করোনা নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত নয়

শনাক্তের হার কিছুটা বেড়েছে

একমাস ধরে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে শনাক্তের হার কিছুটা বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। সার্বিকভাবে দেশে সংক্রমণ এখন ‘নি¤œ পর্যায়ে’ রয়েছে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলেন, সারা বিশ^ থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশকেও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। সাবধানতা অবলম্বন না করলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কোনও সময় সংক্রমণ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে মোট ২৭ জন মারা গেছেন, যাদের ৮৯ শতাংশেরই টিকা দেয়া ছিল না। আবার এক সপ্তাহে মারা যাওয়া লোকজনের ৭৪ শতাংশেরই কোন না কোন ‘কোমরবিডিটি’ (নানা জটিল রোগে আক্রান্ত) ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে; আগের দিনও চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। একদিনে নতুন করে ২৩৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে সর্বশেষ এক সপ্তাহে দেশে মোট এক হাজার ৪৮৮ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি। আর এই সময়ে করোনায় মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা তার আগের সপ্তাহের সমান।

সর্বশেষ এক সপ্তাহে মৃত্যু হওয়া ২৭ জনের মধ্যে ২০ জনেরই কোন না কোন ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি (কোমরবিডিটি) ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৫ শতাংশের ডায়াবেটিস, ৪৫ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ এবং ২৫ শতাংশের হৃদরোগ ছিল।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনা মহামারি এখন নি¤œপর্যায়ে রয়েছে। সারাবিশ^ থেকে মহামারি নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঝুঁকিমুক্ত সেটি বলা যাবে না। যেকোন সময় আমাদের এখানেও সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ বিশে^র অনেক দেশেই সংক্রমণ শূন্যের কাছাকাছি নেমে গিয়েও আবার বেড়ে গেছে। ইউরোশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশেই এখন সংক্রমণ বাড়তির দিকে রয়েছে।’

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, কোন দেশে টানা তিন সপ্তাহ সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের কম থাকলে ধরে নেয়া হয়, সেখানে আর মহামারি নেই; অর্থাৎ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশে গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে।

তবে গত ১৭ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার দুই শতাংশের নিচে নামে। এরপর থেকে শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচেই রয়েছে। এ হিসেবে প্রায় একমাস ধরেই শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে রয়েছে।

শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে থাকলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও রয়েছে। বিশে^র সব দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এর কোন দেশই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। কারণ সব ধরনের ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, এটি কখনও কমবে, কখনও বাড়বে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দেশটি ভালোভাবেই করোনার বিস্তার রোধ করতে পারলেও সম্প্রতি দেশটিতে করোনার ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’র ছড়িয়ে পড়ছে। রাশিয়ায় প্রথমদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি দেশটিতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

দেশে সর্বশেষ এক সপ্তাহে সংক্রমণ চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ একদিনে দেশে ২৩৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত এবং নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ৩২ শতাংশ। এদিন আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

এর আগে ১৪ নভেম্বর ২২৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত, চারজনের মৃত্যু এবং সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ১৪ শতাংশ। ১৩ নভেম্বর ১৫১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত, ছয়জনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ১১ শতাংশ।

১২ নভেম্বর ২২১ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত, পাঁচজনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ২৮ শতাংশ। ১১ নভেম্বর ২৩৭ জনের শরীরে জীবাণু শনাক্ত, একজনের মৃত্যু এবং সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ২১ শতাংশ।

১০ নভেম্বর ২৩৫ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত, দুইজনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ৯ নভেম্বর ২০৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত, তিনজনের মৃত্যু এবং নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ১৮ শতাংশ।

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত ও মৃত্যু

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত হওয়া ২৩৪ জনসহ দেশে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২৭ হাজার ৯২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ২২৯ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৪ জন।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৮২ জনই ঢাকা বিভাগের। আর মারা যাওয়া চার জনের মধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন ঢাকা বিভাগের এবং আরেকজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাকি পাঁচ বিভাগে কারও মৃত্যু হয়নি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ১৭ হাজার ৭০০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ ১৩ হাজার ৪৯০টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক দশমিক ৩২ শতাংশ, যা আগেরদিন ছিল এক দশমিক ১৪ শতাংশ।

আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া চার জনের সবাই পুরুষ। তাদের মধ্যে এক জনের বয়স ৭০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে দুই জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, এক জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল। ওই চার জনই সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর গত ৩১ আগস্ট মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে করোনার ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে জীবাণু শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের দশ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মোট মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিনশ’র কাছাকাছি নেমে এসেছিল; ওই সময় সংক্রমণ হারও তিন শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। দৈনিক মৃত্যুও ৮-১০ জনে নেমে এসেছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত জুন, জুলাই ও আগস্টে নিয়মিত ভাঙ্গতে থাকে মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

