পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা করা হয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে

পরিকল্পনাকারী ও ঘাতক গ্রেপ্তার

দুইটি কারণে রাজধানীর শ্যামলীতে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাকিরের কাছে পাওনা ১২ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। অন্যটি হলো, অভিযুক্ত জাকিরকে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে সহযোগীতা না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত জাকির একই জেলার সাইফুলকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যার আগে অভিযুক্ত জাকির ১৮০ টাকা দিয়ে ধারালো ছুরি কিনেছিল।

গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাকির হোসেন, পিতা এজাবুল হক, থানা-কাহারোল, জেলা-দিনাজপুর। হত্যাকারী মো. সাইফুল, পিতা আবদুল জব্বার, থানা কোতোয়ালি ও জেলা দিনাজপুর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার পর শ্যামলী হলি লেন গলিতে দূর্বৃত্তরা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ (৭২) কে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ে পৃষ্ঠা : ২ ক : ৪

পাওনা টাকা

(১২ পৃষ্ঠার পর)

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর নিহতের ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানা রাজধানীর আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি ছিল অজ্ঞাত। ঘটনার পর থেকে র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা খুনিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করেন।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ গত রোববার (১৪ নভে¤¦র) রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পিনাকারী জাকির হোসেন ও অভিযুক্ত হত্যাকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ দিনাজপুর শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয়। যা পরবর্তীতে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আনোয়ার শহীদ দিনাজপুরে জমি কেনার সময় জাকির দালাল হিসেবে মধ্যস্থা করে। এ সুবাধে জাকির বিভিন্ন সময় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১২ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অবসর নেয়ার পর ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাধে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ হতো।

গত এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদের সহযোগীতা চায়। তখন বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদ জাকিরকে সহযোগীতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে পাওয়া ১২ লাখ টাকা ফেরত দিতে জাকিরকে চাপ দেয়। ওই টাকা লেনদেন সম্পর্কে কেউ জানত না।

গত ৬ থেকে ৭ মাস আগে অভিযুক্ত জাকির ক্ষিপ্ত হয়ে এবং পাওনা ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কারণ হত্যা করলে পাওনা টাকা শোধ করতে হবে না। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য জাকির তার পূর্ব পরিচিত ধান ও চালের চাতাল শ্রমিক মো. সাইফুলকে দিয়ে পরিকল্পনা করে ঢাকায় হত্যার চেষ্টা করে।

গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, এক সময় সে জাকিরের চালের গোডাউনে কাজ করত। সে নিয়মিত মাদক সেবন করে। মাদক কেনার জন্য তার নিয়মিত টাকার দরকার হতো। ওই সময় জাকির সাইফুলকে বিভিন্ন সময় টাকাও দিত।

জাকির একদিন সাইফুলকে বলে, একজন লোক আর্থিকভাবে তার অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। তাকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে তাকে জায়গা বাড়ি ও অর্থ সহায়তা করবে। আর আগের দেয়া টাকাও শোধ করতে হবে না।

এরপর জাকির সাইফুলকে একটি ধারালো ছুরি কিনে দেয়। ওই ছুরি দিয়ে আনোয়ার শহীদকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল এর আগে এক দফা আনোয়ার শহীদকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর সকালে অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল দিনাজপুর থেকে ঢাকার কল্যাণপুরে এসে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। হোটেলের একটি রুমে বসে অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মতে, হোটেলের কাছ থেকে ১৮০ টাকায় একটি ধারালো ছুরি কিনে। ওই দিন সন্ধ্যায় বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদ জাকিরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কেনাকাটার কথা বলে আনোয়ার শহীদকে একটি মার্কেটে নিয়ে যায়। জাকির কেনাকাটা শেষে ভিকটিম (আনোয়ার শহীদকে) শ্যামলীর হলি লেন গলিতে নিয়ে যায়। এরপর কিলার সাইফুলকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয়। গলিতে ঢুকলে সাইফুল আনোয়ার শহীদের কাছে এগিয়ে যায়। এরপর ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তখন জাকির ভিকটিমের কাছে অবস্থান করছিল। আর সিসি টিভির ফুটেজে জাকির ভিকটিমকে মাটিতে শুয়ে দিতে দেখা গেছে।

ওই সময় আশপাশের পথচারীরা তাকে ঘিরে ধরলে জাকির কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল হোটেলে চলে যায়। এরপর তারা পোশাক পরিবর্তন করে দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য হোটেল ত্যাগ করে। ওই সময় দিনাজপুর থেকে একটি ফোন আসে জাকিরের কাছে। আনোয়ার শহীদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে। তখন জাকির তার বাসের টিকিট রাত ৮টার পরিবর্তে সাড়ে ৯টা করে। আর জাকির সাইফুলকে ৬শ’ টাকা দিয়ে দিনাজপুরে চলে যেতে বলে।

জাকির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদকে দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান। এরপর দিনাজপুরে চলে যান। দিনাজপুরে যাওয়ার পর তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে পালিয়ে থাকেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে তাদের রাজধানীর গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাবের মিডিয়া কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, ঘটনার পর সিসি টিভির ফুটেজ, আড়াই মিনিটের ভিডিও পোশাক পরিবর্তনের আলামত এবং পায়ের জুতার সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল ও কল্যাণপুর এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিচার বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল রাতে সবশেষ খবরে জানা গেছে, গ্রেপ্তার জাকির ও সাইফুলকে আদালত থেকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আরও খবর
দুর্নীতি প্রতিহত করতে পারলে অন্যের অধিকার সুরক্ষিত হবে
আজ থেকে বস্তিতে টিকাদান শুরু
জাতীয় নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি রাখছে ইইউ রাষ্ট্রদূত
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জীবনাবসান
১৩ মিনিটেই শেষ বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি
মডেল তিন্নি হত্যা : বাবা-মায়ের সাক্ষ্য নেয়া হবে রায় ফের পেছালো
দুদক কর্মকর্তার ‘ঘুষ’ দাবি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১০ বছরেও তামিল করেনি, ওসিকে আদালতে তলব
সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের জন্য দুুুঃখজনক         দোরাইস্বামী
পরীমনির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ আদালতের
এফআর টাওয়ারের নকশা জালিয়াতি, ১৬ জনের বিচার শুরু
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সাইক্লিং শুরু

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১ , ৩১ কার্তিক ১৪২৮ ১০ রবিউস সানি ১৪৪৩

পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় হত্যা করা হয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে

পরিকল্পনাকারী ও ঘাতক গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দুইটি কারণে রাজধানীর শ্যামলীতে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাকিরের কাছে পাওনা ১২ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা। অন্যটি হলো, অভিযুক্ত জাকিরকে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে সহযোগীতা না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত জাকির একই জেলার সাইফুলকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যার আগে অভিযুক্ত জাকির ১৮০ টাকা দিয়ে ধারালো ছুরি কিনেছিল।

গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জাকির হোসেন, পিতা এজাবুল হক, থানা-কাহারোল, জেলা-দিনাজপুর। হত্যাকারী মো. সাইফুল, পিতা আবদুল জব্বার, থানা কোতোয়ালি ও জেলা দিনাজপুর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার পর শ্যামলী হলি লেন গলিতে দূর্বৃত্তরা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ (৭২) কে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ে পৃষ্ঠা : ২ ক : ৪

পাওনা টাকা

(১২ পৃষ্ঠার পর)

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর নিহতের ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানা রাজধানীর আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি ছিল অজ্ঞাত। ঘটনার পর থেকে র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা খুনিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করেন।

র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ গত রোববার (১৪ নভে¤¦র) রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পিনাকারী জাকির হোসেন ও অভিযুক্ত হত্যাকারী সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ দিনাজপুর শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয়। যা পরবর্তীতে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আনোয়ার শহীদ দিনাজপুরে জমি কেনার সময় জাকির দালাল হিসেবে মধ্যস্থা করে। এ সুবাধে জাকির বিভিন্ন সময় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১২ লাখ টাকা ধার নিয়েছে। এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অবসর নেয়ার পর ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ঘনিষ্ঠতার সুবাধে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ হতো।

