গণপরিবহন যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করুন

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে আসছে গণপরিবহনগুলো। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাসকর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিত-া হচ্ছে। শুধু রাজধানীর প্রতিটি বাসে নৈরাজ্য চলছে তা নয়, সারা দেশের গণপরিবহন খাতেই একই অবস্থা। এতে নানাভাবে হয়রানিসহ বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের।

ভাড়ার তালিকা থাকলেও সে অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া তালিকা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন যাত্রীরা তা বুঝতে না পারে। ওয়েবিল, গেটলক এবং সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই। যদিও সম্প্রতি বাসভাড়া বৃদ্ধির পর পরিবহন মালিকরা বলেছেনÑ রাজধানীতে গেটলক, সিটিং সার্ভিস চলবে না। এ ধরনের সার্ভিস বৈধ নয়। মালিকদের এমন ঘোষণার পরের দিনও রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তাহলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এতদিন এ ধরনের একটি চিটিং সার্ভিস কীভাবে চললো সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন! সিটিং সার্ভিসে এমনিতেই কোনো নিয়মনীতি নেই। তারা নিজের মতো করে যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া আদায় করে। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়।

তাই সিটিং বা চিটিংয়ের নামে গেটলক সার্ভিস না থাকাই ভালো। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পরিবহনের সব বাসই লোকাল হিসেবে চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে সিটিং বা চিটিংয়ের নামে যা চলছে সেটার কী হবে, তা পরিবহন মালিকরা স্পষ্ট করেননি!

এছাড়া চেকিং কিংবা ওয়েবিল বলে যাত্রীদের মাথা গুনে ভাড়া নিতে দেখা যায়। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বাসের কর্মীরা। পরিবহন মালিকরা সরকার সংশ্লিষ্ট ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের দাম্ভিকতার কারণে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য কিছুতেই কমছে না। চুন থেকে পান খসলেই তারা ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করে। এটা তাদের একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা ও নিগ্রহের শিকার হতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঠে মনিটরিং করলেও বাস্তবতার তুলনায় তা খুবই নগণ্য এবং অনেকটা লোক দেখানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।

সারাদেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস চলাচল করলেও সে অনুযায়ী বিআরটিএ বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যথেষ্ট জনবল নেই। ফলে যথাযথ মনিটরিংও হচ্ছে না। এতে নানা আইন-কানুন, জেল-জরিমানা থাকলেও গণপরিবহনে বাসভাড়া ও যাত্রীদের হয়রানি নৈরাজ্য কমছে না। শুধু ভাড়া নিয়েই বসচা কিংবা প্রতারণা নয়, লক্কড়ঝক্কড় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, অদক্ষ শ্রমিক ও চালক, আইন না মানার প্রবণতা, ট্রাফিক পুলিশের সাথে ঘুষবাণিজ্য, বিআরটিএর অব্যবস্থাপনা, গেটলক বা সিটিংয়ের নামে চিটিং ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের গণপরিবহন খাত। এগুলো দেখে মনে হয়, এগুলো দেখার ও প্রতিকারের কেউ নেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যদি সর্বাঙ্গে মোর ব্যথা থাকে, তবে ওষুধ দেব কোথায়?

জিল্লুর রহমান

বুধবার, ১৭ নভেম্বর ২০২১ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪২৮ ১১ রবিউস সানি ১৪৪৩

গণপরিবহন যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করুন

image

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে আসছে গণপরিবহনগুলো। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাসকর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিত-া হচ্ছে। শুধু রাজধানীর প্রতিটি বাসে নৈরাজ্য চলছে তা নয়, সারা দেশের গণপরিবহন খাতেই একই অবস্থা। এতে নানাভাবে হয়রানিসহ বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের।

ভাড়ার তালিকা থাকলেও সে অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া তালিকা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন যাত্রীরা তা বুঝতে না পারে। ওয়েবিল, গেটলক এবং সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছেই। যদিও সম্প্রতি বাসভাড়া বৃদ্ধির পর পরিবহন মালিকরা বলেছেনÑ রাজধানীতে গেটলক, সিটিং সার্ভিস চলবে না। এ ধরনের সার্ভিস বৈধ নয়। মালিকদের এমন ঘোষণার পরের দিনও রাজধানীর বিভিন্ন রুটে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তাহলে প্রশাসনের নাকের ডগায় এতদিন এ ধরনের একটি চিটিং সার্ভিস কীভাবে চললো সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন! সিটিং সার্ভিসে এমনিতেই কোনো নিয়মনীতি নেই। তারা নিজের মতো করে যাত্রী পরিবহন ও ভাড়া আদায় করে। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়।

তাই সিটিং বা চিটিংয়ের নামে গেটলক সার্ভিস না থাকাই ভালো। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পরিবহনের সব বাসই লোকাল হিসেবে চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে সিটিং বা চিটিংয়ের নামে যা চলছে সেটার কী হবে, তা পরিবহন মালিকরা স্পষ্ট করেননি!

এছাড়া চেকিং কিংবা ওয়েবিল বলে যাত্রীদের মাথা গুনে ভাড়া নিতে দেখা যায়। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বাসের কর্মীরা। পরিবহন মালিকরা সরকার সংশ্লিষ্ট ও প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের দাম্ভিকতার কারণে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য কিছুতেই কমছে না। চুন থেকে পান খসলেই তারা ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের দাবি-দাওয়া আদায় করে। এটা তাদের একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হেনস্তা ও নিগ্রহের শিকার হতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঠে মনিটরিং করলেও বাস্তবতার তুলনায় তা খুবই নগণ্য এবং অনেকটা লোক দেখানো নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়।

সারাদেশের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস চলাচল করলেও সে অনুযায়ী বিআরটিএ বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যথেষ্ট জনবল নেই। ফলে যথাযথ মনিটরিংও হচ্ছে না। এতে নানা আইন-কানুন, জেল-জরিমানা থাকলেও গণপরিবহনে বাসভাড়া ও যাত্রীদের হয়রানি নৈরাজ্য কমছে না। শুধু ভাড়া নিয়েই বসচা কিংবা প্রতারণা নয়, লক্কড়ঝক্কড় মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, অদক্ষ শ্রমিক ও চালক, আইন না মানার প্রবণতা, ট্রাফিক পুলিশের সাথে ঘুষবাণিজ্য, বিআরটিএর অব্যবস্থাপনা, গেটলক বা সিটিংয়ের নামে চিটিং ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের গণপরিবহন খাত। এগুলো দেখে মনে হয়, এগুলো দেখার ও প্রতিকারের কেউ নেই। ভুক্তভোগীরা বলছেন, যদি সর্বাঙ্গে মোর ব্যথা থাকে, তবে ওষুধ দেব কোথায়?

জিল্লুর রহমান