জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ প্রধান গালিব গ্রেপ্তার

২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব(২১)। এরপর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী দু’টি ফেসবুক আইডির সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে বিভিন্ন বই ও অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উগ্রবাদী লেখা পড়ে নিজেই ফেসবুক আইডি খুলে উগ্রবাদী লেখালেখি শুরু করেন।

পরে তার বানানো কন্টেন্টই অনলাইনে প্রচার শুরু করে সংগঠনের আরও দুই শীর্ষ নেতা। এই তিনজন অনলাইনের প্রচার প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রাখায় গালিব বনে যান কথিত ত্রিরতœ প্রধান। তার টার্গেট ছিল, অনলাইনে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করে তরুণদের জঙ্গিবাদে ভেড়ানো।

সম্প্রতি ত্রিরতেœর দুই সদস্য ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিকী এবং নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা গ্রেপ্তারের পর গালিবকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গত রোববার রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে গালিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিটিটিসি বলছে, গালিব গ্রেপ্তারের ফলে অনলাইনে ৮০ শতাংশ উগ্রবাদী প্রচার-প্রচারণা কমে যাবে। জানা গেছে, গালিবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র (আইন) শিক্ষার্থী।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে, প্রথমে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী ফেসবুক আইডি জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেইন’র সঙ্গে যুক্ত হন। এই আইডি দু’টিতে তালেবান ও আল কায়েদার বিভিন্ন লেখালেখি হতো। তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করান হতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখা ও মতাদর্শে আগ্রহী হয়।

‘২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এসব লেখালেখির জন্য তিনি ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুকে মুয়াহিদ মুসলিম নামে আরও একটি পেজ ওপেন করেন। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এই পেজটি থেকে উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখেন।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, সর্বশেষ তিনি আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করতেন। হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারকারী ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্ন ইসা’ নামে আইডি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রিরতœ’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তার কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার হাসিবুরের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়। এর আগেও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছেন হাসিব। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি তাদের পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

হাসিবুরকে গ্রেপ্তারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্বে দিবেন কে, এ প্রসঙ্গে কোনও তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার হাসিবুর জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কে কে রয়েছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে গ্রেপ্তার আল গালিবের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত রিমান্ড আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা এ তথ্য জানান। এদিন উত্তরা পূর্ব থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সাইফুর রহমান আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ প্রধান গালিব গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

২০১৬ সালে এসএসসি পাস করে রাজধানীর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব(২১)। এরপর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী দু’টি ফেসবুক আইডির সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে বিভিন্ন বই ও অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে উগ্রবাদী লেখা পড়ে নিজেই ফেসবুক আইডি খুলে উগ্রবাদী লেখালেখি শুরু করেন।

পরে তার বানানো কন্টেন্টই অনলাইনে প্রচার শুরু করে সংগঠনের আরও দুই শীর্ষ নেতা। এই তিনজন অনলাইনের প্রচার প্রচারণায় মুখ্য ভূমিকা রাখায় গালিব বনে যান কথিত ত্রিরতœ প্রধান। তার টার্গেট ছিল, অনলাইনে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করে তরুণদের জঙ্গিবাদে ভেড়ানো।

সম্প্রতি ত্রিরতেœর দুই সদস্য ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিকী এবং নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা গ্রেপ্তারের পর গালিবকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গত রোববার রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে গালিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিটিটিসি বলছে, গালিব গ্রেপ্তারের ফলে অনলাইনে ৮০ শতাংশ উগ্রবাদী প্রচার-প্রচারণা কমে যাবে। জানা গেছে, গালিবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকায়। বাবার নাম হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি’র (আইন) শিক্ষার্থী।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে, প্রথমে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী ফেসবুক আইডি জামিল হাসান ও জামশেদ হোসেইন’র সঙ্গে যুক্ত হন। এই আইডি দু’টিতে তালেবান ও আল কায়েদার বিভিন্ন লেখালেখি হতো। তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করান হতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখা ও মতাদর্শে আগ্রহী হয়।

‘২০১৯ সালের দিকে হাসিবুর রহমান আল কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। এসব লেখালেখির জন্য তিনি ‘আযযাম আল গালিব’ নামে ফেসবুক আইডি খোলেন। এই নামে তিনি একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি ফেসবুকে মুয়াহিদ মুসলিম নামে আরও একটি পেজ ওপেন করেন। সেখানে তিনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে সদস্য সংগ্রহ করতে থাকেন। এই পেজটি থেকে উগ্র মতবাদ ছড়ানোর অভিযোগে তার পেজটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে রাখেন।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, সর্বশেষ তিনি আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। কারাগারে থাকা আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জামিনের জন্য তিনি গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহেরও কাজ করতেন। হাসিবুর রহমানের সঙ্গে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারকারী ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্ন ইসা’ নামে আইডি পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেন। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসার’ সঙ্গে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত ‘ত্রিরতœ’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র‌্যাডিক্যালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তার কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার হাসিবুরের ফেসবুক আইডিতে জিহাদসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন সব কন্টেন্ট ছিল, যার কারণে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার আইডিটি বন্ধ করে দেয়। এর আগেও গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গী সংগঠনের নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেছেন হাসিব। বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তিনি তাদের পরিবারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করে জামিনের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।

হাসিবুরকে গ্রেপ্তারের পর আনসার আল ইসলামের দাওয়াহ শাখার নেতৃত্বে দিবেন কে, এ প্রসঙ্গে কোনও তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার হাসিবুর জঙ্গিবাদ বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ধরনের বিশেষজ্ঞ আর কে কে রয়েছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এদিকে গ্রেপ্তার আল গালিবের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালত রিমান্ড আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা এ তথ্য জানান। এদিন উত্তরা পূর্ব থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সাইফুর রহমান আসামিকে আদালতে হাজির করেন। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।