এবার মিললো ৭ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি

পিকেসহ ২৯ জনকে আসামি করে ৭ মামলা হচ্ছে

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে লুট হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১২শ’ কোটি টাকা লুটের প্রমাণে মামলা হয়েছে ১৫টি। এবার ৭টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ৩২০ কোটি টাকা ঋণের নামে লুটের অভিযোগে আরও ৭ মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৭ মামলা হলে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়াবে ২২টিতে। সব মামলায় প্রধান আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। গতকাল পিকেসহ ২৯ জনকে আসামি করে ৭ মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও তার নেতৃত্বাধীন দুদক কর্মকর্তারা বাদী হয়ে এসব মামলা করার কথা রয়েছে।

দুদক বলছে, এ ৭ মামলায় আরও যাদের আসামি করা হচ্ছে তারা হলেনÑ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাসেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক, পরিচালনা বোর্ডের সদস্য (পরিচালক) বাসুদেব ব্যানার্জি, মো. নওশেরুল ইসলাম, নাসিম আনোয়ার, ম্যানেজার রিয়াদ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদ রুনাই। এছাড়া ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দুদক বলছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নামে যে ৩২০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে সেই অর্থ মূলত নেয়া হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে ডি অ্যান্ড ডি এন্টারপ্রাইজের নামে ৩০ কোটি টাকা, তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্সের নামে ৩০ কোটি টাকা, গ্রীন লাইন ডেভোলপমেন্টের নামে ৬০ কোটি টাকা, এমটিবি মেরিন লি.-এর নামে ৬০ কোটি টাকা, পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া আরও দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের নামেও একইভাবে টাকা নেয়া হয়েছে।

দুদক বলছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে জালিয়াতি করে লুট করার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি করে ঋণ নেয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১৫টি। এসব মামলায় মোট ১২০০ কোটি টাকা লুটের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। ওইসব মামলায় মোট আসামি ৩৭ জন, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ১১ জন। বিদেশ গমন রহিতকরণ করা হয়েছে ৬৯ জনের।

এর আগে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে চার্জশিটে আসামির সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে অবৈধ সম্পদের পরিমাণও। ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং এফ এ এস ফাইন্যান্স ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর আগেই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় পিকে হালদার। পরবর্তীতে দেশে ফেরত আসার ঘোষণা দিলেও আর ফেরেনি। এক পর্যায়ে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে সেই সুবাধে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তার বর্তমান অবস্থান কানাডার টরোন্ট শহরে। সেখানে তিনি নির্বিগ্নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করছেন। পিকে হালদার কানাডা ছাড়া ভারত, সিঙ্গাপুরসহ কয়েক দেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। পিকে কানাডায় থাকলেও তার সহযোগীরা এখনও দেশেই আছে। মূল হোতাদের অধিকাংশ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় পিকের ঘনিষ্ঠ ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক।

সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১ , ৩০ কার্তিক ১৪২৮ ৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

এবার মিললো ৭ কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি

পিকেসহ ২৯ জনকে আসামি করে ৭ মামলা হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে লুট হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ১২শ’ কোটি টাকা লুটের প্রমাণে মামলা হয়েছে ১৫টি। এবার ৭টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ৩২০ কোটি টাকা ঋণের নামে লুটের অভিযোগে আরও ৭ মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৭ মামলা হলে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়াবে ২২টিতে। সব মামলায় প্রধান আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার। গতকাল পিকেসহ ২৯ জনকে আসামি করে ৭ মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও তার নেতৃত্বাধীন দুদক কর্মকর্তারা বাদী হয়ে এসব মামলা করার কথা রয়েছে।

দুদক বলছে, এ ৭ মামলায় আরও যাদের আসামি করা হচ্ছে তারা হলেনÑ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাসেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হক, পরিচালনা বোর্ডের সদস্য (পরিচালক) বাসুদেব ব্যানার্জি, মো. নওশেরুল ইসলাম, নাসিম আনোয়ার, ম্যানেজার রিয়াদ চৌধুরী, ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদ রুনাই। এছাড়া ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দুদক বলছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নামে যে ৩২০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে সেই অর্থ মূলত নেয়া হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের নামে। এর মধ্যে ডি অ্যান্ড ডি এন্টারপ্রাইজের নামে ৩০ কোটি টাকা, তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রাদার্সের নামে ৩০ কোটি টাকা, গ্রীন লাইন ডেভোলপমেন্টের নামে ৬০ কোটি টাকা, এমটিবি মেরিন লি.-এর নামে ৬০ কোটি টাকা, পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা রয়েছে। এছাড়া আরও দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের নামেও একইভাবে টাকা নেয়া হয়েছে।

দুদক বলছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে জালিয়াতি করে লুট করার অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি করে ঋণ নেয়ার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১৫টি। এসব মামলায় মোট ১২০০ কোটি টাকা লুটের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। ওইসব মামলায় মোট আসামি ৩৭ জন, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ১১ জন। বিদেশ গমন রহিতকরণ করা হয়েছে ৬৯ জনের।

এর আগে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে চার্জশিটে আসামির সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে অবৈধ সম্পদের পরিমাণও। ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারের বিরুদ্ধে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং এফ এ এস ফাইন্যান্স ৪ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান শুরুর আগেই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় পিকে হালদার। পরবর্তীতে দেশে ফেরত আসার ঘোষণা দিলেও আর ফেরেনি। এক পর্যায়ে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে সেই সুবাধে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখার মাধ্যমে পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড নোটিশ জারি করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তার বর্তমান অবস্থান কানাডার টরোন্ট শহরে। সেখানে তিনি নির্বিগ্নে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করছেন। পিকে হালদার কানাডা ছাড়া ভারত, সিঙ্গাপুরসহ কয়েক দেশে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। পিকে কানাডায় থাকলেও তার সহযোগীরা এখনও দেশেই আছে। মূল হোতাদের অধিকাংশ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় পিকের ঘনিষ্ঠ ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক।