মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্যে হুমকিতে গোদারাঘাট বধ্যভূমি

ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলার সীমানায় অবস্থিত ময়মনসিংহের দ্বিতীয় বৃহত্তম জঘন্যতম গণহত্যার স্থান সরচাপুর গোদারাঘাট গণহত্যার স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলার অপচেষ্টা করছে একটিমহল। ফুলপুর উপজেলার সরচাপুর গোদারাঘাটের ঠাকুরবাখাই অংশে ভেকু দিয়ে ট্রাক ভরে প্রতিদিন মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। স্মৃতি রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ। বিগত সময়ে ফুলপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তাও ফেরত গেছে বলে জানা গেছে। ফুলপুর হালুয়াঘাট দুইটি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা কংশ নদীর ফুলপুর অংশে ঠাকুর বাখাই ও হালুয়াঘাট অংশে সরচাপুর নামক স্থানে সরচাপুর গোদারাঘাটের অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ এ পথটি ব্যবহার করে ভারতে যাতায়াত করতো । মানুষের সেই স্রোতকে থামানোর জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সরচাপুর গোদারাঘাটে একটি শক্তিশালী ঘাটি গড়ে তোলে। সরচাপুর গোদারাঘাট থেকে ভারত সীমান্ত মাত্র চৌদ্দ - পনেরো মাইল দূরে অবস্থিত। তাই উক্ত ঘাটির সামরিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মুক্তিযোদ্ধের সময় সরচাপুর গোদারাঘাটে চেকপোস্ট বসায় পাকিস্তানী বাহিনী। গোদারাঘাটের চেকপোস্টে বেশ কয়েকটি তল্লাশিতে সে সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর তৎপরতায় সরচাপুর গোদারাঘাট হয়ে উঠে পাকবাহিনীর টর্চার সেল ও গণহত্যার অন্যতম স্থান। প্রায় প্রতিদিনই মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে শোনা যেত পাকিস্তানী বাহিনীর গুলির আওয়াজ। কত মানুষকে যে এখানে হত্যা করা হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে এলাকাবাসী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকগণ মনে করেন, সরচাপুর গোদারাঘাটে অন্তত পাঁচ থেকে দশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এখানে। অগণিত মুক্তিকামী জনতার রক্তে লাল হয়ে আছে এই স্থানের মাটি। এলাকাবাসীর স্মৃতিপটে আজোও ভেসে ওঠে সেই বিভীষিকাময় কান্নার আওয়াজ।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

মাটিখেকোদের দৌরাত্ম্যে হুমকিতে গোদারাঘাট বধ্যভূমি

প্রতিনিধি,ফুলপুর (ময়মনসিংহ)

image

ফুলপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলার সীমানায় অবস্থিত ময়মনসিংহের দ্বিতীয় বৃহত্তম জঘন্যতম গণহত্যার স্থান সরচাপুর গোদারাঘাট গণহত্যার স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলার অপচেষ্টা করছে একটিমহল। ফুলপুর উপজেলার সরচাপুর গোদারাঘাটের ঠাকুরবাখাই অংশে ভেকু দিয়ে ট্রাক ভরে প্রতিদিন মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। স্মৃতি রক্ষায় নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক উদ্যোগ। বিগত সময়ে ফুলপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল তাও ফেরত গেছে বলে জানা গেছে। ফুলপুর হালুয়াঘাট দুইটি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা কংশ নদীর ফুলপুর অংশে ঠাকুর বাখাই ও হালুয়াঘাট অংশে সরচাপুর নামক স্থানে সরচাপুর গোদারাঘাটের অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ এ পথটি ব্যবহার করে ভারতে যাতায়াত করতো । মানুষের সেই স্রোতকে থামানোর জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সরচাপুর গোদারাঘাটে একটি শক্তিশালী ঘাটি গড়ে তোলে। সরচাপুর গোদারাঘাট থেকে ভারত সীমান্ত মাত্র চৌদ্দ - পনেরো মাইল দূরে অবস্থিত। তাই উক্ত ঘাটির সামরিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মুক্তিযোদ্ধের সময় সরচাপুর গোদারাঘাটে চেকপোস্ট বসায় পাকিস্তানী বাহিনী। গোদারাঘাটের চেকপোস্টে বেশ কয়েকটি তল্লাশিতে সে সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে কংশ নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর তৎপরতায় সরচাপুর গোদারাঘাট হয়ে উঠে পাকবাহিনীর টর্চার সেল ও গণহত্যার অন্যতম স্থান। প্রায় প্রতিদিনই মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে শোনা যেত পাকিস্তানী বাহিনীর গুলির আওয়াজ। কত মানুষকে যে এখানে হত্যা করা হয়েছে তার কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে এলাকাবাসী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকগণ মনে করেন, সরচাপুর গোদারাঘাটে অন্তত পাঁচ থেকে দশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এখানে। অগণিত মুক্তিকামী জনতার রক্তে লাল হয়ে আছে এই স্থানের মাটি। এলাকাবাসীর স্মৃতিপটে আজোও ভেসে ওঠে সেই বিভীষিকাময় কান্নার আওয়াজ।