করোনা নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত নয়

শনাক্তের হার কিছুটা বেড়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একমাস ধরে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে রয়েছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে শনাক্তের হার কিছুটা বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। সার্বিকভাবে দেশে সংক্রমণ এখন ‘নি¤œ পর্যায়ে’ রয়েছে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলেন, সারা বিশ^ থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশকেও পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। সাবধানতা অবলম্বন না করলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কোনও সময় সংক্রমণ ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত এক সপ্তাহে মোট ২৭ জন মারা গেছেন, যাদের ৮৯ শতাংশেরই টিকা দেয়া ছিল না। আবার এক সপ্তাহে মারা যাওয়া লোকজনের ৭৪ শতাংশেরই কোন না কোন ‘কোমরবিডিটি’ (নানা জটিল রোগে আক্রান্ত) ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে; আগের দিনও চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। একদিনে নতুন করে ২৩৪ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে সর্বশেষ এক সপ্তাহে দেশে মোট এক হাজার ৪৮৮ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ০.৯ শতাংশ বেশি। আর এই সময়ে করোনায় মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা তার আগের সপ্তাহের সমান।

সর্বশেষ এক সপ্তাহে মৃত্যু হওয়া ২৭ জনের মধ্যে ২০ জনেরই কোন না কোন ধরনের দুরারোগ্য অসংক্রামক ব্যাধি (কোমরবিডিটি) ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৫ শতাংশের ডায়াবেটিস, ৪৫ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ এবং ২৫ শতাংশের হৃদরোগ ছিল।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনা মহামারি এখন নি¤œপর্যায়ে রয়েছে। সারাবিশ^ থেকে মহামারি নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা ঝুঁকিমুক্ত সেটি বলা যাবে না। যেকোন সময় আমাদের এখানেও সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ বিশে^র অনেক দেশেই সংক্রমণ শূন্যের কাছাকাছি নেমে গিয়েও আবার বেড়ে গেছে। ইউরোশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশেই এখন সংক্রমণ বাড়তির দিকে রয়েছে।’

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, কোন দেশে টানা তিন সপ্তাহ সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের কম থাকলে ধরে নেয়া হয়, সেখানে আর মহামারি নেই; অর্থাৎ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশে গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে।

তবে গত ১৭ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ হার দুই শতাংশের নিচে নামে। এরপর থেকে শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচেই রয়েছে। এ হিসেবে প্রায় একমাস ধরেই শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে রয়েছে।

শনাক্তের হার দুই শতাংশের নিচে থাকলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও রয়েছে। বিশে^র সব দেশ ও অঞ্চলে সংক্রমণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এর কোন দেশই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে না। কারণ সব ধরনের ভাইরাসের চরিত্রটাই এমন যে, এটি কখনও কমবে, কখনও বাড়বে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর দেশটি ভালোভাবেই করোনার বিস্তার রোধ করতে পারলেও সম্প্রতি দেশটিতে করোনার ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’র ছড়িয়ে পড়ছে। রাশিয়ায় প্রথমদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি দেশটিতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

দেশে সর্বশেষ এক সপ্তাহে সংক্রমণ চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ একদিনে দেশে ২৩৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত এবং নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ৩২ শতাংশ। এদিন আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

এর আগে ১৪ নভেম্বর ২২৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত, চারজনের মৃত্যু এবং সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ১৪ শতাংশ। ১৩ নভেম্বর ১৫১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত, ছয়জনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ১১ শতাংশ।

১২ নভেম্বর ২২১ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত, পাঁচজনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ২৮ শতাংশ। ১১ নভেম্বর ২৩৭ জনের শরীরে জীবাণু শনাক্ত, একজনের মৃত্যু এবং সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ২১ শতাংশ।

১০ নভেম্বর ২৩৫ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত, দুইজনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল এক দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ৯ নভেম্বর ২০৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত, তিনজনের মৃত্যু এবং নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণ হার ছিল এক দশমিক ১৮ শতাংশ।

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত ও মৃত্যু

সর্বশেষ একদিনে শনাক্ত হওয়া ২৩৪ জনসহ দেশে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২৭ হাজার ৯২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ২২৯ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭৪৪ জন।

গত একদিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ১৮২ জনই ঢাকা বিভাগের। আর মারা যাওয়া চার জনের মধ্যে দুইজন চট্টগ্রাম বিভাগের, একজন ঢাকা বিভাগের এবং আরেকজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাকি পাঁচ বিভাগে কারও মৃত্যু হয়নি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট ১৭ হাজার ৭০০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ ১৩ হাজার ৪৯০টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার এক দশমিক ৩২ শতাংশ, যা আগেরদিন ছিল এক দশমিক ১৪ শতাংশ।

আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যু হার এক দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া চার জনের সবাই পুরুষ। তাদের মধ্যে এক জনের বয়স ৭০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে দুই জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, এক জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল। ওই চার জনই সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর গত ৩১ আগস্ট মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে করোনার ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে জীবাণু শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের দশ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর গত ১৪ সেপ্টেম্বর মোট মৃত্যু ২৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিনশ’র কাছাকাছি নেমে এসেছিল; ওই সময় সংক্রমণ হারও তিন শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। দৈনিক মৃত্যুও ৮-১০ জনে নেমে এসেছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত জুন, জুলাই ও আগস্টে নিয়মিত ভাঙ্গতে থাকে মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়। এর আগে গত ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।