বস্তির বাসিন্দাদের করোনার টিকা দেয়া শুরু

ভোটার আইডি কার্ড কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করে করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছেন বনানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দারা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা নিতে পারছেন। বস্তির ভেতরে ৮টি কেন্দ্রের মোট ২৫টি বুথে ১০ দিনব্যাপী এই করোনা টিকাদান কর্মসূচি চলবে।

লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন অনেকেই। পল্লীবন্ধু এরশাদ শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে দীর্ঘ লাইনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় টিকা নিচ্ছেন বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষ। এ কেন্দ্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে দেখা গেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বস্তির ১৫ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে, তাদের জন্য সময় বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

টিকা পাওয়া কড়াইল বস্তির কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা হয় সংবাদকর্মীদের। টিকা পেয়ে খুশি বস্তির বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী কালু বলেন, ‘আমরা কোনদিন ভাবি নাই টিকা পাব। বস্তির মানুষের খবর কে রাখে? তারপরও যে আমাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা হইছে, এতেই আমরা খুশি।’

বস্তির সব বাসিন্দারে টিকার আওতায় আনা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা পাইছি, যাতে সব বস্তির মানুষই টিকা পায় সেই ব্যবস্থাও যেন সরকার করে।’ একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সালমা বলেন, ‘টিকা তো আমাদের জন্যও দরকার। আমরা এমন ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকি, আমাদের তো রিস্কও বেশি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়ায় আছি, টিকা পাইলে অনেক ভালো লাগবে।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব বারেক টিকা নেয়ার পর পান দোকানে বসে গল্প করছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা বস্তির মানুষ, গরিব মানুষ। আমাগো টিকা না দিলেও তো কিছু বলার ছিল না। টিকা পাইছি এতেই আমরা খুশি। এত কাছে আইছে। টিকা নিমু না?” গৃহকর্মী রাহিমা খাতুনের ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় এতদিন টিকা নিতে পারেননি। জানালেন, এবার জন্মনিবন্ধন কার্ড দিয়েই টিকা নিতে পেরেছেন তিনি।

পৌনে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই নারী বলেন, ‘আমার ভোটার আইডি কার্ড নাই। রেজিস্ট্রেশনও করতে পারি না। শুনলাম জন্মনিবন্ধন দিয়ে টিকা নেয়া যাবে। তাই টিকা নিতে চলে আসছি। আমাদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করা খুব জরুরি ছিল। বস্তির মানুষেরও টিকার দরকার আছে।’

এই বস্তিতে ১৮ বছর ধরে থাকেন মুদি দোকানি সুজন মিয়া। টিকা পেতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। ‘রেজিস্ট্রেশন করতে পারি নাই বলে এতদিন টিকা নিই নাই। শুনলাম রেজিস্ট্রেশন লাগব না, শুধু ভোটার আইডি কাগজ লয়া টিকা দেওন যাইব। পরে তো অল্প সময়েই টিকা পায়া গেছি। এতো সহজ আগে তো বুঝি নাই।’

টিকাকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, কড়াইল বস্তির ৮টি কেন্দ্রের ২৫টি বুথে ১৫ হাজার টিকা দেয়া হবে প্রথম দিন। ‘মানুষ অনেক উৎসাহ নিয়ে টিকা নিচ্ছে। এই বস্তিতে লক্ষাধিক মানুষকে টিকা দেয়া হবে। কর্মজীবী যেসব মানুষ আছেন, তাদের জন্য শুক্র ও শনিবারও টিকাদান কর্মসূচি চলবে।’ ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা না পাওয়া পর্যন্ত এ বস্তিতে টিকাদান কর্মসূচি চলবে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এর আগে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কড়াইল বস্তিতে টিকা দেয়ার পরে ঢাকার অন্য বস্তি এবং দেশের বড় শহরের বড় বস্তিগুলোও পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আসবে। তিন লাখের বেশি লোকের বসতি ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইলের কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন টিকা দেয়ার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা।

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

বস্তির বাসিন্দাদের করোনার টিকা দেয়া শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

বস্তিতে শুরু হলো টিকা। গতকাল রাজধানীর কড়াইল বস্তিবাসী স্বত্বঃস্ফূর্তভাবে হাজির হন টিকা নিতে -সংবাদ

