিন্ন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে আমার এ ধারণা হয়েছে।’ এ বাস্তবতায় রিটার্নিং অফিসারদের নির্বাচনে সাহসী ভূমিকা পালনের কথা বলে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১ , ৩০ কার্তিক ১৪২৮ ৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাবে গণতন্ত্র অন্তিম অবস্থায় ইসি মাহবুব তালুকদার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ১১ নভেম্বর ৮৩৪টি ইউপিতে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮০ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। একে আক্ষরিক অর্থে নির্বাচন বলা যায় না। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সেখানে নির্বাচন নেই। গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। এবারের ইউপি নির্বাচনকে রক্তাক্ত বললে অত্যুক্তি হবে না। আগের মতো সবার জন্য উন্মুক্ত হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

গতকাল নির্বাচন কমিশনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাব গণতন্ত্রকে অন্তিম অবস্থায় নিয়ে গেছে। খেলায় যেমন পক্ষ-বিপক্ষ প্রয়োজন হয়, তেমনি একপক্ষীয় কোন গণতন্ত্র হয় না। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আমরা লাইফ সাপোর্ট থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই। এ জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছেন জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয় এ বার্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছি।’

মাহবুব তালুকদার বলেন, কুমিল্লার লাকসাম ও চট্টগ্রামের রাউজান বিশ্বে আদর্শ নির্বাচনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যপদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে রাউজান উপজেলায় ১৪টি ইউপি চেয়ারম্যান, ১২৬ জন সদস্য ও ৪২ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেছেন। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে ১৮২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ইউপি নির্বাচন দলীয়ভিত্তিতে না হওয়া উচিত। পৃথক একটি স্থানীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষ গঠন করে এসব নির্বাচন করা যায়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশন ঠিক করে না, তার দায় কমিশন কেন নেবে? তবে এই পরিবর্তন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক বাস্তবতায় রিটার্নিং অফিসারদের স্থানীয় সাংসদ বা নেতাদের মনোভাব বুঝে চলতে হয়। এর ফলে তারা (রিটার্নিং অফিসার) হানাহানি, গোলযোগ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো ধামাচাপা দিতে চান। তাদের ধামাধরা না হয়ে উপায় থাকে না। বিভিন্ন নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে আমার এ ধারণা হয়েছে।’ এ বাস্তবতায় রিটার্নিং অফিসারদের নির্বাচনে সাহসী ভূমিকা পালনের কথা বলে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।