ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শীঘ্রই : আইনমন্ত্রী

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার(রিভিউ) জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর ‘শীঘ্রই’ শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ায় বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে একই আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ১৬তম সংশোধনীর রিভিউর সর্বশেষ কী অবস্থা তা জানতে চান। মন্ত্রী বলেন, আমরা সুপ্রিমকোর্ট রুলসের ‘এরর অ্যাপারেন্ট অন দ্য ফেইস অব দ্য রেকর্ড’ গ্রাউন্ডে এই রিভিউ চেয়েছি। এ মামলায় রিভিউয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট মেরিটও আছে। মামলাটি শুনানির জন্য আমরা এরই মধ্যে আপিল বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আপিল বিভাগ আমাদের জানিয়েছে, শীঘ্রই এ মামলার শুনানি হবে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর সুপ্রিমকোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারপতি অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান করেন।

পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলেও তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে কোন পরিবর্তন আসেনি। সেই পরিবর্তন আসে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে। তাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হলে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেয়া হয়।

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শীঘ্রই : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার(রিভিউ) জন্য রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর ‘শীঘ্রই’ শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) বিল-২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ায় বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে একই আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ১৬তম সংশোধনীর রিভিউর সর্বশেষ কী অবস্থা তা জানতে চান। মন্ত্রী বলেন, আমরা সুপ্রিমকোর্ট রুলসের ‘এরর অ্যাপারেন্ট অন দ্য ফেইস অব দ্য রেকর্ড’ গ্রাউন্ডে এই রিভিউ চেয়েছি। এ মামলায় রিভিউয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট মেরিটও আছে। মামলাটি শুনানির জন্য আমরা এরই মধ্যে আপিল বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আপিল বিভাগ আমাদের জানিয়েছে, শীঘ্রই এ মামলার শুনানি হবে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর সুপ্রিমকোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারপতি অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান করেন।

পঞ্চম সংশোধনী আদালত অবৈধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনলেও তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে কোন পরিবর্তন আসেনি। সেই পরিবর্তন আসে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে। তাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হলে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেয়া হয়।