ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির পরামর্শ আতিউর রহমানের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ৪৪ বিলিয়ন। এটি বাংলাদেশের শক্তি। এর ফলে করোনা অতিমারীতেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। তবে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আরও বাড়াতে হবে। এই খাত থেকে আয় বেশি আসলে হয়তো রিজার্ভের টাকায় হাত দিতে হতো না। তাই আমাদের দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াতে হবে।’

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘ইন সার্চ অব সাসটেইনেবল ফাইনান্স ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সেমিনারটি আয়োজন করে।

আতিউর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল অনিশ্চিত। এ সময় বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে, আবার অনেক দেশে তা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনাকালে মানুষ ঘরে আবদ্ধ ছিল। এর ফলে অর্থনীতির চাকা ছিল ধীর। এ সময় যে দেশের মানুষ ঘরের বাইরে যাওয়ার সুবিধা পেয়েছে, সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কেননা দেশের মানুষের ঘরের বাইরে বেরোনোর ওপর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। এজন্যে ভ্যাকসিনেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে জিডিপি বেশি।’

শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্বাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ। দেশটির অর্থনীতি অনেক বেশি স্বনির্ভর হতে পারতো। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঋণ হিসেবে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ হচ্ছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে না পারা। এক্ষেত্রে আমরা গ্রাম পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পর্যন্ত সুষম অর্থনীতির সুবিধাগুলো পৌঁছে দিয়েছি। এখানেই অন্যদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।’

কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের সভাপতিত্বে এবং পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আতিউর রহমান। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক অংশ নেন।

মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা- এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কোভিড চলাকালেও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো।’

সভাপতির বক্তব্যে জিয়া রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’

অন্য বক্তারা আরও বলেন, ‘দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াতে হবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা- এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কোভিড চলাকালেও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিল্পখাতের উন্নয়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনসহ অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়েছে এবং বৈদেশিক ঋণ নির্ভরশীলতা কমেছে।’

প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং এর ওপর আলোচনা শেষে শিক্ষক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আতিউর রহমান।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

ট্যাক্স জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির পরামর্শ আতিউর রহমানের

ঢাবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ৪৪ বিলিয়ন। এটি বাংলাদেশের শক্তি। এর ফলে করোনা অতিমারীতেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। তবে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আরও বাড়াতে হবে। এই খাত থেকে আয় বেশি আসলে হয়তো রিজার্ভের টাকায় হাত দিতে হতো না। তাই আমাদের দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াতে হবে।’

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘ইন সার্চ অব সাসটেইনেবল ফাইনান্স ফর ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র সেমিনারটি আয়োজন করে।

আতিউর রহমান বলেন, ‘করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল অনিশ্চিত। এ সময় বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে, আবার অনেক দেশে তা বেড়েছে। তবে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনাকালে মানুষ ঘরে আবদ্ধ ছিল। এর ফলে অর্থনীতির চাকা ছিল ধীর। এ সময় যে দেশের মানুষ ঘরের বাইরে যাওয়ার সুবিধা পেয়েছে, সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কেননা দেশের মানুষের ঘরের বাইরে বেরোনোর ওপর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে। এজন্যে ভ্যাকসিনেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে জিডিপি বেশি।’

শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার স্বাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ। দেশটির অর্থনীতি অনেক বেশি স্বনির্ভর হতে পারতো। তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঋণ হিসেবে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ হচ্ছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে না পারা। এক্ষেত্রে আমরা গ্রাম পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পর্যন্ত সুষম অর্থনীতির সুবিধাগুলো পৌঁছে দিয়েছি। এখানেই অন্যদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য।’

কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের সভাপতিত্বে এবং পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. আতিউর রহমান। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও অর্থনীতিবিদ ড. মাশরুর রিয়াজ। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষক অংশ নেন।

মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা- এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কোভিড চলাকালেও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিলো।’

সভাপতির বক্তব্যে জিয়া রহমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’

অন্য বক্তারা আরও বলেন, ‘দেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়াতে হবে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা- এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। কোভিড চলাকালেও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনন্য নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিল্পখাতের উন্নয়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনসহ অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এজন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়েছে এবং বৈদেশিক ঋণ নির্ভরশীলতা কমেছে।’

প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং এর ওপর আলোচনা শেষে শিক্ষক, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আতিউর রহমান।