গত এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদের সহযোগীতা চায়। তখন বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদ জাকিরকে সহযোগীতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে পাওয়া ১২ লাখ টাকা ফেরত দিতে জাকিরকে চাপ দেয়। ওই টাকা লেনদেন সম্পর্কে কেউ জানত না।

গত ৬ থেকে ৭ মাস আগে অভিযুক্ত জাকির ক্ষিপ্ত হয়ে এবং পাওনা ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কারণ হত্যা করলে পাওনা টাকা শোধ করতে হবে না। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য জাকির তার পূর্ব পরিচিত ধান ও চালের চাতাল শ্রমিক মো. সাইফুলকে দিয়ে পরিকল্পনা করে ঢাকায় হত্যার চেষ্টা করে।

গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, এক সময় সে জাকিরের চালের গোডাউনে কাজ করত। সে নিয়মিত মাদক সেবন করে। মাদক কেনার জন্য তার নিয়মিত টাকার দরকার হতো। ওই সময় জাকির সাইফুলকে বিভিন্ন সময় টাকাও দিত।

জাকির একদিন সাইফুলকে বলে, একজন লোক আর্থিকভাবে তার অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। তাকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারলে তাকে জায়গা বাড়ি ও অর্থ সহায়তা করবে। আর আগের দেয়া টাকাও শোধ করতে হবে না।

এরপর জাকির সাইফুলকে একটি ধারালো ছুরি কিনে দেয়। ওই ছুরি দিয়ে আনোয়ার শহীদকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল এর আগে এক দফা আনোয়ার শহীদকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ নভেম্বর সকালে অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল দিনাজপুর থেকে ঢাকার কল্যাণপুরে এসে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেয়। হোটেলের একটি রুমে বসে অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মতে, হোটেলের কাছ থেকে ১৮০ টাকায় একটি ধারালো ছুরি কিনে। ওই দিন সন্ধ্যায় বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদ জাকিরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কেনাকাটার কথা বলে আনোয়ার শহীদকে একটি মার্কেটে নিয়ে যায়। জাকির কেনাকাটা শেষে ভিকটিম (আনোয়ার শহীদকে) শ্যামলীর হলি লেন গলিতে নিয়ে যায়। এরপর কিলার সাইফুলকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয়। গলিতে ঢুকলে সাইফুল আনোয়ার শহীদের কাছে এগিয়ে যায়। এরপর ছুরিকাঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তখন জাকির ভিকটিমের কাছে অবস্থান করছিল। আর সিসি টিভির ফুটেজে জাকির ভিকটিমকে মাটিতে শুয়ে দিতে দেখা গেছে।

ওই সময় আশপাশের পথচারীরা তাকে ঘিরে ধরলে জাকির কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর অভিযুক্ত জাকির ও সাইফুল হোটেলে চলে যায়। এরপর তারা পোশাক পরিবর্তন করে দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য হোটেল ত্যাগ করে। ওই সময় দিনাজপুর থেকে একটি ফোন আসে জাকিরের কাছে। আনোয়ার শহীদ আহত অবস্থায় হাসপাতালে আছে। তখন জাকির তার বাসের টিকিট রাত ৮টার পরিবর্তে সাড়ে ৯টা করে। আর জাকির সাইফুলকে ৬শ’ টাকা দিয়ে দিনাজপুরে চলে যেতে বলে।

জাকির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে বিজ্ঞানী আনোয়ার শহীদকে দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান। এরপর দিনাজপুরে চলে যান। দিনাজপুরে যাওয়ার পর তারা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে পালিয়ে থাকেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে তাদের রাজধানীর গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাবের মিডিয়া কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদকে জানান, ঘটনার পর সিসি টিভির ফুটেজ, আড়াই মিনিটের ভিডিও পোশাক পরিবর্তনের আলামত এবং পায়ের জুতার সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল ও কল্যাণপুর এলাকা থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিচার বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল রাতে সবশেষ খবরে জানা গেছে, গ্রেপ্তার জাকির ও সাইফুলকে আদালত থেকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।