স্বাস্থ্যের নথি চুরি : ৪ কর্মচারী বরখাস্ত, ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি ২০ দিনেও

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরির ঘটনায় ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি ২০ দিনেও। চোর শনাক্ত করা কিংবা চুরি হওয়া ফাইল উদ্ধার না হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই চার কর্মচারী হলেন- ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা ও জোসেফ সরদার, প্রশাসন-২ শাখার (গ্রহণ ও বিতরণ ইউনিট) অফিস সহায়ক বাদল চন্দ্র গোস্বামী এবং প্রশাসন-৩ শাখার অফিস সহায়ক মিন্টু মিয়া। এ ৪ জনই ফাইল চুরি যাওয়া কক্ষে কর্মরত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে চুরির ঘটনায় এখনও কোন মামলা করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী অ্যাকশন চলমান আছে। তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন প্রসিডিংস চলছে, তা চলবে। ফাইনালি যে জাজমেন্ট হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭ নথিসহ একটি ফাইল হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে গত ২৮ অক্টোবর শাহবাগ থানায় জিডি করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার। জিডিতে বলা হয়- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ক্রয় সংক্রান্ত শাখা-২-এর কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার ও আয়েশা ২৭ অক্টোবর বুধবার কাজ শেষ করে ফাইলটি একটি কেবিনেটে রেখে গিয়েছিলেন। ওই ফাইলের ভেতরে ১৭টি নথি ছিল। পরদিন অফিসে গিয়ে কেবিনেটে ওই ফাইলটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফাইল চুরির তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয় কর্মচারী ও এক ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় সিআইডি। পরে ওই নয় কর্মচারী ও ঠিকাদার নাসিমুল গনি টোটনকে ৫ নভেম্বর ছেড়ে দেয়া হয়। টোটনকে রাজশাহী থেকে আটক করা হয়েছিল। মামলা না হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ সপ্তাহ ১০ জনকে সিআইডি কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফাইল উদ্ধারে সিআইডি কয়েকটি জায়গায় অভিযানও চালায়।

পরে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তদন্তে বলার মতো এখনও কিছু তারা পাননি। এরপর সিআইডি সেই ঘটনায় তদন্ত করছে কি না তার দৃশ্যমান কোন কর্মকা- চোখে পড়েনি। তবে সিআইডি বলছে, তারা এখনও তদন্ত করে যাচ্ছেন। চুরির পর পরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি ছাপ নিয়েছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদেরও হাতের ছাপ নিয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নথিগুলোর মধ্যে- শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেক্ট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, রিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা সে সময় বলেছিলেন, এটা অনেক ভয়াবহ একটা ব্যাপার, কারণ এটি সরকারি ডকুমেন্ট। এ জন্য এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং তার একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি আমরা। ফাইলগুলো ছিল প্রশাসনিক আদেশের, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ক্রয় সংক্রান্ত।

সূত্র বলছে যে কক্ষ থেকে ফাইল গায়েব হয়েছে সেই কক্ষটির সঙ্গে লাগোয়া একটি কক্ষে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) মো. শাহাদাৎ হোসাইন বসেন। এছাড়া এখানে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব(প্রশাসন) কাজী আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও বসেন।

ফাইল চুরির ঘটনায় সিআইডির তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) আজাদ রহমান সংবাদকে জানান, ফাইল চুরির ঘটনায় মামলা না হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ঘটনাস্থলে ফরেনসিক করে সিআইডি। এ ঘটনায় এক ঠিকাদারসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও চুরি সংক্রান্ত কোন তথ্য না পাওয়ায় পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি তাই পুলিশ পরে তাদের ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তÍ কোন ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি। সিআইডি তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।

সিআইডি জানিয়েছে, যতটুকু জেনেছি, যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের দায়িত্ব অবহেলা পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, কে বা কারা কীভাবে ফাইল চুরি করেছে সে তথ্য খুঁজে বের করার। পাশাপাশি চুরি হওয়া ফাইলগুলো উদ্ধারেরও চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি।

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

স্বাস্থ্যের নথি চুরি : ৪ কর্মচারী বরখাস্ত, ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি ২০ দিনেও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নথি চুরির ঘটনায় ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি ২০ দিনেও। চোর শনাক্ত করা কিংবা চুরি হওয়া ফাইল উদ্ধার না হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ৪ কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই চার কর্মচারী হলেন- ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা ও জোসেফ সরদার, প্রশাসন-২ শাখার (গ্রহণ ও বিতরণ ইউনিট) অফিস সহায়ক বাদল চন্দ্র গোস্বামী এবং প্রশাসন-৩ শাখার অফিস সহায়ক মিন্টু মিয়া। এ ৪ জনই ফাইল চুরি যাওয়া কক্ষে কর্মরত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে চুরির ঘটনায় এখনও কোন মামলা করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী অ্যাকশন চলমান আছে। তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন প্রসিডিংস চলছে, তা চলবে। ফাইনালি যে জাজমেন্ট হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে ১৭ নথিসহ একটি ফাইল হারিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে গত ২৮ অক্টোবর শাহবাগ থানায় জিডি করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাদিরা হায়দার। জিডিতে বলা হয়- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ক্রয় সংক্রান্ত শাখা-২-এর কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার ও আয়েশা ২৭ অক্টোবর বুধবার কাজ শেষ করে ফাইলটি একটি কেবিনেটে রেখে গিয়েছিলেন। ওই ফাইলের ভেতরে ১৭টি নথি ছিল। পরদিন অফিসে গিয়ে কেবিনেটে ওই ফাইলটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ফাইল চুরির তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয় কর্মচারী ও এক ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় সিআইডি। পরে ওই নয় কর্মচারী ও ঠিকাদার নাসিমুল গনি টোটনকে ৫ নভেম্বর ছেড়ে দেয়া হয়। টোটনকে রাজশাহী থেকে আটক করা হয়েছিল। মামলা না হলেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১ সপ্তাহ ১০ জনকে সিআইডি কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফাইল উদ্ধারে সিআইডি কয়েকটি জায়গায় অভিযানও চালায়।

পরে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তদন্তে বলার মতো এখনও কিছু তারা পাননি। এরপর সিআইডি সেই ঘটনায় তদন্ত করছে কি না তার দৃশ্যমান কোন কর্মকা- চোখে পড়েনি। তবে সিআইডি বলছে, তারা এখনও তদন্ত করে যাচ্ছেন। চুরির পর পরই সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি ছাপ নিয়েছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদেরও হাতের ছাপ নিয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। নথিগুলোর মধ্যে- শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেক্ট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, রিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয় সংক্রান্ত নথি রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা সে সময় বলেছিলেন, এটা অনেক ভয়াবহ একটা ব্যাপার, কারণ এটি সরকারি ডকুমেন্ট। এ জন্য এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় এবং তার একটা সমাধান বের করার চেষ্টা করছি আমরা। ফাইলগুলো ছিল প্রশাসনিক আদেশের, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ক্রয় সংক্রান্ত।

সূত্র বলছে যে কক্ষ থেকে ফাইল গায়েব হয়েছে সেই কক্ষটির সঙ্গে লাগোয়া একটি কক্ষে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) মো. শাহাদাৎ হোসাইন বসেন। এছাড়া এখানে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের যুগ্মসচিব(প্রশাসন) কাজী আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও বসেন।

ফাইল চুরির ঘটনায় সিআইডির তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) আজাদ রহমান সংবাদকে জানান, ফাইল চুরির ঘটনায় মামলা না হলেও মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। ঘটনাস্থলে ফরেনসিক করে সিআইডি। এ ঘটনায় এক ঠিকাদারসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও চুরি সংক্রান্ত কোন তথ্য না পাওয়ায় পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি তাই পুলিশ পরে তাদের ছেড়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্তÍ কোন ক্লু উদ্ঘাটন হয়নি। সিআইডি তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।

সিআইডি জানিয়েছে, যতটুকু জেনেছি, যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের দায়িত্ব অবহেলা পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, কে বা কারা কীভাবে ফাইল চুরি করেছে সে তথ্য খুঁজে বের করার। পাশাপাশি চুরি হওয়া ফাইলগুলো উদ্ধারেরও চেষ্টা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি।