মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য ‘শালীনতা বহির্ভূত : সিইসি

নির্বাচন ‘আইসিইউ’-তে ও গণতন্ত্র ‘লাইফসাপোর্টে’- নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্যকে ‘শালীনতা বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার। গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন সিইসি।

কেএম নূরুল হুদা বলেন, তিনি (মাহবুব তালুকদার) সাতদিন ধরে একটা শব্দ খুঁজে বের করে আপনাদের কাছে ছেড়ে দেন। আমরা একটা কমিশন বৈঠকে হোমওয়ার্ক করে যাই। একজন লোক প্রস্তুতি নিয়ে যায়, কন্ট্রিবিউট করে, প্রতিটি মিটিংয়ে চিন্তাভাবনা করে যাই। মাহবুব সাহেব কোন চিন্তাভাবনা করেন না।

তিনি বলেন, সাত-আট দিন পর একটা শব্দ চয়ন করার জন্য ব্যয় করেন তিনি। কোনটা দিলে আপনারা এম প্রশ্ন করবেন- আইসিইউ, লাইফসাপোর্ট। এই শব্দগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে বের করেন। তারপর ছেড়ে দেন। এটা পাঁচ বছর ধরে দেখছি। এটা উনি করেন। আমাদের কিছু করার নেই। দু’জন কমিশনার বার বার ওনাকে বুঝিয়েছেন। একটা টিমে আছি, দেখতে হবে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হয়। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়টি দেখা উচিত।

এর আগে ইসি মাহবুব তালুকদার রোববার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন- নির্বাচন এখন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফসাপোর্টে। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে না করার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন এবং পৃথক একটা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, দলীয় লোকজন বঞ্চিত থাকায় এ রকম হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ নেই। এটা আমরা করতেও পারি না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। কোনও একটি ঘটনা ঘটলে টিভিতে সেটা বার বার দেখানো হয়। এতে মানুষের ধারণা হয় সব জায়গায় বুঝি এমন ঘটছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের কাছে একটি মৃত্যুও স্বাভাবিক নয়। ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। যেসব বিভাগে বেশি নির্বাচন আছে, সেখানে গিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কোনটাই প্রত্যাশিত নয়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসবের পেছনে ছিল আধিপত্য বিস্তার, বংশীয় প্রভাব ও ব্যক্তিগত শত্রুতা।

সিইসি আরও বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩৩টি ইউপি নির্বাচনে আট হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এরমধ্যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ায় বন্ধ করা হয়। তারপরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন হানাহানি ও প্রাণহানি ঘটেছে, যা কাম্য নয়।

সিইসি দাবি করেন, ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়। ভোট গ্রহণের দিন ও আগে-পরে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গসহ নির্বাচনী অপরাধের বিচারের জন্য নির্বাচনী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ওইসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নরসিংদীর রায়পুরের একটি দুর্গম চরে হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যমে এসেছে, গত ১০ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তারের নামে নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে। নরসিংদীতে এবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ৪ নভেম্বর। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে নির্বাচনের দিন ভোরে।

তিনি আরও বলেন, মাগুরার যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের আগে। যা ছিল এলাকার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে। মেহেরপুরের গাংনির ঘটনার পেছনে ছিল বংশগত আধিপত্য বিস্তার। মেহেরপুরের ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনের দিন ভোররাতে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য ‘শালীনতা বহির্ভূত : সিইসি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নির্বাচন ‘আইসিইউ’-তে ও গণতন্ত্র ‘লাইফসাপোর্টে’- নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্যকে ‘শালীনতা বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার। গতকাল বিকেলে নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন সিইসি।

কেএম নূরুল হুদা বলেন, তিনি (মাহবুব তালুকদার) সাতদিন ধরে একটা শব্দ খুঁজে বের করে আপনাদের কাছে ছেড়ে দেন। আমরা একটা কমিশন বৈঠকে হোমওয়ার্ক করে যাই। একজন লোক প্রস্তুতি নিয়ে যায়, কন্ট্রিবিউট করে, প্রতিটি মিটিংয়ে চিন্তাভাবনা করে যাই। মাহবুব সাহেব কোন চিন্তাভাবনা করেন না।

তিনি বলেন, সাত-আট দিন পর একটা শব্দ চয়ন করার জন্য ব্যয় করেন তিনি। কোনটা দিলে আপনারা এম প্রশ্ন করবেন- আইসিইউ, লাইফসাপোর্ট। এই শব্দগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে বের করেন। তারপর ছেড়ে দেন। এটা পাঁচ বছর ধরে দেখছি। এটা উনি করেন। আমাদের কিছু করার নেই। দু’জন কমিশনার বার বার ওনাকে বুঝিয়েছেন। একটা টিমে আছি, দেখতে হবে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হয়। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়টি দেখা উচিত।

এর আগে ইসি মাহবুব তালুকদার রোববার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন- নির্বাচন এখন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফসাপোর্টে। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে না করার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন এবং পৃথক একটা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, দলীয় লোকজন বঞ্চিত থাকায় এ রকম হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ নেই। এটা আমরা করতেও পারি না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। কোনও একটি ঘটনা ঘটলে টিভিতে সেটা বার বার দেখানো হয়। এতে মানুষের ধারণা হয় সব জায়গায় বুঝি এমন ঘটছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের কাছে একটি মৃত্যুও স্বাভাবিক নয়। ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। যেসব বিভাগে বেশি নির্বাচন আছে, সেখানে গিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকটি স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কোনটাই প্রত্যাশিত নয়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসবের পেছনে ছিল আধিপত্য বিস্তার, বংশীয় প্রভাব ও ব্যক্তিগত শত্রুতা।

সিইসি আরও বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩৩টি ইউপি নির্বাচনে আট হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এরমধ্যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ায় বন্ধ করা হয়। তারপরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন হানাহানি ও প্রাণহানি ঘটেছে, যা কাম্য নয়।

সিইসি দাবি করেন, ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ প্রস্তুতি নেয়। ভোট গ্রহণের দিন ও আগে-পরে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আচরণবিধি ভঙ্গসহ নির্বাচনী অপরাধের বিচারের জন্য নির্বাচনী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ওইসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নরসিংদীর রায়পুরের একটি দুর্গম চরে হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যমে এসেছে, গত ১০ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তারের নামে নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে দুই শতাধিক মানুষ মারা গেছে। নরসিংদীতে এবারের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ৪ নভেম্বর। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে নির্বাচনের দিন ভোরে।

তিনি আরও বলেন, মাগুরার যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের আগে। যা ছিল এলাকার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে। মেহেরপুরের গাংনির ঘটনার পেছনে ছিল বংশগত আধিপত্য বিস্তার। মেহেরপুরের ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনের দিন ভোররাতে। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের সম্মুখীন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।