খালেদাকে বিদেশ যেতে হলে কারাগারে ফিরে গিয়েই আবেদন করতে হবে : আইনমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা সরকার বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপির রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘আইনগতভাবে’ তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি করেন। দ-বিধির-৪০১ ধারা মতে, এই সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কখনও বলিনি ৪০১ ধারা মতে উনাকে বিদেশ যেতে দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু উনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটা ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। উনারা যে আবেদনটি করেছিলেন, সেটা ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে, একই ধারায় বিষয়টি পুনবিবেচনার কোন সুযোগ নেই।’

আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেসব সুযোগসুবিধা ভোগ করেন। উনি(খালেদা জিয়া) তার চেয়ে বেশি সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন। আর এটা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কারণে। সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও উনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। আমরা কোন বাধা দেইনি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতা দেখালেও তারা কিন্তু সেটা করেননি। বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি তারেক জিয়া। তারপরও তাকে দয়া করা হয়েছে।’

কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে গত সোমবার আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেয় খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সর্বশেষ ৬ মে বোনকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার আবেদন বিবেচনা করেনি আইন মন্ত্রণালয়। তখনও দুর্নীতির মামলায় দ-িত খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরার শর্ত দেয়া হয়েছিল।

৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত। দ- নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। ২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ- হয় তার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বছরের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে দেশে থাকার শর্তে খালেদাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। ওই আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে নতুন আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরতে হবে বলে যুক্তি দেখান আনিসুল হক।

কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ বছরের মাঝামাঝিতে তিনি প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বর্তমানে খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা রোগে ভুগছেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে(সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

খালেদাকে বিদেশ যেতে হলে কারাগারে ফিরে গিয়েই আবেদন করতে হবে : আইনমন্ত্রী

আদালত বার্তা পরিবেশক

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবার জেলে গিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদন করলে তা সরকার বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপির রুমিন ফারহানা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ‘আইনগতভাবে’ তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি করেন। দ-বিধির-৪০১ ধারা মতে, এই সুযোগ দেয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কখনও বলিনি ৪০১ ধারা মতে উনাকে বিদেশ যেতে দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু উনি বর্তমানে সাজা স্থগিতপূর্বক বাসায় আছেন, সেটা ৪০১ ধারার ভিত্তিতেই। উনারা যে আবেদনটি করেছিলেন, সেটা ৪০১ ধারার আলোকেই নিষ্পত্তি হয়েছে। আর একটি আবেদন যে ধারার অধীনে নিষ্পত্তি হয়েছে, একই ধারায় বিষয়টি পুনবিবেচনার কোন সুযোগ নেই।’

আইন সবার জন্য সমান উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যেসব সুযোগসুবিধা ভোগ করেন। উনি(খালেদা জিয়া) তার চেয়ে বেশি সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন। আর এটা পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক কারণে। সাজা স্থগিত রেখে মুক্তির শর্তে তার বাসায় অবস্থান করা এবং বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার কথা থাকলেও উনি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। আমরা কোন বাধা দেইনি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতা দেখালেও তারা কিন্তু সেটা করেননি। বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন ও পুরস্কৃত করেছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই মামলার প্রধান আসামি তারেক জিয়া। তারপরও তাকে দয়া করা হয়েছে।’

কয়েকবার প্রত্যাখ্যাত হয়েও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে গত সোমবার আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেয় খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। সর্বশেষ ৬ মে বোনকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার আবেদন বিবেচনা করেনি আইন মন্ত্রণালয়। তখনও দুর্নীতির মামলায় দ-িত খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরার শর্ত দেয়া হয়েছিল।

৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দ-িত। দ- নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। ২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদ- হয় তার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদ- দেয়া হয়।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বছরের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে দেশে থাকার শর্তে খালেদাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। ওই আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে নতুন আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফিরতে হবে বলে যুক্তি দেখান আনিসুল হক।

কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে এ বছরের মাঝামাঝিতে তিনি প্রায় দুই মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বর্তমানে খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা রোগে ভুগছেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে(সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।