লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশা : জেঁকে শীত

উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এ জেলার গ্রামীণসহ শহরের জনপদ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে ঘন কুয়াশায়।

রাতে ও সকালে টুপটাপ করে ঝরছে শিশির। সকালে সূর্যের আলোকচ্ছটায় ধানের শিষে শিশিরের ফোটা ফোটা পানি যেন এক একটা মুক্তোদাসা। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালই বলছে জেঁকে বসেছে শীত। জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ সাধ্য অনুযায়ী গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন গরম কাপড়। কারও কারও গরম কাপড় না থাকায় হালকা কাপড় পরে বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে। রবিবার রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চলবলা ইউনিয়নের নিথক গ্রামের শাহ আলী জানান, প্রচুর ঠাণ্ডা পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে মাঠে কাজ করতে যেতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে খুবই শীত পড়ছে। সকাল ১০টাতেও সূর্যের দেখা নেই।

এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট বেড়েছে নিদারুণ। গত কয়েক দিনে শীতে তীব্রতা কম থাকলেও রাত থেকে হু হু করে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়া বাড়তে শুরু করায় সাধারণ মানুষ কাবু হয়ে পড়ছে। তিস্তাপাড়ের শিশু বৃদ্ধ সকলেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

লালমনিরহাটের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ১৩টি নদ-নদী তীরবর্তী ৬৩টি চরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষসহ নিম্নœ আয়ের শ্রমজীবীরা। শীতে খেটে খাওয়া মানুষ কাজকর্মে যেতে না পেরে কষ্টে দিন পাড় করছেন। গত পাঁচ দিনে থেকে শীতের তীব্রতা না থাকলেও গতরাত থেকে শীতের তীব্রতা হু হু করে বেড়েছে। এতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, হৃদরোগসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানান, লালমনিরহাটে ঠাণ্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায়, নিউমোনিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ৩৫ জন।

তিস্তার পাড়ের লাভলু মিয়া জানান, গত পাঁচ দিন থেকে তিস্তার পাড়ে শীতে তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি ঘনকুয়াসা ও কনকনে ঠাণ্ডায় এলাকার মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে।

সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, অত্র ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা বেশি। শীত আর ঠাণ্ডা বাতাসে অনেক অসহায় পরিবার কষ্টে দিন পার করেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশা : জেঁকে শীত

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট

image

উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এ জেলার গ্রামীণসহ শহরের জনপদ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে ঘন কুয়াশায়।

রাতে ও সকালে টুপটাপ করে ঝরছে শিশির। সকালে সূর্যের আলোকচ্ছটায় ধানের শিষে শিশিরের ফোটা ফোটা পানি যেন এক একটা মুক্তোদাসা। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন সকালই বলছে জেঁকে বসেছে শীত। জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ সাধ্য অনুযায়ী গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন গরম কাপড়। কারও কারও গরম কাপড় না থাকায় হালকা কাপড় পরে বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে। রবিবার রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সর্বনিম্নœ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চলবলা ইউনিয়নের নিথক গ্রামের শাহ আলী জানান, প্রচুর ঠাণ্ডা পড়ছে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। ঠাণ্ডার কারণে মাঠে কাজ করতে যেতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে খুবই শীত পড়ছে। সকাল ১০টাতেও সূর্যের দেখা নেই।

এদিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট বেড়েছে নিদারুণ। গত কয়েক দিনে শীতে তীব্রতা কম থাকলেও রাত থেকে হু হু করে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতের তীব্রতা ও হিমেল হাওয়া বাড়তে শুরু করায় সাধারণ মানুষ কাবু হয়ে পড়ছে। তিস্তাপাড়ের শিশু বৃদ্ধ সকলেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

লালমনিরহাটের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ১৩টি নদ-নদী তীরবর্তী ৬৩টি চরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষসহ নিম্নœ আয়ের শ্রমজীবীরা। শীতে খেটে খাওয়া মানুষ কাজকর্মে যেতে না পেরে কষ্টে দিন পাড় করছেন। গত পাঁচ দিনে থেকে শীতের তীব্রতা না থাকলেও গতরাত থেকে শীতের তীব্রতা হু হু করে বেড়েছে। এতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাপানি, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, হৃদরোগসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানান, লালমনিরহাটে ঠাণ্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায়, নিউমোনিয়া ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ৩৫ জন।

তিস্তার পাড়ের লাভলু মিয়া জানান, গত পাঁচ দিন থেকে তিস্তার পাড়ে শীতে তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি ঘনকুয়াসা ও কনকনে ঠাণ্ডায় এলাকার মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে।

সানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, অত্র ইউনিয়নটি নদী বেষ্টিত হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা বেশি। শীত আর ঠাণ্ডা বাতাসে অনেক অসহায় পরিবার কষ্টে দিন পার করেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে দিন দিন শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।