ত্রিপুরায় পুর নির্বাচন নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাগযুদ্ধ

পুর ভোট নিয়ে পারদ চড়ছে ত্রিপুরায়! পুর ভোটের আগে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী আগরতলা। সব রাজনৈতিক দলই বলছে এটা পৌর নির্বাচন, কিন্তু মাটি ছাড়তে নারাজ কেউই। তৃণমূলের অভিযোগ তাদের প্রার্থীকে প্রচার করতে দেয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচারে আসা বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ ও বর্ধমানের বিধায়ক খোকন দাসকে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এমন কি তাদের হোটেলে থাকতেও বাধা দেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ করেছে তৃণমূল মুখপাত্র সুস্মিতাদেব। কিন্তু ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত ও নবারুণ ভট্টাচার্য্য তাদের এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ত্রিপুরায় তৃণমূলের কোন অস্তিত্ব নেই। তাই বারবার বানিয়ে বক্তব্য প্রচারসহ বিভিন্ন রকম নাটকবাজী করে ত্রিপুরাবাসীর সহানুভূতি আদায় করতে চাচ্ছে তারা। কিন্তু ওদের শেষ রক্ষা হবে না। পুর নির্বাচনের পর তাদের কোন নেতাকেই ত্রিপুরায় পাওয়া যাবে না।

বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের টার্গেট ছিল ত্রিপুরায় তাদের রাজনৈতিক বিস্তার। ২০২৩-এ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিপ্লব দেব সরকারকে পরাস্ত করতে চায় তৃণমূল। ইতোমধ্যে তারা সাংগঠনিকভাবে অনেকটা এগিয়েছে বলেও দাবি তৃণমূলের। এই জন্য বাংলার একাধিক মন্ত্রী থেকে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাসহ শাখা সংগঠনের নেতারা গত কয়েক মাস ধরেই লাগাতার ত্রিপুরায় যাতায়াত করছেন। বিধানসভা ভোটের আগে ত্রিপুরায় শক্তিবৃদ্ধির জন্য পুর নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ৫১টি ওয়ার্ডে তারা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। আসন্ন ত্রিপুরা পুর নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৯ জন পর্যবেক্ষক পাঠানো হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৫ জনই রয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক।

এদিকে ভোটের মুখে বিজেপির হাতকে আরও শক্ত করতে ২১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরা সফর করবেন। অন্যদিকে তৃণমূলও বসে নেই, দিনরাত সেখানে তারা ঘাটি তৈরির চেষ্টায় লড়ছে। তাদের প্রচারের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও ত্রিপুরায় যাচ্ছেন ২৩ নভেম্বর।

পশ্চিমবঙ্গের গত পুর ও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি যে অভিযোগ তুলেছিল, এবার বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় তৃণমূল ঠিক সেই অভিযোগই তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একের পর এক পুরসভা দখল করেছে বিজেপি। মনোনয়ন তুলে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ২৫ নভেম্বর ত্রিপুরার একটি করপোরেশন, ১৩টি পুরসভা এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েতের ভোট। তিনটি স্তর মিলিয়ে মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডে ভোট। কিন্তু, ভোটের আগেই ১১২টি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে বিজেপি। অর্থাৎ প্রায় ৩৪ শতাংশ ওয়ার্ড ভোটের আগেই বিজেপির ঝুলিতে চলে গেছে। বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে ত্রিপুরায় গুরুত্ব দিতে চাইছে না। বিজেপি নেতারা বলছেন, এসব ওদের পর্যটন রাজনীতি। পুর ভোটে ওরা গো-হারা হারবে। ত্রিপুরায় ওদের আস্ফালন খুব বেশিদিন টিকবে না।

সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১ , ৩০ কার্তিক ১৪২৮ ৯ রবিউস সানি ১৪৪৩

ত্রিপুরায় পুর নির্বাচন নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাগযুদ্ধ

দীপক মুখার্জী, কলকাতা

পুর ভোট নিয়ে পারদ চড়ছে ত্রিপুরায়! পুর ভোটের আগে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানী আগরতলা। সব রাজনৈতিক দলই বলছে এটা পৌর নির্বাচন, কিন্তু মাটি ছাড়তে নারাজ কেউই। তৃণমূলের অভিযোগ তাদের প্রার্থীকে প্রচার করতে দেয়া হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচারে আসা বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ ও বর্ধমানের বিধায়ক খোকন দাসকে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এমন কি তাদের হোটেলে থাকতেও বাধা দেয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ করেছে তৃণমূল মুখপাত্র সুস্মিতাদেব। কিন্তু ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত ও নবারুণ ভট্টাচার্য্য তাদের এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ত্রিপুরায় তৃণমূলের কোন অস্তিত্ব নেই। তাই বারবার বানিয়ে বক্তব্য প্রচারসহ বিভিন্ন রকম নাটকবাজী করে ত্রিপুরাবাসীর সহানুভূতি আদায় করতে চাচ্ছে তারা। কিন্তু ওদের শেষ রক্ষা হবে না। পুর নির্বাচনের পর তাদের কোন নেতাকেই ত্রিপুরায় পাওয়া যাবে না।

বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের টার্গেট ছিল ত্রিপুরায় তাদের রাজনৈতিক বিস্তার। ২০২৩-এ ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিপ্লব দেব সরকারকে পরাস্ত করতে চায় তৃণমূল। ইতোমধ্যে তারা সাংগঠনিকভাবে অনেকটা এগিয়েছে বলেও দাবি তৃণমূলের। এই জন্য বাংলার একাধিক মন্ত্রী থেকে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাসহ শাখা সংগঠনের নেতারা গত কয়েক মাস ধরেই লাগাতার ত্রিপুরায় যাতায়াত করছেন। বিধানসভা ভোটের আগে ত্রিপুরায় শক্তিবৃদ্ধির জন্য পুর নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ৫১টি ওয়ার্ডে তারা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। আসন্ন ত্রিপুরা পুর নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৯ জন পর্যবেক্ষক পাঠানো হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৫ জনই রয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক।

এদিকে ভোটের মুখে বিজেপির হাতকে আরও শক্ত করতে ২১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরা সফর করবেন। অন্যদিকে তৃণমূলও বসে নেই, দিনরাত সেখানে তারা ঘাটি তৈরির চেষ্টায় লড়ছে। তাদের প্রচারের জন্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও ত্রিপুরায় যাচ্ছেন ২৩ নভেম্বর।

পশ্চিমবঙ্গের গত পুর ও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি যে অভিযোগ তুলেছিল, এবার বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় তৃণমূল ঠিক সেই অভিযোগই তুলেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একের পর এক পুরসভা দখল করেছে বিজেপি। মনোনয়ন তুলে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ২৫ নভেম্বর ত্রিপুরার একটি করপোরেশন, ১৩টি পুরসভা এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েতের ভোট। তিনটি স্তর মিলিয়ে মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ডে ভোট। কিন্তু, ভোটের আগেই ১১২টি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে বিজেপি। অর্থাৎ প্রায় ৩৪ শতাংশ ওয়ার্ড ভোটের আগেই বিজেপির ঝুলিতে চলে গেছে। বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে ত্রিপুরায় গুরুত্ব দিতে চাইছে না। বিজেপি নেতারা বলছেন, এসব ওদের পর্যটন রাজনীতি। পুর ভোটে ওরা গো-হারা হারবে। ত্রিপুরায় ওদের আস্ফালন খুব বেশিদিন টিকবে না।