জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সংসদে নতুন এসএসএফ আইন পাস হয়েছে। আইনে জাতির পিতার পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা এবং তাদের সন্তান ও ক্ষেত্রমতো ওই সন্তানদের স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের সন্তান এরা সবাই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের(এসএসএফ) নিরাপত্তা পাবে। সেই সঙ্গে, সরকারি গেজেট দিয়ে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এই আইনের আওতায় নিরাপত্তা পাবেন।
গতকাল সংসদের কাজে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী(স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিল-২০২১ সংসদে পাশের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলটি যাচাইবাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়। সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর দুটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়।
আগের বিষয়গুলোকে আইনে রাখা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান।
বিলে বলা হয়েছে, এসএসএফের তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। তল্লাশি, আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসহ থানার একজন ওসির যেসব ক্ষমতা আছে, এসএসএফের একজন কর্মকর্তার এই আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সারা দেশে সেই ক্ষমতা থাকবে।
বিলে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে। এসএসএফ কাজের প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও সহায়তা চাইতে পারবে। যাদের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে তাদের তা দিতে হবে বলেও বিলে বিধান রাখা হয়েছে।
জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯-এ যাই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইনকে প্রাধান্য দেয়া হবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯৮৬ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বর্তমানে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর(এসএসএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক আমলে প্রণীত ওই আইন বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি পাস করা হলো।
এর আগে, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আগে ওই বছরের ২০ জুন সংসদে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০১ পাস করে। পরে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে ওই বছর ২ ডিসেম্বর ওই আইনটি বাতিল করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে এবং তাদের সন্তানদের নিরাপত্তায় নতুন করে আইন পাস হয়।
এর আগে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন।
দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বেশকয়েকবার হামলা করা হয়।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশ গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তার কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়।
২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
বিএনপি সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়। সেই ঘটনায় তাকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং পাঁচশোরও বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।
২১ আগস্ট হামলার বিচারে বলা হয়েছে, ‘হামলার সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের যোগসাজশ ছিল।’
এ পর্যন্ত তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।
বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সংসদে নতুন এসএসএফ আইন পাস হয়েছে। আইনে জাতির পিতার পরিবারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা এবং তাদের সন্তান ও ক্ষেত্রমতো ওই সন্তানদের স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের সন্তান এরা সবাই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের(এসএসএফ) নিরাপত্তা পাবে। সেই সঙ্গে, সরকারি গেজেট দিয়ে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এই আইনের আওতায় নিরাপত্তা পাবেন।
গতকাল সংসদের কাজে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী(স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) বিল-২০২১ সংসদে পাশের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলটি যাচাইবাছাই কমিটিতে পাঠানো হয়। সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়। বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এবং জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর দুটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়।
আগের বিষয়গুলোকে আইনে রাখা হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান।
বিলে বলা হয়েছে, এসএসএফের তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। তল্লাশি, আটক ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসহ থানার একজন ওসির যেসব ক্ষমতা আছে, এসএসএফের একজন কর্মকর্তার এই আইনের অধীনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সারা দেশে সেই ক্ষমতা থাকবে।
বিলে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন এসএসএফ তাদের নিরাপত্তা দেবে। এসএসএফ কাজের প্রয়োজনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছেও সহায়তা চাইতে পারবে। যাদের কাছে সহায়তা চাওয়া হবে তাদের তা দিতে হবে বলেও বিলে বিধান রাখা হয়েছে।
জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন-২০০৯-এ যাই থাকুক না কেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইনকে প্রাধান্য দেয়া হবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
১৯৮৬ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে বর্তমানে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর(এসএসএফ) কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সামরিক আমলে প্রণীত ওই আইন বাতিল করে বাংলায় নতুন আইন করতে বিলটি পাস করা হলো।
এর আগে, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আগে ওই বছরের ২০ জুন সংসদে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০১ পাস করে। পরে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় এসে ওই বছর ২ ডিসেম্বর ওই আইনটি বাতিল করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে এবং তাদের সন্তানদের নিরাপত্তায় নতুন করে আইন পাস হয়।
এর আগে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন।
দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বেশকয়েকবার হামলা করা হয়।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জনসভায় পুলিশ গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তার কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়।
২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
বিএনপি সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়। সেই ঘটনায় তাকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং পাঁচশোরও বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।
২১ আগস্ট হামলার বিচারে বলা হয়েছে, ‘হামলার সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের যোগসাজশ ছিল।’
এ পর্যন্ত তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।