মডেল তিন্নি হত্যা : বাবা-মায়ের সাক্ষ্য নেয়া হবে রায় ফের পেছালো

মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আবারও পেছালো। তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করীম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্য নেয়া শেষ না হওয়ায় রায় ঘোষণার তারিখ পেছানো হয়েছে।

গতকাল মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এ দিন তিন্নির বাবা ও চাচার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করে।

এর আগে দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে আসেন। এরপরেই রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ভোলা নাথ দত্ত বাদী তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পুনরায় আবেদন করেন।

এরপর আদালত তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি এতদিন সাক্ষ্য দিতে আসেননি কেন? আপনার জন্য আদালত থেকে অনেক প্রসেস পাঠানো হয়েছে। তখন তিন্নির বাবা জানান, তিনি কিছুই পাননি। এরপর আদালত বলেন, আপনি এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আপনি কবে সাক্ষ্য দিতে পারবেন? তখন তিন্নির বাবা বলেন, আগামী মাসে পারব না। তখন বিচারক আগামী ৫ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

গত ২৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রায় ঘোষণা করেননি আদালত। রায় ঘোষণার জন্য ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছিল। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আদালত এর আগে মডেল তিন্নির বাবা ও চাচার আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাদের পুরো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় আমরা পুনরায় সাক্ষীদের কথা শুনতে আদালতের কাছে আবেদন করি। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। তাই আজ (সোমবার) রায় হচ্ছে না।’

তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, তারা এই মামলায় সম্পূর্ণ বক্তব্য দিতে পারেননি। আগে রাষ্ট্রপক্ষ যারা মামলা পরিচালনা করতেন তারা যোগাযোগ না করায় অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তিন্নির রায়ের তারিখ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই খবর পেয়ে তারা আদালতে এসে পুনরায় সাক্ষ্য দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

প্রায় দুই দশক আগে ফ্যাশন মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান গোলাম ফারুক অভি। কিন্তু সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অভি এই মডেলকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাননি। বরং বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে খুন করে গাড়িতে করে মরদেহ চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। ১৯ বছর ধরে চলা এই মামলাটির একমাত্র আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মো. কাইয়ুম আলী সরদার। পরে মামলাটিকে ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। সাতজন তদন্তকারী এ মামলার তদন্ত করেন। ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির এএসপি মোজাম্মেল হক। অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এবং নাট্যকার এজাজ খান এই মামলার সাক্ষী ছিলেন।

তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পরিবর্তনের ব্যাপারে তারা জানতেন না। আগের পিপি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা পত্রিকায় খবর দেখে আদালতে এসেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর এক নম্বর চীন-মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন। পরে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়।

এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ এবং এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকই ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও এমপি গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই অভির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। এরপর চার্জশিটভুক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।

আরও খবর
দুর্নীতি প্রতিহত করতে পারলে অন্যের অধিকার সুরক্ষিত হবে
আজ থেকে বস্তিতে টিকাদান শুরু
জাতীয় নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছে ইইউ রাষ্ট্রদূত
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জীবনাবসান
১৩ মিনিটেই শেষ বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি
দুদক কর্মকর্তার ‘ঘুষ’ দাবি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১০ বছরেও তামিল করেনি, ওসিকে আদালতে তলব
পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা করা হয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে
সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের জন্য দুুুঃখজনক         দোরাইস্বামী
পরীমনির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ আদালতের
এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি, ১৬ জনের বিচার শুরু
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সাইক্লিং শুরু

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

মডেল তিন্নি হত্যা : বাবা-মায়ের সাক্ষ্য নেয়া হবে রায় ফের পেছালো

আদালত বার্তা পরিবেশক

মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আবারও পেছালো। তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করীম ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্য নেয়া শেষ না হওয়ায় রায় ঘোষণার তারিখ পেছানো হয়েছে।

গতকাল মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এ দিন তিন্নির বাবা ও চাচার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারক কেশব রায় চৌধুরী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করে।

এর আগে দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে আসেন। এরপরেই রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ভোলা নাথ দত্ত বাদী তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ ও চাচা সৈয়দ রেজাউল করিমের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পুনরায় আবেদন করেন।

এরপর আদালত তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমকে জিজ্ঞেস করেন, আপনি এতদিন সাক্ষ্য দিতে আসেননি কেন? আপনার জন্য আদালত থেকে অনেক প্রসেস পাঠানো হয়েছে। তখন তিন্নির বাবা জানান, তিনি কিছুই পাননি। এরপর আদালত বলেন, আপনি এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। আপনি কবে সাক্ষ্য দিতে পারবেন? তখন তিন্নির বাবা বলেন, আগামী মাসে পারব না। তখন বিচারক আগামী ৫ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।

গত ২৬ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন রায় ঘোষণা করেননি আদালত। রায় ঘোষণার জন্য ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছিল। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আদালত এর আগে মডেল তিন্নির বাবা ও চাচার আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করেছিলেন। তাদের পুরো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় আমরা পুনরায় সাক্ষীদের কথা শুনতে আদালতের কাছে আবেদন করি। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। তাই আজ (সোমবার) রায় হচ্ছে না।’

তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, তারা এই মামলায় সম্পূর্ণ বক্তব্য দিতে পারেননি। আগে রাষ্ট্রপক্ষ যারা মামলা পরিচালনা করতেন তারা যোগাযোগ না করায় অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তিন্নির রায়ের তারিখ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই খবর পেয়ে তারা আদালতে এসে পুনরায় সাক্ষ্য দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।

প্রায় দুই দশক আগে ফ্যাশন মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান গোলাম ফারুক অভি। কিন্তু সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত অভি এই মডেলকে কখনোই স্ত্রীর মর্যাদা দিতে চাননি। বরং বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় ‘পরিকল্পিতভাবে’ তাকে খুন করে গাড়িতে করে মরদেহ চীন-মৈত্রী সেতুর নিচে ফেলে রাখেন। ১৯ বছর ধরে চলা এই মামলাটির একমাত্র আসামি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ গোলাম ফারুক অভি।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মো. কাইয়ুম আলী সরদার। পরে মামলাটিকে ‘চাঞ্চল্যকর মামলা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তভার পায় সিআইডি। সাতজন তদন্তকারী এ মামলার তদন্ত করেন। ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর চার্জশিট দিয়েছিলেন সিআইডির এএসপি মোজাম্মেল হক। অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার, অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয় এবং নাট্যকার এজাজ খান এই মামলার সাক্ষী ছিলেন।

তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পরিবর্তনের ব্যাপারে তারা জানতেন না। আগের পিপি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা পত্রিকায় খবর দেখে আদালতে এসেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর এক নম্বর চীন-মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে মডেল তিন্নির মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন কেরানীগঞ্জ থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. সফি উদ্দিন। পরে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়।

এরপর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পরিদর্শক সুজাউল হক, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) গোলাম মোস্তফা, এএসপি আরমান আলী, এএসপি কমল কৃষ্ণ ভরদ্বাজ এবং এএসপি মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকই ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর সাবেক ছাত্রনেতা ও এমপি গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই অভির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। এরপর চার্জশিটভুক্ত ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।