র্যাব ও বিজিবির পরিচয়ে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে টিকটক (ভিডিও) রাজ ওরফে আবদুর রাকিব ওরফে খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার র্যাব-২ ও ৫ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি চক্রের ৬৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ চক্র উঠতি তরুণীদের ইমোশনাল ভিডিও (আবেগময়) তৈরি করে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। টিকটক রাজ গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক উঠতি নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রতারণা করে ৪টি বিয়েও করেছে। আসলে এ জালিয়াত বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড।
র্যাব জানায়, টিকটক রাজ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা, নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাতসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক ব্যবহারের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে নারীপাচার চক্রের সদস্য আশরাফুল ম-ল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা, টিকটক হৃদয় বাবু ও হিরো অনিকসহ পাচারকারি চক্রের মোট ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজের পিতার নাম আবদুর রহিম। নওগাঁর নিয়ামতপুরে তার বাড়ি। অভিযানের সময় তার কাছ থেকে একটি ১টি মোবাইল ফোন, ৭টি সীমকার্ড, মেমোরি কার্ড, র্যাবের ইউনিফর্ম ও স্কাপ, র্যাংক ব্যাজ, ভুয়া আইডি কার্ড, চেইনসহ বাঁশি, মেডেল, বুট, বেল্ট এবং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ভার্চুয়াল জগতে ভুয়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার সম্পর্কে তথ্য দেয়। সে দীর্ঘদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যথাক্রমে টিকটক, ফেইসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল।
প্রতারক রাজ গত দুই বছর যাবত অনলাইন প্লাটফর্মে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তার নির্মিত ও প্রচারিত মুখরোচক ভিডিওর মাধ্যমে টিকটকে ইতোমধ্যে ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ এবং ফলোয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতারক। সে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন নারীদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত।
প্রতারক রাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ন্যায় চুল কাটাসহ পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করত। সে বিভিন্ন বাহিনীর ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিত। সে বিভিন্ন বাহিনীর প্রচারমূলক ভিডিও সমূহ সুবিধাজনকভাবে এডিট করে সেখানে নিজের অবস্থান দেখিয়ে প্রচার করত। একইভাবে ফটোশপ করে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকা-ে তার উপস্থিতি প্রচার করত। এছাড়া বাহিনীর প্রাত্যাহিক জীবন এর ভুয়া ভিডিও তৈরি করত। সে নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিতি পেতে অন্যের বাড়ি ও আমবাগানসমূহ নিজের বলে চালিয়ে দিত।
এছাড়া বিভিন্ন ইমোশনাল ভিডিও তৈরি করত যাতে তাকে প্রতারক না মনে হয়। সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নারীদের প্রলুব্ধ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিত। সে টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামি অলঙ্কার পরিধান করত বা অবস্থা সম্পন্ন মনে হতো তাদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের গলার হারসহ অন্য অলঙ্কার ও অর্থ আত্মসাৎ করত।
গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজ ওরফে মো. আবদুর রাকিব ওরফে খোকন টিকটকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে বিজিবির একজন ল্যান্স নায়েক পদবীর সদস্য বলে পরিচয় দিত।
বিজিবি থেকে র্যাবে তার পদায়নের ফলে সে র্যাব-১২ তে কর্মরত বলে মিথ্যা পরিচয় দিত। র্যাব-১২ থেকে তার র্যাব-৫ এ পোস্টিং হয় এবং পরবর্তীতে র্যাব-৫ হতে ঢাকায় র্যাবে পোস্টিং হয় বলে তার অনুসারীদের জানাত।
টিকটক রাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। সে আগে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত বলে জানা যায়। বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সে টিকটকের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সে ৪টি বিয়ে করেছে। এছাড়াও শতাধিক নারীকে সে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে। সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল ও অর্থ আদায় করত। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত রাজ বিভিন্ন টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য ঢাকায় আসে। সে মূলত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর স্থাপনার আশপাশে টিকটক ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, টিকটক রাজের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে গত দেড় বছরে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছেন। যদিও পরে তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই তাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যায়।
বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
র্যাব ও বিজিবির পরিচয়ে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে টিকটক (ভিডিও) রাজ ওরফে আবদুর রাকিব ওরফে খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার র্যাব-২ ও ৫ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে টিকটক ভিডিও তৈরি চক্রের ৬৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ চক্র উঠতি তরুণীদের ইমোশনাল ভিডিও (আবেগময়) তৈরি করে ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। টিকটক রাজ গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক উঠতি নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রতারণা করে ৪টি বিয়েও করেছে। আসলে এ জালিয়াত বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড।
র্যাব জানায়, টিকটক রাজ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা, নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাতসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্ম করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক ব্যবহারের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে নারীপাচার চক্রের সদস্য আশরাফুল ম-ল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা, টিকটক হৃদয় বাবু ও হিরো অনিকসহ পাচারকারি চক্রের মোট ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজের পিতার নাম আবদুর রহিম। নওগাঁর নিয়ামতপুরে তার বাড়ি। অভিযানের সময় তার কাছ থেকে একটি ১টি মোবাইল ফোন, ৭টি সীমকার্ড, মেমোরি কার্ড, র্যাবের ইউনিফর্ম ও স্কাপ, র্যাংক ব্যাজ, ভুয়া আইডি কার্ড, চেইনসহ বাঁশি, মেডেল, বুট, বেল্ট এবং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ভার্চুয়াল জগতে ভুয়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার সম্পর্কে তথ্য দেয়। সে দীর্ঘদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যথাক্রমে টিকটক, ফেইসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল।
প্রতারক রাজ গত দুই বছর যাবত অনলাইন প্লাটফর্মে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। তার নির্মিত ও প্রচারিত মুখরোচক ভিডিওর মাধ্যমে টিকটকে ইতোমধ্যে ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ এবং ফলোয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতারক। সে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন নারীদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত।
প্রতারক রাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ন্যায় চুল কাটাসহ পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করত। সে বিভিন্ন বাহিনীর ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিত। সে বিভিন্ন বাহিনীর প্রচারমূলক ভিডিও সমূহ সুবিধাজনকভাবে এডিট করে সেখানে নিজের অবস্থান দেখিয়ে প্রচার করত। একইভাবে ফটোশপ করে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকা-ে তার উপস্থিতি প্রচার করত। এছাড়া বাহিনীর প্রাত্যাহিক জীবন এর ভুয়া ভিডিও তৈরি করত। সে নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিতি পেতে অন্যের বাড়ি ও আমবাগানসমূহ নিজের বলে চালিয়ে দিত।
এছাড়া বিভিন্ন ইমোশনাল ভিডিও তৈরি করত যাতে তাকে প্রতারক না মনে হয়। সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নারীদের প্রলুব্ধ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিত। সে টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামি অলঙ্কার পরিধান করত বা অবস্থা সম্পন্ন মনে হতো তাদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের গলার হারসহ অন্য অলঙ্কার ও অর্থ আত্মসাৎ করত।
গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজ ওরফে মো. আবদুর রাকিব ওরফে খোকন টিকটকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে বিজিবির একজন ল্যান্স নায়েক পদবীর সদস্য বলে পরিচয় দিত।
বিজিবি থেকে র্যাবে তার পদায়নের ফলে সে র্যাব-১২ তে কর্মরত বলে মিথ্যা পরিচয় দিত। র্যাব-১২ থেকে তার র্যাব-৫ এ পোস্টিং হয় এবং পরবর্তীতে র্যাব-৫ হতে ঢাকায় র্যাবে পোস্টিং হয় বলে তার অনুসারীদের জানাত।
টিকটক রাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। সে আগে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করত বলে জানা যায়। বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সে টিকটকের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সে ৪টি বিয়ে করেছে। এছাড়াও শতাধিক নারীকে সে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে। সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল ও অর্থ আদায় করত। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে।
অভিযুক্ত রাজ বিভিন্ন টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য ঢাকায় আসে। সে মূলত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর স্থাপনার আশপাশে টিকটক ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, টিকটক রাজের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে গত দেড় বছরে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছেন। যদিও পরে তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই তাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যায়।