‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি’

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর তদন্ত ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে তদন্ত ও গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ‘ককাস’র আহ্বায়ক জনাব ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাবেক আইজিপি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল এবং সচিবালয়ের সদস্য সাংবাদিক শওকত বাঙালিসহ সচিবালয়ের অন্যান্য সদস্যরা।

এছাড়া তদন্ত ও গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির সহসভাপতি দিপঙ্কর চৌধুরী কাজল, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির যুগ্মসম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সুচিত্রা গুহ টুম্পা, সমাজকর্মী মওলানা হাসান রফিক, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিনসহ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্টজনেরা।

চট্টগ্রাম গণকমিশনের গণশুনানিতে ১৩ জন সাক্ষী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নারকীয় তা-ব এবং সারাদেশে পূজা ম-পে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলার মৌখিক সাক্ষ্য দেন। লিখিতভাবে সাক্ষ্য প্রদান করেন ৪২ জন। সাক্ষ্য প্রদানকারীদের মধ্যে ছিলেন শিববাড়ি শ্রী শ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিহঙ্গ মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার মজুমদার (৭০), কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস (৩৫), সাবেক কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদ-এর সদস্য দেবরাজ রতন (৩৮), অমিত কুমার হোড় (৬৫), দুলাল কান্তি মুহুরী (৭৪), নাপুড়া শেখের খীল কালিবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদ-এর রাজিব কান্তি গুহ (৪২), নাপুড়া, বাঁশখালীর সুপল মিত্র (৩৪), বিকাশ দাস (১৮), পেকুয়া সুশীল পাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কুমার কাঞ্চন মনি (৩৯), চট্টগ্রামের জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত কাঞ্চন, শ্যামল কান্তি দাস, জেলে পাড়া সীতাকুন্ডু থেকে দক্ষিণা রঞ্জন দাস, বাঁশখালী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. চন্দন দত্ত প্রমুখ।

কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস বলেন, ‘অষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর ২০২১ বিকাল ৫টায় জয় বাংলা পরিষদের ১৫/১৬ বছরের একদল কিশোর এসে পূজাম-পে গান বাজনা বন্ধ করে দিতে বলে। এরপর আমরা গান বন্ধ করে পূজা করি। এরপর ইউএনওকে অবহিত করা হলে তিনি পরিদর্শন করে যান কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেননি। অতঃপর রাতে একদল মানুষ এসে পূজাম-প ও প্রতিমা ভাঙচুর করে। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কোথাও এর সুষ্ঠু বিচার পাইনি, আজ আমরা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের তদন্ত ও গণশুনানিতে আবার এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের ভয়ে আশপাশে কেউ এই ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে মামলা করার সাহস পায়নি। বিএনপি জামায়াতের লোকেরা ‘জয় বাংলা’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। জয়নাল, সেলিম, ইলিয়াছরা ‘জয় বাংলা’ সংগঠন পরিচালনা করে। অথচ তারা জামায়াতের কর্মী। আমি বাদী হয়ে মামলা করলে যুবলীগ কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, ওসি, ফারুক চেয়ারম্যান, ইলিয়াছ মেম্বার বৈঠক করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেন। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত না তাদের গ্রেপ্তার করা হয় অথচ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা এখন ২২০ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

সাবেক কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য দেবরাজ রতন বলেন, ‘এইবারও প্রতিমা নিয়ে দামুপুকুর পাড় আসরে প্রতিমা উপর হামলা হয়। হামলার সময় কাশেমের ছেলেও ছিল। আমরা প্রতিবাদ শুরু করলে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। হঠাৎ ওসি, এসআই এসে আমাদের কোতোয়ালী থানায় নিয়ে যায়। অথচ যারা হামলা করে তাদের পুলিশ আজও গ্রেপ্তার করেনি।’

অমিত কুমার হোড় বলেন, ‘শিববাড়ি মন্দির যিনি ভাঙেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় রয়েছেন। তার নাম আবুল কাশেম ও তার ছেলে নাছির উদ্দীন বাহাদুর। তাদের নেতৃত্বে অতীতেও একবার মন্দির ভাঙচুর হয়। এই বিষয়ে একটি মামলা হলেও এখনও তার সুরাহা হয়নি। ১৯৭৮ সাল থেকে জোর করে আমরা পূজা উদযাপন করছি। পূজা এলেই গন্ডগোল শুরু হয়, এবারও হয়েছে। আমরা এর সুরাহা চাই।’

নাপুড়া শেখের খীল কালিবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের রাজিব কান্তি গুহ বলেন, ‘১৩ অক্টোবর ২০২১ রাত ৯টা বিভিন্ন জায়গায় থেকে একত্রিত হয়ে হাজার হাজার লোক শ্লোগান দিয়ে আমাদের মন্দিরে হামলা করতে এলে আমরা তাড়াতাড়ি পূজা শেষ করে মন্দিরের ভেতরে অবস্থান নিই। মন্দিরের পাশে বাজার থেকে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে তারা আমাদের উপর ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এই ঘটনার ভিডিও ফেইসবুকে লাইভে আমাদের একজন ধারণ করে। পরবর্তীতে আমরা লাইভ ভিডিওতে দেখতে পাই পুলিশ আমাদের মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং দুর্বৃত্তরা মন্দিরের গেট ভাঙছে। আমাদের লোকেরা আহত হচ্ছে, অথচ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।’

নাপুড়ার বাঁশখালীর সুপল মিত্র বলেন, ‘নবমীর দিন রাত ১০টায় কালী বাড়ির সামনে ৫ হাজার লোক নারায়ে তাকবির শ্লোগান দিয়ে হামলা করতে আসে। তাদের ভিতর কিছু পরিচিত মুখ ছিল। আর কিছু মানুষ শার্ট, পাঞ্জাবি এইসব পরে মুখ ঢেকে থাকায় আমরা চিনতে পারিনি। তাদের ইট পাটকেলের আঘাতে আমিসহ ৩৫ জন আহত হই। ‘ধর-মার’ বলে আক্রমণ করে তারা অধিকাংশ হিন্দুদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশও তাদের সঙ্গে ছিল। আমরা কারও কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি এবং সবাই আতঙ্কে আছি।

সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১ , ৩০ কার্তিক ১৪২৮ ৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর তদন্ত ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে তদন্ত ও গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ‘ককাস’র আহ্বায়ক জনাব ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাবেক আইজিপি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল এবং সচিবালয়ের সদস্য সাংবাদিক শওকত বাঙালিসহ সচিবালয়ের অন্যান্য সদস্যরা।

এছাড়া তদন্ত ও গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, নির্মূল কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির সহসভাপতি দিপঙ্কর চৌধুরী কাজল, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির যুগ্মসম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম, চট্টগ্রাম জেলা শাখা নির্মূল কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সুচিত্রা গুহ টুম্পা, সমাজকর্মী মওলানা হাসান রফিক, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিনসহ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশিষ্টজনেরা।

চট্টগ্রাম গণকমিশনের গণশুনানিতে ১৩ জন সাক্ষী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের নারকীয় তা-ব এবং সারাদেশে পূজা ম-পে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হামলার মৌখিক সাক্ষ্য দেন। লিখিতভাবে সাক্ষ্য প্রদান করেন ৪২ জন। সাক্ষ্য প্রদানকারীদের মধ্যে ছিলেন শিববাড়ি শ্রী শ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিহঙ্গ মন্দির কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার মজুমদার (৭০), কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস (৩৫), সাবেক কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদ-এর সদস্য দেবরাজ রতন (৩৮), অমিত কুমার হোড় (৬৫), দুলাল কান্তি মুহুরী (৭৪), নাপুড়া শেখের খীল কালিবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদ-এর রাজিব কান্তি গুহ (৪২), নাপুড়া, বাঁশখালীর সুপল মিত্র (৩৪), বিকাশ দাস (১৮), পেকুয়া সুশীল পাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কুমার কাঞ্চন মনি (৩৯), চট্টগ্রামের জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত কাঞ্চন, শ্যামল কান্তি দাস, জেলে পাড়া সীতাকুন্ডু থেকে দক্ষিণা রঞ্জন দাস, বাঁশখালী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. চন্দন দত্ত প্রমুখ।

কর্ণফুলী পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি সজল কুমার দাস বলেন, ‘অষ্টমীর দিন ১৩ অক্টোবর ২০২১ বিকাল ৫টায় জয় বাংলা পরিষদের ১৫/১৬ বছরের একদল কিশোর এসে পূজাম-পে গান বাজনা বন্ধ করে দিতে বলে। এরপর আমরা গান বন্ধ করে পূজা করি। এরপর ইউএনওকে অবহিত করা হলে তিনি পরিদর্শন করে যান কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেননি। অতঃপর রাতে একদল মানুষ এসে পূজাম-প ও প্রতিমা ভাঙচুর করে। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কোথাও এর সুষ্ঠু বিচার পাইনি, আজ আমরা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশনের তদন্ত ও গণশুনানিতে আবার এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীদের ভয়ে আশপাশে কেউ এই ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে মামলা করার সাহস পায়নি। বিএনপি জামায়াতের লোকেরা ‘জয় বাংলা’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে। জয়নাল, সেলিম, ইলিয়াছরা ‘জয় বাংলা’ সংগঠন পরিচালনা করে। অথচ তারা জামায়াতের কর্মী। আমি বাদী হয়ে মামলা করলে যুবলীগ কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, ওসি, ফারুক চেয়ারম্যান, ইলিয়াছ মেম্বার বৈঠক করে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেন। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত না তাদের গ্রেপ্তার করা হয় অথচ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা এখন ২২০ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

সাবেক কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য দেবরাজ রতন বলেন, ‘এইবারও প্রতিমা নিয়ে দামুপুকুর পাড় আসরে প্রতিমা উপর হামলা হয়। হামলার সময় কাশেমের ছেলেও ছিল। আমরা প্রতিবাদ শুরু করলে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। হঠাৎ ওসি, এসআই এসে আমাদের কোতোয়ালী থানায় নিয়ে যায়। অথচ যারা হামলা করে তাদের পুলিশ আজও গ্রেপ্তার করেনি।’

অমিত কুমার হোড় বলেন, ‘শিববাড়ি মন্দির যিনি ভাঙেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় রয়েছেন। তার নাম আবুল কাশেম ও তার ছেলে নাছির উদ্দীন বাহাদুর। তাদের নেতৃত্বে অতীতেও একবার মন্দির ভাঙচুর হয়। এই বিষয়ে একটি মামলা হলেও এখনও তার সুরাহা হয়নি। ১৯৭৮ সাল থেকে জোর করে আমরা পূজা উদযাপন করছি। পূজা এলেই গন্ডগোল শুরু হয়, এবারও হয়েছে। আমরা এর সুরাহা চাই।’

নাপুড়া শেখের খীল কালিবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের রাজিব কান্তি গুহ বলেন, ‘১৩ অক্টোবর ২০২১ রাত ৯টা বিভিন্ন জায়গায় থেকে একত্রিত হয়ে হাজার হাজার লোক শ্লোগান দিয়ে আমাদের মন্দিরে হামলা করতে এলে আমরা তাড়াতাড়ি পূজা শেষ করে মন্দিরের ভেতরে অবস্থান নিই। মন্দিরের পাশে বাজার থেকে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে তারা আমাদের উপর ইট, পাটকেল ছুড়তে থাকে। এই ঘটনার ভিডিও ফেইসবুকে লাইভে আমাদের একজন ধারণ করে। পরবর্তীতে আমরা লাইভ ভিডিওতে দেখতে পাই পুলিশ আমাদের মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং দুর্বৃত্তরা মন্দিরের গেট ভাঙছে। আমাদের লোকেরা আহত হচ্ছে, অথচ পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।’

নাপুড়ার বাঁশখালীর সুপল মিত্র বলেন, ‘নবমীর দিন রাত ১০টায় কালী বাড়ির সামনে ৫ হাজার লোক নারায়ে তাকবির শ্লোগান দিয়ে হামলা করতে আসে। তাদের ভিতর কিছু পরিচিত মুখ ছিল। আর কিছু মানুষ শার্ট, পাঞ্জাবি এইসব পরে মুখ ঢেকে থাকায় আমরা চিনতে পারিনি। তাদের ইট পাটকেলের আঘাতে আমিসহ ৩৫ জন আহত হই। ‘ধর-মার’ বলে আক্রমণ করে তারা অধিকাংশ হিন্দুদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশও তাদের সঙ্গে ছিল। আমরা কারও কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি এবং সবাই আতঙ্কে আছি।