ভোটার আইডি কার্ড কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করে করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছেন বনানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দারা। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা নিতে পারছেন। বস্তির ভেতরে ৮টি কেন্দ্রের মোট ২৫টি বুথে ১০ দিনব্যাপী এই করোনা টিকাদান কর্মসূচি চলবে।

লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিয়েছেন অনেকেই। পল্লীবন্ধু এরশাদ শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে দীর্ঘ লাইনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় টিকা নিচ্ছেন বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষ। এ কেন্দ্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে দেখা গেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ বস্তির ১৫ হাজার মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারপরও যদি কেউ বাদ পড়ে, তাদের জন্য সময় বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

টিকা পাওয়া কড়াইল বস্তির কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা হয় সংবাদকর্মীদের। টিকা পেয়ে খুশি বস্তির বাসিন্দা রাজমিস্ত্রী কালু বলেন, ‘আমরা কোনদিন ভাবি নাই টিকা পাব। বস্তির মানুষের খবর কে রাখে? তারপরও যে আমাদের জন্য টিকার ব্যবস্থা হইছে, এতেই আমরা খুশি।’

বস্তির সব বাসিন্দারে টিকার আওতায় আনা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা পাইছি, যাতে সব বস্তির মানুষই টিকা পায় সেই ব্যবস্থাও যেন সরকার করে।’ একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সালমা বলেন, ‘টিকা তো আমাদের জন্যও দরকার। আমরা এমন ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকি, আমাদের তো রিস্কও বেশি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়ায় আছি, টিকা পাইলে অনেক ভালো লাগবে।’

পঞ্চাশোর্ধ্ব বারেক টিকা নেয়ার পর পান দোকানে বসে গল্প করছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা বস্তির মানুষ, গরিব মানুষ। আমাগো টিকা না দিলেও তো কিছু বলার ছিল না। টিকা পাইছি এতেই আমরা খুশি। এত কাছে আইছে। টিকা নিমু না?” গৃহকর্মী রাহিমা খাতুনের ভোটার আইডি কার্ড না থাকায় এতদিন টিকা নিতে পারেননি। জানালেন, এবার জন্মনিবন্ধন কার্ড দিয়েই টিকা নিতে পেরেছেন তিনি।

পৌনে এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই নারী বলেন, ‘আমার ভোটার আইডি কার্ড নাই। রেজিস্ট্রেশনও করতে পারি না। শুনলাম জন্মনিবন্ধন দিয়ে টিকা নেয়া যাবে। তাই টিকা নিতে চলে আসছি। আমাদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করা খুব জরুরি ছিল। বস্তির মানুষেরও টিকার দরকার আছে।’

এই বস্তিতে ১৮ বছর ধরে থাকেন মুদি দোকানি সুজন মিয়া। টিকা পেতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি বলে জানান তিনি। ‘রেজিস্ট্রেশন করতে পারি নাই বলে এতদিন টিকা নিই নাই। শুনলাম রেজিস্ট্রেশন লাগব না, শুধু ভোটার আইডি কাগজ লয়া টিকা দেওন যাইব। পরে তো অল্প সময়েই টিকা পায়া গেছি। এতো সহজ আগে তো বুঝি নাই।’

টিকাকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, কড়াইল বস্তির ৮টি কেন্দ্রের ২৫টি বুথে ১৫ হাজার টিকা দেয়া হবে প্রথম দিন। ‘মানুষ অনেক উৎসাহ নিয়ে টিকা নিচ্ছে। এই বস্তিতে লক্ষাধিক মানুষকে টিকা দেয়া হবে। কর্মজীবী যেসব মানুষ আছেন, তাদের জন্য শুক্র ও শনিবারও টিকাদান কর্মসূচি চলবে।’ ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই টিকা না পাওয়া পর্যন্ত এ বস্তিতে টিকাদান কর্মসূচি চলবে বলে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এর আগে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, কড়াইল বস্তিতে টিকা দেয়ার পরে ঢাকার অন্য বস্তি এবং দেশের বড় শহরের বড় বস্তিগুলোও পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আসবে। তিন লাখের বেশি লোকের বসতি ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি কড়াইলের কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন টিকা দেয়ার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা।